অভাবের তাড়নায় ভ্যান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন জাহাঙ্গীর (৩১)। পরে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে করেন খুন। তবে শেষরক্ষা হয়নি, ধরা পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লুণ্ঠিত মুঠোফোন ছাড়াও ভ্যানের চারটি ব্যাটারি ও চাবিসহ ভ্যান বিক্রির নগদ ৫ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বাঁশের লাঠি ও লুঙ্গি।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতার জাহাঙ্গীর শাহজাদপুর উপজেলার মন্ডলপাড়া গ্রামের সাঈদ মন্ডলের ছেলে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের শিকার রাসেল (১৫) পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার ডেমরা গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, জাহাঙ্গীর পেশায় একজন সিএনজিচালক ছিলেন। পাঁচ বছর আগে সে তার সিএনজি বিক্রি করে দেয়। এরপর সে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করে। কিন্তু অল্প আয় দিয়ে তার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে অভাবের তাড়নায় সে ভ্যান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
বিজ্ঞাপন
পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১ অক্টোবর বিকেলে পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার ডেমরা বাজারে যায় জাহাঙ্গীর এবং সেখানে টার্গেট খুঁজতে থাকে। রাত সাড়ে ৭টার দিকে সে রাসেলকে ব্যাটারিচালিত ভ্যানসহ দেখতে পায়। এরপর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার চরাচিথুলিয়া মন্ডলপাড়ায় ঘুষি (গোবরের
তৈরি জ্বালানি) নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ৭০ টাকায় চুক্তি করে রাসেলের ভ্যানে ওঠে। পরবর্তীকালে শাহজাদপুর উপজেলার মন্ডলপাড়া এলাকায় এসে ভ্যান থামিয়ে রাসেলকে পাশের একটি বালুর মাঠের মধ্যে নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর। সেখানে রাসেলকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। একপর্যায়ে পাশেই থাকা একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে রাসেলের মাথার বাম পাশে আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে জাহাঙ্গীর রাসেলের পরিধেয় লুঙ্গি তার গলায় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

ঘটনার পর রাসেলের পকেটে থাকা মুঠোফোন ও ভ্যানের চাবি নিয়ে মরদেহ টেনে পাশের ধানক্ষেতের মধ্যে ফেলে দেয় জাহাঙ্গীর। পরে রাস্তায় এসে ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গত ৩ অক্টোবর ধানের ধানক্ষেতে রাসেলের অর্ধগলিত মরদেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাসেলের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এদিকে, গত ৪ অক্টোবর রাসেলের পরিবার ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে শাহজাদপুর থানায় এসে মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে রাসেলের বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সবশেষ আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে শাহজাদপুর উপজেলার মন্ডলপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেফতার করে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল।
শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, গ্রেফতার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় তিনটি চুরির মামলা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে রাসেলকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে।
প্রতিনিধি/আইএইচ