শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

বরগুনায় হত্যা করে নারীকে ধর্ষণ, মূল হোতাসহ গ্রেফতার ৩

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৩, ১২:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

বরগুনায় বাড়িওয়ালার সম্পত্তি নিজের দখলে রেখে মালিক হওয়ার আশায় শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ধর্ষণ করেছেন এক শিক্ষক। একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে বরগুনা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হাতে উঠে এসেছে এমন নারকীয় তথ্য।

গত শুক্রবার (২৩ জুন) দিবাগত রাতে বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামে বিলকিস বেগমের (৫৫) হত্যা মামলা বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওপর তদন্তের নির্দেশ আসলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয় পুলিশ।


বিজ্ঞাপন


পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে গিয়ে সবকিছু তদন্ত করে দেখা যায়, রাতে ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটলেও ভাড়াটিয়া আব্দুর রহমান জুয়েল ও তার পরিবার ঘুমিয়ে ছিল। এমন একটি ক্লুধরে জুয়েলের স্ত্রীকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে বিলকিস বেগমকে হত্যা ও হত‍্যার পরে ধর্ষণের সঅব ঘটনা বলে দেয়।

বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ঈদ উৎযাপন করার জন্য ঘটনার দু’দিন আগে ঢাকা থেকে নিজ গ্রামে আসেন নিহত বিলকিস বেগম। তার স্বামী আব্দুল মান্নান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে চাকরিরত অবস্থায় ২০২০ সালে করোনায় মারা যায়। তার দুই ছেলেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করে। ছেলে ও তাদের স্ত্রী এবং নাতিরা গ্রামের বাড়িতে যাবে বলে বাড়িঘর গোছাতে বাড়িতে আসে।

বাড়ি এসে বাড়িঘর নোংরা করে রাখায় ভাড়াটিয়া ও বাড়ি দেখাশোনা করার দ্বায়িত্বে থাকা মোকামিয়া মাদরাসার শিক্ষক আব্দুর রহমান জুয়েলের (৩৩) সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এসময় জুয়েল বলে তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় বাড়িঘর নোংরা হয়েছে। তারপরও ঝগড়াঝাটি করায় জুয়েল বিলকিস বেগমের সঙ্গে ঝগড়াঝাটির বিষয়টি নিয়ে আব্দুর রহমান তার প্রতিবেশী নির্মাণ শ্রমিক হিরুকে (৩৮) জানায় এবং বলে ‘প্রতিবার ঢাকা থেকে এসে ঝগড়াঝাটি করবে তা আরভালো লাগে না। তখন হিরু বলে ওপরে পাঠিয়ে দাও। মহিলা মরলে জমিজমা তোমার হয়ে যাবে। তার ছেলেরা ঢাকায় থাকে, চাকরি করে। চাকরি ছেড়ে তারা আর জমিজমা খেতে গ্রামে আসবে না। এই জমিজমা তোমার হয়ে যাবে।

তখনই তারা বিলকিস বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। হত্যা শেষে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে বলে প্রচার করে দেবে যাতে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। এই কিলিং মিশন সফল করতে তারা তাদের ঘনিষ্ঠজন স্থানীয় মুদি দোকানদার মাসুদ মিয়ার সঙ্গে শেয়ার করে। পরিকল্পনায় তারা মোবাইল ট্রাকিংয়ের ফাঁদে যাতে না পড়ে তাই বিলকিস বেগমের বাড়ির উঠনে টিউবয়েলে কয়েকটি চাপ দিলে তাদের উপস্থিতি সংকেত নিশ্চিত হবে।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, শুক্রবার রাতে জুয়েল তার অসুস্থ স্ত্রীকে জ্বরের ওষুধের পাশাপাশি ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য এলার্জির ওষুধ খাইয়ে জোরে ফ্যান ছেড়ে এবং চার্জার ফ্যান ছেড়ে স্ত্রীকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। মধ্যরাতে হিরু এসে টিউবয়েলে জোরে জোরে কয়েকটি চাপদিলে জুয়েল দরজা খুলে হিরুকে নিয়ে প্রবেশ করে এবং বাইরে পাহারা হিসেবে মাসুদ অবস্থান করে।

>>>আরও পড়ুন: বরগুনায় গৃহবধূকে খুন করে ডাকাতি

ঘরের মধ্যে ঢুকে জুয়েল বিলকিস বেগমের বুকের উপরে উঠে গলাটিপে ধরে আর হিরু পা চেপে ধরে। এসময় ধস্তাধস্তি হলে বিলকিস বেগমের বুক থেকে কাপড় সরে যায়। তখন যাতে বিলকিস বেগম কোনো শব্দ করতে না পারে তাই মুখে তোয়ালে পেচিয়ে নেয় এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে।

Kill

গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, জুয়েল ও হিরুর কিলিং মিশন শেষে ঘরের মালপত্র তচনছ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে এবং জানালার গ্রীল কেটে মেঝেতে রাখে যাতে সবাই বুঝতে পারে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ঘটনা শেষে জুয়েল বিলকিস বেগমের স্বর্ণালঙ্কার হিরু গরিব বিধায় তাকে দিয়ে দেয়। হিরু চলে যাওয়ার পর জুয়েল পুনরায় বিলকিস বেগমের ঘরে ঢোকে এবং মৃত বিলকিস বেগমকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করার পর বিলকিস বেগমের মরদেহের ওপর আঘাত করে। যাতে পুলিশ বুঝতে পারে ডাকাতরা বিলকিস বেগমকে মারধর ও ধর্ষণ করেছে।

ধর্ষণ করা শেষে জুয়েল এসে অসুস্থ স্ত্রীর পাশে ঘুমিয়ে থাকে এবং সকাল সাড়ে সাতটায় ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকে উঠে জুয়েল ও তার স্ত্রী বিলকিস বেগমকে ডাকাডাকি করে এবং হিরুকে ফোন দেয়। হিরু আসলে পরে প্রথমে বিলকিস বেগমের জামাতা বেতাগী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মরত তাকে খবর দেয় পরে ঢাকায় ছেলেদের খবর দেয় বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে এবং বিলকিস বেগমের মৃত্যুর খবর জানায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক রেজা বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। এবং এই হত্যাকাণ্ডটি ডাকাতির নাটকে পরিনত করতে চাইলে আমাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে মামলাটির তদন্ত দেওয়া হয়। তারা সঠিক তদন্ত করে হত্যার রহস্য ও সত্যতা বের করে। ভাড়াটিয়ে জুয়েলকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বরগুনা চীফ জুডিসিয়াল আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি শেষে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।

রোববার রাতেই তারা অভিযান চালিয়ে মামলার অন্যতম সহযোগী হিরুকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে। হিরুর বক্তব্য মতে মঙ্গলবার দিন রাতে পুনরায় অভিযান চালিয়ে মাসুদকে গ্রেফতার করে। এসময় মাসুদের ট্রাংক থেকে বিলকিস বেগমের কানের দুল জব্দ করে। হিরু ও মাসুদের চিফ জুডিসিয়াল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক রেজা।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর