আজকের আধুনিক গাড়ি এখন কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয় বরং প্রযুক্তি আর সংযোগের যুগে এগুলো স্মার্টফোনের মতোই উন্নত গ্যাজেটে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি নতুন মডেলে যুক্ত হচ্ছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ ফিচার, কিন্তু বাস্তবে অনেক মালিক বহু বছর গাড়ি ব্যবহার করেও জানেন না তাদের গাড়িতে আসলে কী কী সুবিধা আছে।
গাড়ি কোম্পানিগুলো এসব ফিচারকে বড় করে প্রচার করলেও রাস্তায় — ট্র্যাফিক, বিশৃঙ্খল লেন, গরম আবহাওয়া, ধুলা — এসব কারণে বেশ কিছু হাই-টেক ফিচার খুব কমই কাজে আসে। নিচে এমন ছয়টি ফিচার তুলে ধরা হলো, যেগুলো নামেই জনপ্রিয়, কিন্তু বাস্তবে অনেক সময়ই অকার্যকর।
বিজ্ঞাপন
১. নিয়ন্ত্রণ কেবল টাচস্ক্রিন
বাটনের চেয়ে কি সত্যিই ভালো?
আজকের বেশিরভাগ গাড়িতে বাটনের ব্যবহার কমিয়ে সবকিছু টাচস্ক্রিনে নিয়ে আসা হয়েছে। এসি চালু করা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, মিউজিক বদলানো — সবই স্ক্রিন স্পর্শ করে করতে হয়। গাড়ি চালানোর সময় টাচস্ক্রিনে কোনো অপশন খুঁজতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ড্রাইভারের মনোযোগ রাস্তা থেকে সরে যায়। অন্যদিকে, ম্যানুয়াল বাটনে অভ্যস্ত হলে না তাকিয়েই হাত বাটন খুঁজে পায়। ভেজা হাত বা রুক্ষ রাস্তায় টাচস্ক্রিন ব্যবহার আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন
২. এডিএএস (ADAS)
দরকারি প্রযুক্তি, কিন্তু ভারতীয় রাস্তায় সমস্যা বেশি
ADAS বর্তমানে গাড়ির বড় আকর্ষণ। লেভেল ১ বা লেভেল ২ সিস্টেম দুর্ঘটনা শনাক্ত করা, সতর্ক করা, এমনকি স্বয়ংক্রিয় ব্রেকও দিতে পারে। কিন্তু রাস্তায় হঠাৎ ওভারটেকিং, পথচারী লাফিয়ে সামনে আসা, এলোমেলো লেন পরিবর্তন — এসব কারণে লেন কিপ অ্যাসিস্ট বা অটো এমার্জেন্সি ব্রেকিং প্রায়ই ভুল সতর্কতা দেয় বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে হস্তক্ষেপ করে।
এই কারণে অনেক চালকই বিরক্ত হয়ে ADAS বন্ধ করে রাখেন।
৩. স্বয়ংক্রিয় পার্কিং
প্রকৃত ব্যবহারে কতটা কার্যকর?
যাদের পার্কিং সমস্যা আছে তাদের জন্য অটো পার্কিং সুবিধা বড় সহায়ক মনে হয়। তবে বাস্তবতায় যেখানে গাড়ি প্রায়ই অনিয়মিতভাবে পার্ক করা থাকে, সেখানে এই সিস্টেমের কাজ করা কঠিন। অটোপার্কিংয়ের জন্য পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত পর্যাপ্ত জায়গা দরকার — যা অনেক সময় পাওয়া যায় না।
এছাড়া সিস্টেম কাজ করতে সময় নেয়, ফলে ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাও বাস্তবসম্মত নয়।

৪. অটো স্টার্ট স্টপ
জ্বালানি সাশ্রয় নাকি ইঞ্জিনের ওপর চাপ?
ট্র্যাফিক সিগন্যালে থামলেই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া আর ক্লাচ চাপলেই চালু হয়ে যাওয়ার সুবিধা শুনতে ভালো লাগলেও এর একটি বড় সীমাবদ্ধতা আছে। সাধারণ একটি গাড়ির ইঞ্জিন সারা জীবনে প্রায় ৫০০০ বার স্টার্ট হয়। কিন্তু অটো স্টার্ট স্টপ থাকা গাড়ি বছরে প্রায় ৫০০০০ বার চালু/বন্ধ হয়।
এতে নির্দিষ্ট ইঞ্জিন অংশে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, তাই অনেক চালকই এই ফিচার বন্ধ করে রাখতে পছন্দ করেন।
৫. ওয়্যারলেস চার্জার
তারযুক্ত চার্জারের চেয়ে কেন কম কার্যকর?
তারবিহীন চার্জার সুবিধাজনক হলেও বাস্তবে চার্জ হতে বেশি সময় লাগে। এছাড়াও চার্জিংয়ের সময় ফোন গরম হয়ে যায়, যা ব্যাটারির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তারযুক্ত চার্জার দ্রুত ও স্থিতিশীল — তাই ব্যবহারিক দিক থেকে এটি এখনো সেরা পদ্ধতি।
আরও পড়ুন: হুন্দাইয়ের এই গাড়ি নিরাপত্তা পরীক্ষায় ‘ফেল’ করল
৬. সানরুফ
দেখতে সুন্দর, কিন্তু ব্যবহারে সীমাবদ্ধ
গাড়ির স্টাইল বাড়াতে সানরুফ গুরুত্বপূর্ণ হলেও ভারতীয় আবহাওয়ায় এটি সবসময় ব্যবহারযোগ্য নয়। ধুলো, দূষণ, তাপ — এসব কারণে সানরুফ খোলা রাখা অনেক সময়ই অসম্ভব। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো বাচ্চারা সানরুফ দিয়ে মাথা বের করলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে।
এজেড

