দুই চাকার বাহন কোন দেশে সবচেয়ে বেশি চলে? উত্তর জানলে আপনি চমকে যাবেন!
বিশ্বের দুই চাকার যানবাহন বাজারে (Two-Wheeler Market) ভারতের অবস্থান একেবারেই শীর্ষে। সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (SIAM)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে গ্লোবাল টু-হুইলার বিক্রির ২৭% হয়েছে শুধুমাত্র ভারতে। চীন রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে (২৫%) এবং ইন্দোনেশিয়া তৃতীয় (১০%)। এই তিন দেশের সম্মিলিত দখল গ্লোবাল টু-হুইলার মার্কেটের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
বিজ্ঞাপন
কেন ভারত এত এগিয়ে?
ভারতের এই সাফল্যের পেছনে মূলত তিনটি বিষয় কাজ করছে:
মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি
জ্বালানি দক্ষ বাহনের জনপ্রিয়তা
বিজ্ঞাপন
নগরায়ণ ও যানজট সামাল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা
ছোট রাস্তা, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও ব্যস্ত শহরগুলোতে দুই চাকার বাহনের ব্যবহার সব থেকে উপযোগী—যা ভারতের বাজারে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য
ফোরচুন বিজনেস ইনসাইটসের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল দখল করেছে গ্লোবাল টু-হুইলার মার্কেটের ৭০.৫৪%। এই অঞ্চলের মধ্যে ভারত সবচেয়ে বড় অংশীদার।
আরও পড়ুন: মোটরসাইকেলের স্পার্ক প্লাগ কতদিন পরপর বদলানো উচিত?
নগরায়ণের ফলে যানজট এবং দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য সাশ্রয়ী ও দ্রুতগামী বাহনের চাহিদা বেড়েছে। হিরো মোটোকর্প, বাজাজ, টিভিএস এবং রয়েল এনফিল্ডের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে আধিপত্য তৈরি করেছে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও সাশ্রয়ী মডেলের জয়জয়কার
আইএমএআরসি গ্রুপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের টু-হুইলার বাজার ছিল ২৪.৯ মিলিয়ন ইউনিট, যা ২০৩৩ সালের মধ্যে পৌঁছাতে পারে ৯২ মিলিয়ন ইউনিটে।
এটি দেখায় প্রতি বছর গড়ে ১৫.৬৪% হারে বাজার বেড়ে চলেছে।
এর পেছনে রয়েছে:
৬০-৭০ কিমি/লিটার জ্বালানি দক্ষতা
হিরো স্প্লেন্ডার, হোন্ডা শাইন-এর মতো সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য মডেলের জনপ্রিয়তা
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের প্রতি ভরসা কমছে?
যদিও ইয়ামাহা ও হোন্ডার মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো ভারতীয় বাজারে রয়েছে, তবুও তাদের প্রতি কিছুটা হতাশা তৈরি হচ্ছে।
ভারতের গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন—এই ব্র্যান্ডগুলো উন্নত প্রযুক্তির মডেল সীমিত আকারে আনে এবং তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি করে, যা প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দেয় না।
এই সুযোগেই বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে দেশীয় কোম্পানিগুলো।
ইলেকট্রিক টু-হুইলারে ভারতের নতুন গতি
২০২৩ সালে ভারতে ইলেকট্রিক টু-হুইলারের বিক্রি টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ১ মিলিয়নের বেশি হয়েছে।
ম্যাকিনজি রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন ৭৮% ভারতীয় গ্রাহক ইলেকট্রিক টু-হুইলার কিনতে আগ্রহী।
পরিবেশ সচেতনতা, সরকারি ভর্তুকি এবং নতুন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ এর পেছনে ভূমিকা রাখছে।
তবে সমস্যা একটিই—চার্জিং স্টেশনের অভাব।
এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। ওলা ইলেকট্রিক, এথার এনার্জি, বাজাজ চেটকের মতো কোম্পানিগুলো বাজারে এনেছে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ই-বাইক।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
ভারতের টু-হুইলার বাজারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, তবে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ:
পরিবেশবান্ধব ইমিশন নীতিমালা আরও কঠোর হচ্ছে
সুরক্ষা মানে জোর দেওয়া হচ্ছে
গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে বড় বিনিয়োগ দরকার
এই চ্যালেঞ্জগুলোও বাজারে নতুন দিগন্ত খুলছে, বিশেষ করে ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে।
ভারতের ২৭% বাজার দখলের পেছনে রয়েছে—
অর্থনৈতিক উন্নয়ন
দেশীয় কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী শক্তি
গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী সাশ্রয়ী পণ্য
আগামী দশকে ভারত টু-হুইলার বাজারে বিশ্ব নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারে—যদি সরকার, গ্রাহক ও নির্মাতারা একসঙ্গে গতি ধরে রাখে।
এজেড

