বিল থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে খুব ভালোভাবেই চলছিল সুজিতের সংসার। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল এক দুরারোগ্য ব্যাধি। প্রায় ত্রিশ বছর আগের সেই দুরারোগ্য ব্যাধির কারণেই হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছিল সুজিতের এক পা। এর পর শুরু হয় এক পা নিয়েই সুজিতের জীবন সংগ্রাম।
ছোট গাড়িতে প্যাডেল ঘুরিয়ে ফেরি করে বিক্রি করতেন মাছ। দিন দিন শারীরিক শক্তি আর সামর্থ কমে আসার কারণে এভাবে মাছ বিক্রি করতে কষ্ট হওয়ায় ছেড়ে দিলেন মাছ বিক্রির কাজ। হাতে নিলেন বৈঠা। নৌকার মাঝি হয়ে তর তরিয়ে চালাতে থাকেন নৌকা। এখন নৌকার গতির মতো জীবনও হয়েছে গতিময়।
বিজ্ঞাপন
সুজিত বর্মনের বয়স ৭৫ ছুঁই ছুঁই। নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের চিনাদী বিলের পাশেই তার বাড়ি। যৌবন থেকেই কাজের প্রতি প্রচুর আগ্রহ ছিল তার। এজন্য বাড়ির পাশের চিনাদী বিল থেকে মাছ ধরে বাজেরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ৩ ছেলে ১ মেয়ের জনক সুজিত।
সুজিতের বাড়ির পাশেই চিনাদী বিল। ৫৫০ বিঘা পরিমাণ সুন্দর এ বিল প্রকৃতি প্রেমিদের প্রিয় হয়ে উঠায় পর্যটক আসত নিয়মিত। বিশেষ করে ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল ততকালীন জেলা প্রশাসক আবুহেনা মুর্শিদ জামান এ বিলকে পর্যটন পার্ক তৈরির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করায় দূর-দুরান্ত থেকে পর্যটকদের আগমন বেড়ে যায়। সে সময় সুজিত এক ছোট ডিঙ্গি নৌকা নেয়। এক পায়ে স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে না পারলেও নৌকা চালাতে পারেন বেশ ভালো করেই। পর্যটকদেরকে ঘণ্টায় ১৫০-২০০ টাকা হিসেবে বিল ঘুরে দেখান নৌকায় করে। এভাবে দিন শেষে যা পান তা দিয়েই সন্তুষ্টি চিত্তে পরিবার চালান সুজিত বর্মন।
নিজের পেশা আর ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে ঢাকা মেইলকে সুজিত বর্মন বলেন, সৃষ্টিকর্তা যেভাবে রেখেছেন তাতেই আমি খুশি। যখন দুই পা ছিল শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারতাম। এখন তো আর এক পা নেই তাই বাধ্য হয়ে নৌকা চালানোর কাজ নিয়েছি। কারণ এ কাজে খুব একটা নড়াচড়া করতে হয় না। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার জন্য ক্র্যাচ ব্যবহার করে থাকেন তিনি। একটা ক্র্যাচে ভর দিয়ে বাড়ি থেকে নৌকায় আসেন। এর পর কাজ শেষ করে আবার ক্র্যাচে ভর দিয়েই রাতে বাড়ি ফিরেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
পর্যটকদের বিষয়ে সুজিত বলেন, লোকজন আসে, নৌকায় ঘুরে। অনেকে আমার সঙ্গে ছবি তোলে। নৌকায় আনন্দ ফুর্তি করে। এদের দেখে আমারও মন ভালো থাকে।
নৌকায় ভ্রমণ করতে আশা আরিফ বলেন, উনাকে দেখে উৎসাহ বোধ করি। শারীরিক কোনো প্রতিবন্ধকতা মানুষকে আটকে রাখিতে পারে না। এজন্য শুধু মনের শক্তি প্রয়োজন। সুজিত কাকু আমার সামনে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কতদিন এভাবে নৌকা চালাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সুজিত বলেন, যতদিন শরীরের শক্তি থাকে কাজ করতে পারি ততদিন কাজ করে যাব। অন্যের কাঁধে চড়ে খাওয়ার চিন্তা আমার মাথায় নেই।
প্রতিনিধি/এসএস