রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

২০ মিনিট আকাশে উড়ে যাত্রী নামিয়ে দিল বিমান

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

হঠাৎ এসি নষ্ট, ২০ মিনিট আকাশে উড়ে যাত্রী নামিয়ে দিল বিমান

সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট। কিন্তু যাত্রী নিয়ে আকাশে উড়লেও সেটি আর গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। উড্ডয়নের পর ২০ মিনিট আকাশে থাকার পর যাত্রীদের নামিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ হিসেবে যাত্রীদের জানানো হয়েছে, ফ্লাইটের এসি কাজ করছে না। পরবর্তীতে এক ঘণ্টা পর বিকল্প ফ্লাইটে যাত্রীদের নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটা ফ্লাইটে এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর সেই এয়ারক্রাফটটির এসি সংস্কারের জন্য হ্যাঙ্গারে পাঠানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


সালেহ আকরাম সম্রাট ঢালী নামে এক যাত্রী জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ বিমানে ঢাকা থেকে চিটাগাং যাচ্ছি। এসি চলতেছে না। সবাই ঘেমে যাচ্ছিল। বিমান ছাড়ার আগে এসি না চলার একাধিক অভিযোগের জবাবে পাইলট সরি বলে বক্তব্য শুরু করল। আরও বলল, বিমান উড়া শুরু করলে ঠাণ্ডা বাতাস শুরু হবে। বিরক্ত হয়ে এইরকম একটা সার্ভিসে ২০ মিনিট এসি-ফ্যান ছাড়া বসিয়ে রাখার কারণ জানতে আমি এয়ারহোস্টেসের সাথে কথা বলছি!’

তিনি আরও জানান, ‘পুরো পথে এসি নষ্ট ছিল। পাইলট কয়েকবার সরি বলে ঘোষণা দিয়েছে। কেবিন ক্রুদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। মানুষের প্রশ্নবাণে নিশ্চয়ই তাদের বাংলাদেশ বিমানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতির কথা মনে করে অসহায় লাগছে। আমাদের ৩০ মিনিট আকাশ ঘুরিয়ে আবার ঢাকা নামায় দিয়েছে।’

অবশ্য পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ফ্লাইটের যাত্রীদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিকল্প ফ্লাইটে চট্টগ্রাম নিয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানিয়েছেন, ফ্লাইটটি ছাড়ার আগে থেকে সেটির এসি কাজ করছিল না। তারা বিষয়টি ফ্লাইট-সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার জানালেও তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। সেই অবস্থাতেই তাদের নিয়ে ফ্লাইট আকাশে উড়াল দেয়।  এনিয়ে ফ্লাইটে আকাশপথে যাত্রীদের সাথে হইচই বেঁধে যায়। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে পাইলট দ্রুত সেই ফ্লাইটটিকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে যাত্রীদের বলা হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এমন হয়েছে। এরপর তাদের এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে সকাল পৌনে দশটায় বিকল্প ফ্লাইটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বিমানের একটি ফ্লাইট।

এই ফ্লাইটের কারণে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া বিমানের অন্যান্য ফ্লাইটগুলো দেরিতে ছেড়েছে।

ঢাকা থেকে সিলেট গেছেন দীপক চৌধুরী নামে এক যাত্রী। তিনি জানিয়েছেন, তার ফ্লাইট ছিল ১১টায়। কিন্তু সেটি দুই ঘণ্টা পর ছেড়েছে। যাত্রী হিসেবে আমাকে বিমান অথরিটি জানালেন নির্ধারিত সময়ের ঠিক দুঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে জাহাজ। শরীর খারাপ লাগছিল। নেহাত দায়িত্বের কারণে অসুস্থ শরীর নিয়ে সাংগঠনিক সফরে যেতে হচ্ছে।

বিক্ষুব্ধ এই যাত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ব্যাপক হাঁকডাক করে বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল বানানো হচ্ছে! অথচ, নূন্যতম চাহিদার এয়ারক্রাফট নাই, ক্রু নাই! চাহিদার উপযোগী রানওয়ে নাই! এয়ার ট্রাফিক অসহনীয় হলে বিদেশিরা কি আসবে? সেই ভাবনাও নাই! এয়ারপোর্টের পরিচ্ছন্নতা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার কথা তো বাদই দিলাম।

ঢাকা থেকে সিলেটগামী বিজি৬০১ নম্বরের ফ্লাইটটি দেরিতে ছেড়ে যায়। তবে এই বিলম্বের ব্যাখ্যা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তাদের মতে, সকালে চট্টগ্রামগামী ফ্লাইটটিতে সমস্যার কারণে সিলেটগামী ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে।

শুধু এই ঘটনাই নয়, এর আগেও একাধিকবার বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইটে এসি কাজ না করার ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিমান প্রতিবছর তাদের বহরে নিত্য নতুন অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু পুরনো যেগুলো রয়েছে সেগুলো দিয়ে ভালো যাত্রীসেবা দেওয়ার দিকে তেমন নজর নেই বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটের এসি কাজ না করা ও ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বুশরা ইসলাম। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, চট্টগ্রাম রুটের একটি ফ্লাইটে এমন ঘটনা ঘটেছিল। পরে যাত্রীদের নামই আনা হয়। এরপর সকাল পৌনে দশটার দিকে আরেকটি ফ্লাইটে তাদেরকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। সেই বিমানের এয়ারক্রাফটটিকে মেরামতের জন্য হ্যাঙ্গারে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও তিনি জানান, এই কারণে সিলেট রুট ছাড়াও আরও কয়েকটি রুটে এর প্রভাব পড়ে। অন্য ফ্লাইটগুলো বিলম্বে ছাড়তে বাধ্য হয়।

এদিকে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের ২১টি বিমান রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি এয়ারক্রাফট দিয়ে তারা অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীসেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি ফ্লাইট তারা পরিচালনা করেন।

২০২২ সালে বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইটে এমন কয়েকটি ঘটনার জেরে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। তখন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে ওঠে বিমানের সংশ্লিষ্টরা। এরপর আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে শুরু করেছে। ফলে বিমানের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন যাত্রীরা।

এমআইকে/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর