গাড়ি বা মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের ক্ষমতা বোঝাতে আমরা প্রায়শই একটি পরিমাপক শব্দ শুনি হর্সপাওয়ার (Horsepower)। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইঞ্জিনের শক্তি মাপতে ঘোড়ার শক্তির হিসাব কেন ব্যবহার করা হয়? এই প্রতিবেদনে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখা যাক।
বিজ্ঞাপন
হর্সপাওয়ার শব্দের উৎপত্তি
‘হর্সপাওয়ার’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন স্কটিশ প্রকৌশলী জেমস ওয়াট। ১৮শ শতকে তিনি যখন তার তৈরি স্টিম ইঞ্জিন প্রচার করছিলেন, তখনকার দিনে ঘোড়া ছিল প্রধান শ্রমশক্তি—মিল, কল-কারখানা এমনকি কৃষিকাজেও। তাই মানুষকে ইঞ্জিনের ক্ষমতা বুঝিয়ে বলার জন্য জেমস ওয়াট একটি পরিচিত রেফারেন্স ব্যবহার করলেন—একটি ঘোড়া যতটুকু কাজ করতে পারে, তার ভিত্তিতে একটি নতুন একক তৈরি করলেন, যার নাম দিলেন হর্সপাওয়ার।

১ হর্সপাওয়ার মানে কী?
জেমস ওয়াটের হিসাবে, একটি শক্তিশালী ঘোড়া এক মিনিটে ৫৫০ পাউন্ড ওজন ১ ফুট উপরে তুলতে পারে। এই কাজের পরিমাণই একটি ১ হর্সপাওয়ার হিসেবে ধরা হয়।
১ হর্সপাওয়ার = ৭৪৫.৭ ওয়াট (প্রায়)
অর্থাৎ, ১ হর্সপাওয়ার মানে হলো এমন একটি শক্তি, যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৭৪৫.৭ ওয়াট কাজ করা যায়।

ইঞ্জিনে হর্সপাওয়ার ব্যবহারের কারণ
১. পরিচিত একক হিসেবে সহজবোধ্য: যেহেতু ঘোড়া একসময় প্রধান শক্তি ছিল, তাই মানুষ সহজেই বুঝতে পারত—ইঞ্জিনের শক্তি কতটা।
২. তুলনামূলক ব্যাখ্যা: বলা যেতে পারে, একটি ১০ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন মানে ১০টি ঘোড়ার সমান শক্তি। এটি ভিজ্যুয়ালাইজ করার জন্য সহজ ছিল।
আরও পড়ুন: স্কুটারে গিয়ার শিফটার, ক্লাচ থাকে না কেন?
৩. প্রযুক্তির ধারাবাহিকতা: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিন আধুনিক হয়েছে, তবে হর্সপাওয়ার ইউনিট থেকেই গেছে। আজও এটি ইঞ্জিন পারফরম্যান্স বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
গাড়ি ও মোটরসাইকেলে হর্সপাওয়ারের ব্যবহার
গাড়ির গতি, ওজন টানার ক্ষমতা, অ্যাক্সেলারেশন—সব কিছুই নির্ভর করে হর্সপাওয়ারের ওপর।

১০০–১৫০ সিসি বাইকে সাধারণত ৮–১৫ হর্সপাওয়ার পাওয়া যায়
একটি গাড়িতে ৭০–৩০০ হর্সপাওয়ার পর্যন্ত হয়ে থাকে
স্পোর্টস কার বা সুপারবাইকে ৫০০+ হর্সপাওয়ার পর্যন্ত হয়
ইঞ্জিনের শক্তি মাপতে হর্সপাওয়ার ব্যবহৃত হয় ঐতিহাসিক ও ব্যবহারিক কারণে। এটি এমন একটি একক যা শুধু ইঞ্জিনের ক্ষমতা বোঝাতে নয়, বরং প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেও সহায়ক।
অতীতের ঘোড়ার শক্তিই আজকের ইঞ্জিন প্রযুক্তির পরিমাপক হয়ে উঠেছে।
এজেড

