সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ফেসবুকে তরুণীর সুইসাইড নোট

‘আমাকে শেষ বারের মতো দেখতে নদীর জলে খুঁজো’

জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০১ মে ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রত্যাশা অনুযায়ী কোথাও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে পিউ কর্মকার (১৮) নামের এক তরুণী।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত সোয়া ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল তার লাশ উদ্ধার করেছে।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, রাজবাড়ী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিনোদপুর গ্রামের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় পিউ কর্মকারের বাড়ি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে পিউ ছিলেন মেজো।

আরও পড়ুন

স্ট্যাটাস দিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে ট্রান্সজেন্ডার নারীর মৃত্যু

তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশা মতো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

রাত সোয়া আটটার দিকে সোনাকান্দর ঘাট এলাকা থেকে পিউকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, পাশে ছিল চিরকুট

পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে পিউ কর্মকার তার ফেসবুকে লিখেছেন, 'গুচ্ছ আমার শেষ ভরসা ছিল। জানি না কবে রেজাল্ট দিবে। পরীক্ষাও মোটামুটি হয়েছিল। একটা আশা ছিল। কিন্তু আমার ভাগ্য সেই আশাটাও পূরণ করতে দিল না। ৫টা অপশন থাকে তার মধ্যে আমি বায়োলজি আর ইংরেজির বৃত্ত ভরাট করে ফেলেছিলাম ভুল করে, আজকে সেটা দেখলাম। কিন্তু আমি উত্তর করেছিলাম বাংলার। আমার সব স্বপ্ন শেষ। একে একে ঢাবি, রাবি, জাবি থেকে অল্পের জন্য ধাক্কা খাই। জানি এটাও আমার ভাগ্যের জন্য, চেষ্টা আমার কম ছিল না। সারাদিন রাত এক করে পড়তাম। বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে, কিন্তু আমি কিছুঁই দিতে পারিনি। দাদার ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমারও স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই যে ডাক্তার হবো। আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল মেডিকেল অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি কিন্তু মেডিকেলেও বসতে পারি না। এটা থেকেও বিশাল একটা ধাক্কা খাই। অনেক ভেঙে পড়েছিলাম তাও হাল ছাড়ি নাই। এই অ্যাডমিশন পিরিয়ডটা যে কতটা কষ্ট দিছে আমাকে।'

68eeede6fcbb42247a139e0a34346f39fa78aba35e297b0b

তিনি আরও লিখেন, 'এই সব আর আমি নিতে পারতেছি না। আমি শুধু একটা আশ্রয় খুঁজতেছিলাম। শেষ আশ্রয়, এটাও শেষ হইল। অনেক মানুষ অনেক আত্মীয়ের অনেক কথা শোনা লাগছে। বাবার একটু ফিনানসিয়াল সমস্যা ছিল এ জন্য ঢাকা গিয়ে পড়তে হবে কেন। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম যে পারব। কিন্তু আমি আর পারলাম না। সারাটা দিন ঘরের মধ্যে একা একা বসে থাকি। মানুষের কতো ফ্রেন্ড কত কিছু, কিন্তু আমি আমার পাশে কাউকে পাই নাই। সব থেকে প্রয়োজন ছিল যাকে, যাকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম তাকেও আমি আমার পাশে পাই নাই। হয়তো আমাকে সাপোর্ট করার মতো কেউ থাকলে আজকে এই মৃত্যুটা আমার হতো না। সেকেন্ড টাইমের প্রিপারেশন নেওয়ারও আমার কোনো মানসিক বা  শারীরিক শক্তি নাই। আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেল।'

আরও পড়ুন

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানসহ ট্রেনের নিচে ঝাঁপ মায়ের

সুইসাইড নোটে লিখেছেন, 'মায়ের কাছে গিয়ে মাঝে মধ্যে কাঁদতাম। মাও বুঝে নাই আমাকে। আমি একটা বোঝা সবার কাছে। আমার মৃত্যর জন্য আমার এই বড় বড় স্বপ্নগুলোই দায়ী। আমি আমার বাবা, মার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নাই। আমাকে শেষ বারের মতো দেখতে চাইলে নদীর জলেই খুঁজো। আমার মৃত্যুটা এভাবেও চাই নাই। ভালো থাইকো সবাই। আমি আমার এই জীবনটা আর নিতে পারছি না। আমারে মাফ করে দিও সবাই। এভাবে দম বন্ধ করে বাঁচতে পারতেছি না আর।'

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি। মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর