বিমানে চড়া অনেকের কাছেই এক দারুণ অভিজ্ঞতা হলেও, কারও কারও জন্য এটি হতে পারে ভয়ের একটি নাম। বিশেষ করে যারা প্যানিক অ্যাটাক বা আতঙ্কজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য বিমানে উঠা মানেই ঘাম, হৃদকম্পন, শ্বাসকষ্ট, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি।
কিন্তু কেন এমনটা হয়? আর এর থেকে মুক্তির উপায় কী?
বিজ্ঞাপন
প্যানিক অ্যাটাক কী?
প্যানিক অ্যাটাক এক ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা হঠাৎ করে শরীর ও মনে ভয়াবহ আতঙ্ক তৈরি করে। এতে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, ঘাম হয়, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং মৃত্যু বা অজ্ঞান হওয়ার ভয় তৈরি হয়। এটি কয়েক মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
বিমানে প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার কারণ:
১. ক্লসট্রোফোবিয়া (বদ্ধ জায়গার ভয়):
বিজ্ঞাপন
বিমানের ভিতরের তুলনামূলক ছোট জায়গা এবং জানালাবিহীন অবস্থান অনেকের মধ্যে দমবন্ধ ভাব তৈরি করে।
২. উচ্চতার ভয় (Acrophobia):
উচ্চতা নিয়ে যাদের ভয় আছে, তারা প্লেনের জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকালে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
৩. নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থার ভয়:
বিমানে চড়ে মানুষ নিজে কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যেমন: গতি, দিক, উচ্চতা। এই নিয়ন্ত্রণহীনতা থেকে প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।
৪. অজানা বা দুর্ঘটনার ভয়:
বিমান দুর্ঘটনার সংবাদ, টার্বুলেন্স, কিংবা ছোট শব্দও কিছু মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে।
উপশম ও প্রতিকার
জানুন ও বুঝুন:
প্যানিক অ্যাটাক কী এবং কেন হয়, তা বোঝা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় শুধুমাত্র নিজের পরিস্থিতি বোঝার মাধ্যমেই আতঙ্ক কমে যায়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম:
গভীর শ্বাস নেওয়ার কৌশল রপ্ত করুন – নাক দিয়ে শ্বাস নিন, মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এতে মানসিক চাপ কমে।
মনোযোগ ঘোরানো কৌশল (Distraction):
বই পড়া, মিউজিক শোনা, সিনেমা দেখা বা চোখ বন্ধ করে ধ্যান করুন।
সঙ্গীর সহায়তা:
ভ্রমণের সময় আপনার পরিস্থিতি বোঝে এমন কাউকে সঙ্গে রাখলে নিরাপত্তার অনুভূতি কাজ করে।
পেশাদার মনোরোগ চিকিৎসা:
যদি প্যানিক অ্যাটাক নিয়মিত হয়, সেক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি (যেমন সিবিটি) বা উপযুক্ত ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
বিমানে ওঠার আগে ও পরে হালকা খাবার খান, পানি খান ও ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন: বিমানের অটোপাইলট কী? অটোপাইলটে বিমান যেভাবে চলে
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার মধ্য দিয়েই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। যদি আপনি বারবার এড়িয়ে যান, তবে ভয়ের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। তাই চিকিৎসা নিন, প্রস্তুতি নিন এবং ধীরে ধীরে নিজেকে সাহসী করে তুলুন।
বিমানে প্যানিক অ্যাটাক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসাযোগ্যও। তাই ভয় নয়, সচেতনতা ও প্রস্তুতিই হোক আপনার ভ্রমণের সঙ্গী।
এজেড

