বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুটি ব্যাংকে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের হামলা ও লুটের বর্ণনা উঠে এসেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে। জানা গেছে কিভাবে রক্ষা পেল দুই ব্যাংকের ভল্টে থাকা বড় অংকের টাকা।
মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় হামলা করে অস্ত্রধারীরা। কিন্তু সেখান থেকে কোনো টাকা নিতে পারেনি। পরদিন বুধবার থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় হামলা করে কেএনএফের অস্ত্রধারীরা।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ২৫-৩০ জনের সশস্ত্র কেএনএফের সদস্য তিনটি গাড়িতে করে এসে থানচিতে পাশাপাশি থাকা কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক শাখায় হামলা চালায়। লুটপাট শেষে চারটি জিপ গাড়িতে করে চলে যায়।
এ সময় ব্যাংকের ভেতরে উপস্থিত ছিলেন এমন গ্রাহকরা বলছেন, হামলা ও লুটের সময় দুই শাখা ব্যবস্থাপকের বিচক্ষণতায় ভল্ট থেকে টাকা নিতে পারেনি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। মাসের শুরু হওয়ায় দুই শাখার ভল্টেই যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ছিল বলে জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ঘটনার সময় সোনালী ব্যাংক উপস্থিত থাকা এক গ্রাহক বলেন, সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভল্টে তালা দিয়ে এই শাখার ব্যবস্থাপক ফয়সাল দ্রুত টয়লেটে ঢুকে পড়েন। এরপর কর্মচারীরা টয়লেটের বাইরে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু ম্যানেজারকে না পেয়ে ক্যাশিয়ার ওমর ফারুকের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ক্যাশ বক্স খুলে বক্সে থাকা টাকাগুলো বস্তায় ভরে নিয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির সময় সেখানে আটকেপড়া কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সন্ত্রাসীরা যখন সশস্ত্র অবস্থায় ব্যাংকে ভেতরে ঢুকে পড়ে তখন ম্যানেজার হ্লা শৈ থোয়াই মারমা তাৎক্ষণিকভাবে ভল্টে তালা দিয়ে গ্রাহকের সারিতে এসে হাত উচু করে দাঁড়িয়ে পড়েন। সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে খুঁজতে থাকে। আমরা বলি, আমরা গ্রাহক। একইসঙ্গে বলি, ম্যানেজার পালিয়ে গেছে।
এ সময় সন্ত্রাসীরা ক্যাশ টেবিলে ও ড্রয়ারে থাকা ২ লাখ আট হাজার টাকা নিয়ে যায় বলে জানান থানচি কৃষি ব্যাংকে ম্যানেজার হ্লা শৈ থোয়াই মারমা।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের হাতে সম্ভবত সময় কম ছিল। তাই তারা খুব দ্রুত, ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে যা টাকা পেয়েছে তাই নিয়ে চলে যায়।
মামলা করা হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে হামলা ও ডাকাতির সময় ব্যাংকে আটকেপড়া কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রাহক বলেন, ডাকাতরা ব্যাংকের ভেতরে অবস্থান করার এক পর্যায়ে তাদের কাছে থাকা দুটি ওয়াকিটকির একটিতে প্রথমে বাংলা ভাষায় নির্দেশনা আসে। তাতে বলা হয়, ‘ঘড়ি দেখো, তোমাদের টাইম শেষ। তোমরা তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাও।’
এরপর আরেকটি ওয়াকিটকিতে নির্দেশনা আসে বম ভাষায়। বম-ভাষী এক গ্রাহক বলেন, ‘নিজেদের ভাষায় ডাকাতরা বলছিল যে তাদের সময় শেষ। চলে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি রেডি হও।'
ব্যাংক লুট শেষে সশস্ত্র দলটি থানচি বাজারে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে এবং ৪টি জিপে করে চলে যায় টিএন্ডটি-ছান্দাক পাড়া হয়ে শাহজাহান বম পাড়ার দিকে।

