যশোরে পৌর কাউন্সিলার জাহিদ হাসান মিলন ওরুফে টাক মিলনসহ চারজনকে মদ্যপ অবস্থায় পুলিশ আটক করেছে ।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে শহরের পালবাড়ি কাঁচা বাজারে টাক মিলনের নিজ কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়।
বিজ্ঞাপন
টাক মিলনের সাথে আটক অন্য তিনজন হলেন, শহরের টালী খোলা এলাকার আকবার আলী ছেলে দস্তগীর, কদমতলা এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে শফিকুল ইসলাম, টালীখোলা এলাকার আব্দুর গফফারে ছেলে মারুফুজ্জামান।
পুলিশ প্রাথমিক পর্যায়ে জানিয়েছে, তাদের কাছ থেকে তিন বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। এছাড়াও টাক মিলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চলছে।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (অপারেশন্স) পলাশ বিশ্বাস জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাঁচা বাজার সংলগ্ন জনৈক ওয়াহিদের ভাড়া দেওয়া ভবনে অবস্থিত ইন্টারনেট ব্যবসার অফিসে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখানে কয়েকজন বসে মদ সেবন করছিলেন। পুলিশ সেখান থেকে পৌর কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলনসহ ৪ জনকে আটক করে। এছাড়া ওই অফিসের ভেতর থেকে কয়েক বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান জানান, অনুসন্ধান চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকার যুবলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম সোহাগকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী টাক মিলন। এই মামলায় আটক এক আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে টাক মিলনের নাম বের হয়। এই মামলার সন্ধিগ্ধ আসামি তিনি। এছাড়াও ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িতও তিনি। তার নেতৃত্বেই এ হামলা চালানো হয়েছিল বলেই পুলিশের তদন্তে তথ্য বের হয়।
বিজ্ঞাপন
টাক মিলন যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ইজিবাইক, ট্রাকে ব্যাপক চাঁদাবাজি, এলাকার মানুষের কাছে চাঁদাবাজিতে জিম্মি হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। এছাড়াও পালবাড়ির রয়েল কমিউনিটি সেন্টারে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনো (জুয়া) ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য অপরাধের মধ্যে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারির সামনে মানিক ওরফে ডিম মানিককে হত্যা করা হয় টাক মিলনের নির্দেশে। রুহুল নামে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যার পর শহরের কাজীপাড়া তেঁতুলতলা নদীর পাড়ে পুতে রাখে টাক মিলনের লোকজন। কাজীপাড়া এলাকার শিমুলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করে টাক মিলনের ক্যাডার বাহিনী। বছর খানেক পর শিমুল মারা যান। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী ছিলেন টাক মিলন। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এ হত্যাকান্ড ঘটান বলে অভিযোগ রয়েছে। শহরের ধর্মতলা কারবালা এলাকায় সিনবাদ নামে এক যুবককে টুকরো টুকরো করে হত্যার পর লাশ ড্রামের মধ্যে রাখা হয়। টাক মিলনের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ আছে।
সূত্র আরো জানায়, ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর যশোর শহরের একটি মেস থেকে এমএম কলেজের দুই ছাত্র হাবিবুল্লাহ ও হাসানকে তুলে নিয়ে আসাদ হলে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। টাক মিলনের নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। টাক মিলন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পালবাড়ি এলাকার হাতকাটা মনিরুলকে হত্যা করেছিল। শহরের কাঁঠালতলা এলাকার একটি ভবনে আটকে রেখে মিন্টু নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে টাক মিলন জড়িত বলে অভিযোগ। এছাড়াও শহরের লালদিঘির পাড় এলাকায় বাঁশি রিপন হত্যায়ও টাক মিলনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
শুধু খুন নয়, চাঁদাবাজি, জুয়া, টেন্ডারবাজি, বোমাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে টাক মিলন ও তার ক্যাডার বাহিনীর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শহরের পালবাড়ি মোড়ের রয়েল কমিউনিটি সেন্টারে দীর্ঘদিন ধরে টাক মিলনের নেতৃত্বে ওয়ান-টেন জুয়ার আসর পরিচালিত হয়েছে। যশোরের ইয়াবার ডিলার হিসেবে পরিচিত টাক মিলন। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দফতরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন মিলন। তার ইশারা ছাড়া কেউ টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না। শহরের ইজিবাইক চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের মূলহোতা এই টাক মিলন। রেজিস্ট্রি অফিসসহ সব সরকারি অফিসে টাক মিলনের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সবাই। শহরে জমি ক্রয় কিংবা বাড়ি করতে হলে টাক মিলনকে চাঁদা না দিলে রক্ষা নেই।
প্রতিনিধি/একেবি