শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নিরুপায় পারুল এখন নৈশ প্রহরী

রাশেদ ইসলাম (দিনাজপুর থেকে ফিরে)
প্রকাশিত: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মনমথপুর ইউনিয়নের পূর্ব রাজাবাসর এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের মেয়ে পারুল বেগম। শুনতে অবাক লাগলেও এটিই সত্যি যে একজন নারী হয়ে নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালন করেন পারুল বেগম।

এ ঘটনা মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। হতদরিদ্র অসহায় নারী পারুল বেগম। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তার জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। পরে নিজ বাড়ির পাশে মিশন বাজরে ছোট একটি পানের দোকন দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। তবে অর্থের অভাবে খুব বেশিদিন টিকে রাখতে পারেনি তার এই ছোট্ট ব্যবসাটি। পরে সকলের সহযোগিতায় কিছুদিন তার ভরণপোষণ ব্যবস্থা করে দিলেও এরপর বাজরের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় পারুল বেগম দেওয়া হয় মিশন বাজারে রাত্রিকালীন নাইট গার্ডের কাজ।


বিজ্ঞাপন


parul5-20240401094921

পারুল বেগম দেখতেও ছোটখাটো হলেও তার ছিল আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাসের কারণেই প্রায় দশ বছর ধরে মিশন বাজারে নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দোকান মালিকরা জানায়, পারুল বেগম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই মিশন বাজারের দোকান কখনও চুরি হয়নি। এর আগে অনেকবার চুরি হয়েছে। পারুল বেগমের বিশ্বাস সততা স্থানীয় মানুষের কাছে এ যেন অহংকারের বিষয়।

আরও পড়ুন

অর্থের অভাবে থমকে যাবেন সুজন পাহান!

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিয়ের এক মাসের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটে সংসার জীবনের জীবিকার  তাগিদে  পাড়ি  জমান রাজধানী ঢাকা শহরে। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। এখন ছামিউল হক নামের একমাত্র ভাগিনা ছাড়া আপন বলতে কেউই নেই পারুলের। বোনের মৃত্যুর পর নিজ সন্তানের মতো লালন করেছেন তাকে। দোকান পাহারা দেওয়ার বিনিময়ে যা পান তা দিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে তাদের দিন কেটে যায়। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এক খণ্ড জমিতে মাটি দিয়ে গড়ে তোলা ঝুপড়ি ঘরে তার বসবাস। ভাগিনা ছামিউলসহ সেখানেই থাকেন তিনি। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় বাকি জীবন সুন্দরভাবে কাটাতে সরকারি সহযোগিতা চান জীবন যুদ্ধে হার না মানা এই নারী।


বিজ্ঞাপন


Parul-1

বাজারের মুদি ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর একটা ছোট দোকান দেয়। টাকার অভাবে সেটা বেশিদিন করতে পারেনি। পরে আমরা দোকানদাররা কিছুদিন সহযোগিতা করি। এর পর সকলে মিলে তাকে নাইট গার্ড দায়িত্বটা দেওয়া হয়, সে খুব ভালো দায়িত্ব পালন করে।

বাজারের নাহিদা টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী নাহিদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি আগে ঢাকায় ছিলাম। আমি যখন থেকে এখানে ব্যবসা শুরু করি তখন থেকে পারুল আপা আমাদের বাজারে নৈশ্য প্রহরীর কাজ করেন। উনি যেভাবে বাজারের দোকান-পাট পাহারা দেয় একজন পরুষ মানুষ হয়েও পারবে না। উনি বাজারে রাতে পাহারা দেয় বলে আমরাও নিশ্চিন্তে বাসায় ঘুমাতে পারি।

আরও পড়ুন

বাবা হারানো ৩ যমজ ভাই পেলেন মেডিকেলে চান্স

বাজারের আরেক ব্যবসায়ী ইয়াসির আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, পারুল আমাদের বাজারে দীর্ঘদিন থেকে দোকন পাহারা দেয়। উনি বাজারে পাহারাদার দেওয়া শুরু থেকে এখন পযন্ত বাজারে কখনও কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। আমরা দোকনদাররা ভুলে যদি একটা তালা না লাগিয়ে চলে যাই তাহলে পারুল আপা ফোন করে বলে যে দোকানের তালা খোলা বাজার আসি দোকানের তালা লাগে দিয়ে যাও।

parul2-20240401094901

 নৈশ্য প্রহরী পারুল বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, জীবন জীবিকার তাগিদে আমি রাতে বাজার পাহারা দেওয়ার জন্য নাইট ডিউটির কাজ নিয়েছি। প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর এ কাজ করে আসছি। মাত্র চার হাজার টাকা পাই তা দিয়ে খুব কষ্ট করে একমাত্র ভাগিনাকে নিয়ে থাকি। একটা মেয়ে মানুষ হয়েও এ কাজ করি কারণ অন্য কোনো কাজ পাই না। কাজ না করলে খাব কি? বেঁচে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে এ কাজ বেছে নিয়েছি। এখন আমার থাকার মতো একটা ভালো ঘর নাই। যেটা আছে বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। মাঝে মঝে মানুষের বাসায় ঘুমাই। আমাকে যদি সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা করা হয় তাহলে একটু ভালোভাবে চলতে পারব।

মনমথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ আলী শাহ বলেন, পারুল নামের এক ভদ্র মহিলা আমার ইউনিয়ন পরিষদের মিশন বাজারে নৈশ্য প্রহরীর কাজ করেন তা আমার জানা ছিল না। আমি অবগত হলাম। আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ হতে তার ভাতা প্রদানের ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারি সকল সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দেব।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন