সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

২৭ বছর পর শাহিদা খোঁজে পেলেন নিজ পরিবার

জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

২৭ বছর পর শাহিদা খোঁজে পেলেন নিজ পরিবার

কাজের সন্ধানে ২৭ বছর আগে মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল ৮ বছর বয়সী শাহিদা আক্তার। আদরের মেয়েকে অনেক হয়ে খুঁজেও সন্ধান পাননি তার মা-বাবা। বাড়ির ঠিকানা বলতে না পারায় ফিরতে পারেনি আপনজনদের কাছে।

সেই ৮ বছরের ছোট্ট শাহিদা দীর্ঘ ২৭ বছর পর নিজ পরিবার খুঁজে পেলেও ফিরে পাননি জন্মদাতা মা-বাবাকে। তারা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তবে বাড়িতে এসে ফিরে পেয়েছেন আপন ভাই-বোনেদের। দীর্ঘ ২৭ বছর পর শাহিদাকে ফিরে পেয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন সবাই।


বিজ্ঞাপন


 শাহিদা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দিকপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির মেয়ে। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শাহিদা তৃতীয়।

গ্রামবাসী জানান,  ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির ছিল অভাবের সংসার। ১৯৯৭ সালে কাজের সন্ধানে স্বপরিবারে ঢাকায় চলে যান তারা। ঢাকায় গিয়ে শাহিদার বাবা রিকশা চালানো শুরু করেন। মেয়ে শাহিদা খড়ি কুড়ানোর কাজ করে। ঢাকায় যাওয়ার ক’দিন পর খড়ি কুড়াতে গিয়ে শাহিদা হারিয়ে যায়। তাঁর মা-বাবা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেয়ের সন্ধান পাননি। এরপর থেকে শাহিদা নিখোঁজ ছিল। এরপর শাহিদা কিভাবে চট্টগ্রামে চলে যায় নিজেও কিছু বলতে পারেন না। সেখানে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তারাই তাকে গাজীপুরে সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেন। তারপর থেকে স্বামীকে নিয়ে সেখানেই বসবাস। বর্তমানে শাহিদার ৭ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন

গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি খোঁজে পান জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার দিকপাড়া তার বাবার বাড়ি। এ সময় তার বড় বোন খালেদা বেগম চিনতে পারেন ছোট বোন শাহিদাকে। বর্তমানে শাহিদা ইসলামপুর উপজেলার ভৌলাকীপাড়া গ্রামে তার বড় বোন খালেদার বাড়িতে অবস্থান করছেন। 

শাহিদা আক্তার বলেন, কখনও ভাবেনি নিজের গ্রামে ফিরতে পারব। প্রায় সময় মা-বাবা ও পরিবারের কথা মনে পড়ত। কিন্তু ছোট বেলার কথা এমনকি গ্রামের নামও মনে করতে পারতাম না। সম্প্রতি তার মেয়ে নানা-নানির কথা জানতে চাইলে হঠাৎ বকশীগঞ্জের নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের দিকপাড়া গ্রামের নামটি তার মনে পড়ে যায়। তখন থেকে বকশীগঞ্জের দিকপাড়া খুজতে থাকে। মা-বাবাকে দেখার জন্যই স্বামী সেলিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়েখুঁজতে খুঁজতে চলে আসেন নিজ গ্রামে।

আবেক আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, নিজের পরিবার ও বাড়ি ঠিকই খুজে পেলাম। কিন্তু ৪ বছর আগে মা-বাবা মারা যাওয়ায় তাদের দেখতে পেলাম না। তাই  মনের আশা পূরণ হলো না। তবে বোন, ভাইসহ পরিবারের অন্য সবাইকে পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।

হারিয়ে যাওয়া ছোট বোনকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বড় বোন খালেদা বেগম। তিনি বলেন, মা-বাবার সঙ্গে তারা সবাই ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন। ঢাকায় যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তার ছোট বোন শাহিদা হারিয়ে যায়। তারপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো দিন সন্ধান পাবেন এমন আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর পর বোনকে ফিরে পেয়ে তাঁরা সবাই এখন আনন্দিত।

আরও পড়ুন

বড় বোন খালেদা বেগম আরও বলেন,  ছোট বোনের অনেক স্মৃতি তার মনে আছে।  তার বাবা বেঁচে থাকতে বলতেন, ‘আমাদের শাহিদা বেঁচে আছে, দেখবি কোনো একদিন হঠাৎ সে ফিরে আসবে।  অবশেষে বাবার কথাই সত্য হলো কিন্তু বাবা মেয়েকে দেখে যেতে পারলেন না। আজ মা-বাবা বেঁচে থাকলে কতই–না খুশি হতেন।’

২৭ বছর পরে শাহিদা ফিরে এসেছেন এই খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহিদাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান গ্রামবাসী। শাহিদা নিজের ভাইবোনকে খুজে পেয়েছেন, এতে খুশি তাঁর স্বামী সেলিম মিয়াও। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন

অবশেষে পরিবার খুঁজে পেলেন সৌদি প্রবাসী সরোয়ার

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর