পৌরসভার কাউন্সিলর ও মেয়র, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্য পদে মোট ৮ বার প্রার্থী হয়েছেন। পরাজিত তো হয়েছেন, এমনকি জামানতও হারিয়েছেন তিনি। তবুও হাল ছাড়েননি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে।
ওই ব্যক্তির নাম মো. ইসরাফিল বিশ্বাস। তার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক আহম্মদপুর গ্রামে। তিনি ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। ৬০ বছর বয়সী ইসরাফিল হোসেন পড়ালেখা করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছেন তিনি। এবার রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যদিও যাচাই বাছাইয়ে রোববার (৩ ডিসেম্বর) তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তবে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণ ও পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন ইসরাফিল বিশ্বাস।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শুরু করেন ইসরাফিল বিশ্বাস। ওই বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২২ সালে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি জামানত হারিয়েছেন। তার নিজস্ব সমর্থক না থাকায় ভোটের প্রচারণা নিজেই চালাতেই। অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন মাইকিং করতে। অনেকে হাসি-ঠাট্টাও করেছেন তাকে নিয়ে। তবু প্রার্থী হয়ে আসছেন তিনি। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও নির্বাচন করা ইসরাফিলের নেশায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী।
জেলা রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদের মধ্যে ৭ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী রায়হানুল হক, জাসদ প্রার্থী জুলফিকার মান্নান জামি, এনপিপি প্রার্থী মোহসীন আলী, জাকের পার্টির প্রার্থীর রিপন আলী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুদ্দিন রিন্টু ও বিএনএম প্রার্থী আবদুস সামাদ। মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা হওয়া বাকি দুজন হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী খায়রুল ইসলাম ও ইসরাফিল বিশ্বাস।
তবে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ ইসরাফিল বিশ্বাস। করতে চান আপিল। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি আপিল করবো। বাতিল হয়েছি- ভোটারের সই স্বাক্ষর কমের জন্য, ৬৬৩ টা দেওয়া ছিল। আমি যা দিয়েছি, লিগ্যাল দিয়েছি। আমার আনলিগ্যাল বাইর করতে পারেনি। ৬৬৩টা দেওয়া আছে, আরও দিতে হবে। আরও ৪০০ মতো সই নেওয়া হয়েছে। কাল ডিসি অফিসে যায়্যা ওদের কী বক্তব্য বা কয়দিন সময়; সময় যদি পাওয়া যায়, কাজটা করে আমি আপিল করবো।’
বারবার প্রার্থী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইসরাফিল বিশ্বাস বলেন, আমার প্রতিনিধি হওয়ার শখ আছে। আমার আব্বা ১৯ বছর মেম্বারি করেছে। তার ছেলে আমি, তাহলে আমারও প্রতিনিধি হওয়ার শখ আছে। জনগণের সেবা করার জন্য, তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই আমি। শাহরিয়ার আলম, রায়হান, ইসরাফিল- এ তিনজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বি হওয়া সম্ভব। কিন্তু আশা করি, আমি জয়লাভ করব।
বিজ্ঞাপন
ইসরাফিল বিশ্বাস আরও বলেন, আমি ডেইলি ইনকাম করে, ‘ডেইলি বাজার করি। আমার কোনো ঋণ নাই, কোনো দোকানপাটে পাবে না। আমার ব্যবসা থেকে যে টুকু হয়, সেটুকু খরচ করি। কারও কাছ থেকে ধার করি না, এটা একবারে পরিশ্রমের পয়সা। ২০০৮ সালে মাইক প্রচার হতে গিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল ফখরুদ্দিনের আমলে। জামানত প্রতিবার হারিয়েছি। সবশেষ গত বছর মেয়র পদে ৪২২ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছি। ভালবেসে ৪২২টা মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে।’
জামানত হারিয়েও বারবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে ইসরাফিল বিশ্বাস বলেন, ‘যে যেখানে আছে, ধান্দাত আছে। আর আমার এরকম ধান্দা ছিল না। আমি কর্মসংস্থান আনতে পারি। আমার কোনো খাওয়ার মতো নিশ্যা (নেশা) নাই। জনগণের পিছেই আমি থাকব। মাইক্রোর মধ্যে চলে যায়, এমপি সাহেব গ্যালো, কেউ বুঝতেই পারে না। আমি হাইটিখুলি ( পায়ে হেটে) ব্যাড়াবো। বাঘা বাজার করতে যাব, রোড দিয়্যা এক হাটু পানি। এটা আমি পদক্ষেপ নিব। রাস্তাঘাট অনেক এখনও কাঁচা আছে, এটাও পদক্ষেপ নিব, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠান, গরিব-দুঃখী যা আছে, এদেরও পদক্ষেপ নিব কিছু দেওয়ার। ইনশাল্লাহ আমি জয়যুক্ত হব। যদি আমি জয়যুক্ত হতে পারি, ভিক্ষুক কাখো (কাউকে) রাখবো না।’
প্রতিনিধি/ এজে