ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত। এই ছুটির সময়ে শহরের বাসিন্দারা গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান এবং অনেকে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল গ্যারেজে ফেলে রেখে যান কিংবা গ্রামে নিয়েই যান। কিন্তু এই সময়টাতেই বাড়ে এক ধরনের অপরাধ— মোটরসাইকেল চুরি।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ঈদের ছুটিতে শহর ও গ্রাম– উভয় জায়গাতেই মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পায়। কারণ মালিকরা অসচেতনভাবে বাইক ফেলে যান কিংবা অরক্ষিত জায়গায় রেখে দেন।
বিজ্ঞাপন
মোটরসাইকেল চুরি কেন বাড়ে ঈদের সময়?
১. শহরের গ্যারেজে তালা দিলেও নজরদারি কম থাকে
২. গ্রামে নিয়ে গিয়ে খোলা জায়গায় রেখে দেওয়া হয়, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল
৩. চোরচক্র এই সময়টাতে বেশি সক্রিয় থাকে, কারণ তারা জানে অনেক বাইক মালিক অনুপস্থিত
৪. অনেকে গার্ড বা সিসিটিভি ছাড়াই বাইক রেখে দেন

ঈদের সময় মোটরসাইকেল নিরাপদে রাখার ৭টি কার্যকর উপায়:
১. সিসিটিভি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন
যেখানে বাইক রেখে যাবেন, সেখানে যদি সিসিটিভি থাকে, সেটি চালু আছে কিনা দেখে নিন। গ্যারেজ বা বাসার আশপাশে নজরদারির ব্যবস্থা রাখুন।
২. ডাবল লক ব্যবহার করুন
সেফটি লক ছাড়াও অতিরিক্ত চেইন লক বা ডিস্ক ব্রেক লক ব্যবহার করুন। চোরের পক্ষে তখন বাইক সরানো কঠিন হয়।
৩. স্মার্ট জিপিএস ট্র্যাকার সংযুক্ত করুন
বর্তমানে বাজারে এমন অনেক বাইক ট্র্যাকার আছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার বাইকের অবস্থান ফোনে দেখতে পারবেন। চুরি হলেও খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪. আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা কর্মীদের জানিয়ে যান
যদি বাইক ফেলে যাচ্ছেন, তাহলে নিরাপত্তা প্রহরীদের বিষয়টি জানিয়ে যান এবং প্রয়োজনে নাম-নম্বর লিখে রাখুন।
৫. গ্রামে রাখার সময় ঘরের ভেতরে বা তালাবদ্ধ জায়গায় রাখুন
অনেকেই উঠানে বা খোলা জায়গায় বাইক রাখেন। এতে করে রাতে বা ভোরে সহজেই বাইক সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। সম্ভব হলে ঘরের ভেতরেই রাখুন।
৬. বাইক কভার ব্যবহার করুন
অপরিচিত বাইক হলে চোরের আগ্রহ বাড়ে। বাইকে কভার দিলে বাইকের ব্র্যান্ড, মডেল, অবস্থা বোঝা যায় না। এতে চোরের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৭. স্থানীয় থানায় তথ্য দিন (প্রয়োজনে)
কোনো দুর্গম বা অপরিচিত গ্রামে গেলে বাইক রাখার আগে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প বা বিট পুলিশকে জানিয়ে রাখতে পারেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর তথ্যমতে, ঈদের সময় বাইক চুরির সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ে ২০–৩০% বেশি হয়ে থাকে। এর মধ্যে অধিকাংশই হয় গ্যারেজ বা বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগে।
করণীয় – যদি বাইক চুরি হয়-
সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করুন
বাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চেসিস নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর প্রস্তুত রাখুন
যদি জিপিএস ট্র্যাকার থাকে, তার অবস্থান তথ্য দিয়ে পুলিশকে সাহায্য করুন
সোশ্যাল মিডিয়া ও বাইকার কমিউনিটিতে বিষয়টি শেয়ার করুন
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে ইলেকট্রিক বাইক ও স্কুটার চালানো কি নিরাপদ?
ঈদের আনন্দের সময়টি যেন দুঃখে রূপ না নেয়, সে জন্য বাইক মালিকদের সতর্ক থাকা জরুরি। একটু সচেতনতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার আপনাকে রাখতে পারে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা। মনে রাখুন, বাইক শুধু বাহন নয়, আপনার পরিশ্রমের ফল।
এজেড

