images

নারী ও শিশু

সময়ের সাহসী যোদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:১৩ এএম

"রুবাইদা গুলশান ভয়ঙ্কর মেধাবী। সময়ের সাহসী যোদ্ধা।" এই বক্তব্য কবি আসাদ চৌধুরীর। অমর একুশে বইমেলা ২০১৮ সালের কথা। 'সেফটিপিন'-এর  মোড়ক উন্মোচনে আলো ঝলমলে এমন অনেক কিছুই বলেছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কবি।

রুবাইদা গুলশানের লেখালেখি নিয়ে আমার আজকের বক্তব্য সাহিত্য সমালোচনা নয়। তাঁর সামান্য পাঠক হিসেবে ভালোবাসা মাত্র। সমালোচনার নিপুণ যোগ্যতা, অভয় সাহস, দেখার মতো শক্তি-সামর্থ্য কিছুই আমার নাই। অ্যাকসিলেন্ট, বাহ চমৎকার, অসাধারণ, মাথা নষ্ট, দারুণ দারুণ, সাব্বাস, আপু যা লিখেন না!-- ফেসবুক-মোহ'র এই যুগে এসব মন্তব্যের বাইরেও অনেক মন্তব্য থাকে। বক্তব্য থাকে। কথা থাকে। আলোচনা-সমালোচনা থাকে। থাকে নানা দৃষ্টিভঙ্গি। 

প্রাণ দিয়ে বলি, শতভাগ বিশ্বাসের সাথে বলি-- আমাদের বিশ্বাসী নারীদের লেখালেখির ভুবনে কয়েকজন শক্তিমান সব্যসাচীর একজন রুবাইদা। তাঁকে এড়ানো যায়, উপেক্ষা করা যায় কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। ঈর্ষণীয় কলমযুদ্ধে তিনি জয়ীও হয়েছেন; বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক। এই কঠিন সময়ে, অব্যক্ত প্রতিযোগিতার যুগে এসব কথার কথা নয়। অসম্ভবও বটে। 

অল্প সময়ের লেখালেখিতে রুবাইদা গুলশানের অর্জন কম নয়। প্রকাশনার সাত বছরে তিনি সাতটি বইয়ের নিপুণ স্রষ্টা। অগণিত পাঠকের ব্যাপক ভালোবাসা, পরম স্নেহ, অতল শ্রদ্ধা এবং বিপুল সমর্থনও পাচ্ছেন তিনি। বইমেলায় একজন জ্যেষ্ঠ পাঠক ব্যাকুল কণ্ঠে বলেন, "মা, তুমি রুবাইদা গুলশান? তোমার লেখা আমি নিয়মিত পড়ি। আমি বারবার মুগ্ধ হই। মা, তোমাকে দেখে আমি মনে খু-উ-ব শান্তি পেলাম।" পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় এসে শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত ওই ভদ্রলোক এভাবেই তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তাঁর ভাষ্যমতে, শুধু লেখককে একনজর দেখার জন্যই মেলায় এসছেন তিনি। লেখকের জীবনে এসবই আশীর্বাদের জোসনা। ঊষর মরুভূমিতে ভালোবাসার বৃষ্টি।

ঈর্ষাকাতর সমাজে, 'টেনে ধরে নামানোর' যুগে অগ্রজদের অভয় রুবাইদা গুলশানকে অনেক অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। জটিল-কঠিন অনেক কিছু শিখিয়েছে। তাঁর লেখালেখির বন্ধুর ময়দানে এমন জোনাকিই হবে অতুল রসদ। সত্যিকারের জ্বালানি। 

আত্মপ্রচার, আত্মপ্রসার, আত্মপ্রেম, আত্মপ্রাপ্তি এবং আত্ম-শো-অফের ফ্রেমে বন্দি হয়ে আজকাল লিখতে পারি না আমরা। সত্যিকারের লেখা পাই না। 'লেখক' পাই মাত্র। লেখা না হলে নামেমাত্র লেখক দিয়ে কী হবে? এখানে রুবাইদার ভিন্নতা বেশ লক্ষ্যণীয়। তাঁর দুরন্ত টগবগে বজ্রকলমই তাঁকে আলাদা করার অন্যতম মাধ্যম। তাঁর লেখায় মানবতা, চেতনাবোধ, দেশপ্রেম, ধর্মপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা, প্রকৃতির নান্দনিকতা সমানভাবে প্রস্ফুটিত। তাঁর অসাধারণ ইসলামী চিন্তা-চেতনা, অনুসরণীয়-অনুকরণীয় দর্শন বিশ্বাসীদের পরমপ্রিয় আশ্রয়। 

রুবাইদা গুলশানের সহজ-সরল ভাষাভঙ্গিমা, ভনিতা ছাড়াই নিরেট সত্য প্রচারের মুন্সিয়ানা, তিতা কথাকে মিষ্টি করে উপস্থাপন করা, আল কুরান-আল হাদিসের ঐশী দ্যুতিকে অন্ধকারে ছড়িয়ে দেয়া তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস। সর্বোপরি তাঁর ইহজাগতিক সামান্য চাওয়া-পাওয়ার অসামান্য অনীহা তাঁকে 'চির উন্নত মম শির'সম প্রতিষ্ঠা দেবে বলে বিশ্বাস করি। সময়ই সেটা বিচার করবে। 

২০১৬ সালে রুবাইদা গুলশানের উপন্যাস ‘অন্তরালে বর্ণফুল’ প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সালে কবিতার বই ‘বিভ্রমে নীলাম্বরী’, ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ ‘সেফটিপিন’। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় ছোটগল্পের বই ‘অরণ্যের গুঞ্জন’। ২০২০ সালে কাব্যগ্রন্থ ‘স্পর্শের ঘ্রাণ’ এবং জীবনমুখী লেখা 'আঁধারের আলপনা' প্রকাশিত হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় মুক্তগদ্য 'তিতা কথা'।

'সেফটিপিন' বইটির জন্য রুবাইদা গুলশান ২০১৮ সালে নজরুল একাডেমি শেখ ফজলল করীম সাহিত্য সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত 'অরণ্যের গুঞ্জন'- এর জন্য লাভ করেন ঢাকার আসওয়াম ফাউন্ডেশন সম্মাননা।

রুবাইদার জন্ম ঠাকুরগাঁওয়ে। পৈতৃক নিবাস যশোরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতকোত্তর তারুণ্যের এই আইকন। সদা হাস্যোজ্বল মিষ্টিমুখ রুবাইদা গুলশানের আজ জন্মদিন (১৫ সেপ্টেম্বর)। জন্মদিনে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা। অজস্র শুভকামনা। শুভ জন্মদিন, গুলশান দ্য গ্রেট।