বর্তমান সময়ের ব্যস্ত জীবনে মোটরসাইকেল হয়ে উঠেছে দ্রুত চলাচলের অন্যতম সহজ মাধ্যম। বিশেষ করে শহরের যানজট এড়াতে অনেকেই নতুন বাইক কেনার কথা ভাবছেন। তবে বাইক কেনা শুধু একটি বাহন কেনাই নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
১. আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বাইক নির্বাচন করুন
প্রথমেই ভাবুন, আপনি কেন মোটরসাইকেল কিনছেন—
প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতের জন্য?
দূরপাল্লার ভ্রমণের জন্য?
নাকি স্টাইল ও পারফরম্যান্সের জন্য?
বিজ্ঞাপন
যেমন, অফিস যাত্রার জন্য মাইলেজ ভালো এমন কমিউটার বাইক যথাযথ, আর ট্যুরিং বা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য উপযুক্ত হবে ১৫০–২০০ সিসির শক্তিশালী বাইক।

২. বাইকটির ইঞ্জিন ক্ষমতা (সিসি) বিবেচনা করুন
বাংলাদেশে সাধারণত ১০০ থেকে ১৬৫ সিসি পর্যন্ত বাইক পাওয়া যায়।
১০০–১২৫ সিসি: ভালো মাইলেজ ও সহজ কন্ট্রোল
১৫০–১৬৫ সিসি: স্পোর্টি লুক, বেশি পাওয়ার ও কিছুটা কম মাইলেজ
নিজের অভিজ্ঞতা ও চালনার ধরন অনুযায়ী সিসি নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. মাইলেজ ও জ্বালানি সাশ্রয়
বর্তমানে তেলের দাম বাড়তির দিকে। তাই মোটরসাইকেলের মাইলেজ একটি বড় বিষয়। বাজারে কিছু মডেল রয়েছে যা প্রতি লিটারে ৫০–৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
মাইলেজ ভালো এমন বাইক বেছে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত, যদি আপনি প্রতিদিন অনেক দূর যাতায়াত করেন।
৪. নিরাপত্তা ফিচার দেখুন
নতুন মোটরসাইকেল কিনতে গেলে নিরাপত্তা ফিচার এখন অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। যেমন-
এবিএস বা অ্যান্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম
ডিস্ক ব্রেক (সামনে ও পেছনে)
টিউবলেস টায়ার
নির্ভরযোগ্য হেডলাইট (LED/DRL)
এসব ফিচার দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

৫. ব্র্যান্ড ও বিক্রয়োত্তর সেবা (After Sales Service)
বাইক কেনার আগে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডটির সার্ভিস সেন্টার আপনার এলাকায় রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করুন।
বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড যেমন হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকি, বাজাজ, হিরো, টিভিএস, রানার ইত্যাদি অনেক বছর ধরে গ্রাহক সন্তুষ্টি দিয়ে আসছে।
ভবিষ্যতে স্পেয়ার পার্টস, সার্ভিস ও মেইনটেন্যান্স যেন সহজে পাওয়া যায়, তা বিবেচনা করা জরুরি।
৬. বাজেট ঠিক করুন ও অতিরিক্ত খরচ সম্পর্কে জানুন
শুধু বাইকের দাম নয়, বাইকের সঙ্গে যুক্ত কিছু অতিরিক্ত খরচ রয়েছে-
রেজিস্ট্রেশন ফি
ইন্স্যুরেন্স
হেলমেট
সার্ভিস চার্জ
বছর শেষে কর
এই হিসাব মিলিয়ে আপনার মোট বাজেট ঠিক করুন।
৭. টেস্ট রাইড ও রিভিউ পড়া জরুরি
বাইক কেনার আগে সম্ভব হলে একটি টেস্ট রাইড করে নিন। পাশাপাশি ইউটিউব, বাইক ব্লগ, রিভিউ সাইট থেকে সংশ্লিষ্ট বাইক মডেলের ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা জেনে নিন।
৮. নতুন নাকি পুরনো বাইক? সিদ্ধান্ত বুঝে নিন
যদি আপনার বাজেট কম হয়, তাহলে ভালো অবস্থা ও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনার কথাও ভাবা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে বাইকের কাগজপত্র ও অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করুন।
আরও পড়ুন: রয়েল এনফিল্ড ইলেকট্রিক স্ক্র্যাম্বলার বাইক আনছে
নতুন মোটরসাইকেল কেনা মানে শুধু বাহন কেনা নয়, এটি আপনার প্রতিদিনের সঙ্গী, নিরাপত্তা, সময় ও অর্থের সঙ্গে জড়িত। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের প্রয়োজন, বাজেট ও নিরাপত্তা—এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে বেছে নিন আপনার উপযুক্ত বাইক।
এজেড

