রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নওগাঁয় পানিবন্দি ২০০০ পরিবার, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার ৪টি উপজেলার ৭টি পয়েন্ট ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট।

flood-99


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বেড়িবাঁধের ৭টি পয়েন্ট এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ ভেঙে বন্যার পানিতে বিস্তৃন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির আউশ ও আমন ধান খেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এছাড়া রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে দুইদিন থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষদের মাঝে সরকারি সহযোগিতায় চাল, ডালসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

flood-88

বৃহষ্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার বন্য কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহৃত থাকায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। পানি ঘরে প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্রসহ আরও অনেক কিছু ডুবে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে কেউ উচু স্থানে, কেউ বা ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনপার করছে। রান্নার চুলা ডুবে যাওয়ার খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই বন্যা কবলিতদের এসব মানুষের এলাকায়। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির ও খাবারের। জরুরি প্রয়োজনে একবুক পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সাপ-পোকামাকড়ে আতঙ্ক রয়েছেন পানিবন্দী এসব পরিবার। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।

flood-77


বিজ্ঞাপন


আত্রাই উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, গত চারদিন আগে ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। ঘরের মধ্যেও এক হাটু পানি। চারদিন থেকে পানিবন্দি অবস্থা। গরু-ছাগল, মুরগি সহ এখন বেড়িবাধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। গবাদিপশুর খাবার সংকট। খাবার এবং সুপেয় পানির চরম সংকটে পড়েছি। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি।

flood-66

একই গ্রামে গৃহবধূ নিলুফা বেগম বলেন, বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রাতযাপন করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে আছি। খাবারের সমস্যা। কি বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা বাঁধের একটা স্থায়ী সমাধান চাই। কয়েক বছর পর পর বাঁধ ভেঙে আমরা ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পড়তে হয়।

flood-44

নান্দাইবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন- আত্রাই নদীতে পানি প্রচুর চাপ। বুধবার সকাল থেকে রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের সড়কে পানি যেতে শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী মিলে রক্ষা চেষ্টা করেছিলাম। বেলা ১১টার দিকে অবশেষে ভেঙে যায়। এ রাস্তার প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ভেঙে ধ্বসে যায়। এতে কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬০টি মাছের পুকুর শত শত বিঘা জমির আমন ক্ষেত তলিয়ে যায়। এখন এ সড়ক দিয়ে কেউ আর যাতায়াত করতে পারছে না।

flood-55

একই গ্রামের আল মামুন বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। প্রতি বছর এসময় আতঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। সবাই আসে আর দেখে দেখে চলে যায়। কিন্তু জোড়ালো ভাবে কেউ এ সড়কটি ঠিক করে না। আমাদের চোখের সামনে সড়কটি ভেঙে গেল এবং যেগুলো গ্রাম ডুবে যাওয়ার কথা না সেগুলো ডুবে যাচ্ছে। আমরা চাই স্থায়ীভাবে দ্রুত এ সড়টি যেন ঠিক করা হয়।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, গতকাল থেকেই পানিবন্দি পরিবারের মাঝে সরকারি সহযোগিতায় চালসহ শুকনা খাবার বিতরন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণে জেলা প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

flood-11

নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনের সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্থ স্থান মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে। ভাঙন স্থানে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। এছাড়া বন্যা কবলিতদের মাঝে ইতোমধ্যে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যঅনুযায়ী- বন্যায় জেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর আউশ ও আমনের খেত তলিয়ে গেছে। তবে কি পরিমাণ পুকুর বা মাছের ঘের ভেসে গেছে তা এখনো নিরুপন করতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর