এলাচকে বলা হয় মসলার ‘রানী’। এটি রান্নাকে এক অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধিতে ভরিয়ে দেয়। এলাচ শুধু স্বাদ আর সুগন্ধের জন্য নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারি একটি উপাদান। আর এই সুগন্ধ ও উপকারি মসলাটি বিদেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন যশোরের কৃষক শাহজাহান আলীর ক্ষেতে শোভা পাচ্ছে।
জানা যায়, ৯ বছর আগে ২০১২ সালে বেনাপোল পৌরসভার সামনে পাটবাড়ী এলাকায় এক বিঘা জমিতে দুই জাতের এলাচ চাষ শুরু করেন সৌখিন কৃষক শাহজাহান আলী। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এলাচ চাষের ফর্মুলা জানতে পারেন তিনি। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হন এলাচ চাষের জন্য।
তিনি জানতে পারেন, এটি বীজ থেকে নয়, মূল থেকেই জন্ম নেয়। যেকোনো ছায়াযুক্ত স্থানে এই চাষ করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া এলাচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। পরে বহু কষ্টে বিদেশ থেকে এলাচ গাছের ৭০টি মূল সংগ্রহ করে এনে বেলে দোআঁশ জমিতে মূল রোপণ করেন।
বিজ্ঞাপন
পরে মাটির সমস্যার কারণে ২০১৬ সালে এক একর জমি লিজ নিয়ে বেনাপোলের নারায়ণপুর গ্রামে নতুন করে সবুজ এলাচ চাষ শুরু করেন। সেখানে ৮০০টি এলাচের ঝাড় ছিল। প্রতিটি ঝাড়ে ১০০ থেকে ১১০টি গাছ হয়েছিল। কিন্তু ফলন আসার সময় হানা দেয় আম্পান ঝড়। তাতেই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় শাহজাহানের। চলতি বছরে আবারও গাছে ফুল আসায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তিনি।
শাহজাহান আলী বলেন, একটি চারা কমপক্ষে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এলাচ খুব লাভজনক চাষ। প্রতি একর জমিতে ১ হাজার ২০০ চারা রোপণ করা যায়। যা থেকে এককালীন প্রায় ১৫ লাখ টাকার এলাচ বিক্রি করা সম্ভব। অন্য কিছু চাষে এত লাভ আসবে না। বর্তমান বাজারে পাইকারি এলাচ গ্রেড হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। গ্রেড ভেদে দুই থেকে আট হাজার টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হয় এটি।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে অন্য ফসলের মাঠে এলাচ চাষ করেছিলাম। কিন্তু তাতে ফলন ভালো হয়নি। পরে একটি মেহগনী বাগান (গাছের ছায়াযুক্ত স্থান) লিজ নিয়ে এলাচ চাষ করেছিলাম। এতে পূর্বের চেয়ে ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু আম্পান ঝড়ে সব গাছই নষ্ট হয়ে যায়। দমে না যেয়ে আবারও এক একরে কম জমিতে ৬০০শ’ গাছের চারা রোপন করেছি। এই গাছে ফুল এসেছে। এখনও ফল হয়নি। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ২০১৬ সালে যে গাছ রোপণ করা হয়েছিল সেটাতে ২০১৯ সালে কিছু ফল এসেছিল। যেটা বিক্রির পর্যায়ে ছিল না। প্রথম ফল সে কারণে কিছু আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া হয়।
শাহজাহান বলেন, যে কেউ বাড়ির আঙিনা অথবা ফলদ বৃক্ষের বাগানে এ জাতের সবুজ এলাচ গাছ চাষ করতে পারবেন।
এলাচ বাগানের শ্রমিক ইউনুছ আলী বলেন, গ্রামে এলাচ চাষ হওয়ায় অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এলাচ বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মন্ডল বলেন, শাহজাহান দেশের প্রথম এলাচ চাষি। পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা নেওয়ার জন্য বুকিং দিচ্ছেন অনেকে। আমাদের সাধ্যের মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা তাকে সাহায্য সহযোগিতা করছি।
বিজ্ঞাপন
এএ