ঢাকা মেইল ডেস্ক
০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
অক্টোবরে বিশ্বব্যাপী ‘পিঙ্ক মান্থ’ বা স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়। এ উপলক্ষে শনিবার (৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ‘আমরা নারী’ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর যৌথ উদ্যোগে ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার ও আলোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. লায়লা শিরিন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন একই হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. খাদেমুল বাশার।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা উপকমিটির আহ্বায়ক এ কে এম মহসিন, কোষাধ্যক্ষ বখতিয়ার রানা, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহনাজ পলি ও মাসুমুর রহমান খলিলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্যসেবা উপকমিটির সদস্য মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান।
অধ্যাপক ডা. লায়লা শিরিন বলেন, ‘স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হলো সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিজের প্রতি যতœশীল থাকা। প্রতিটি নারী যদি নিজের শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কে সচেতন হন, তাহলে উপকৃত হবে পুরো পরিবার ও সমাজ।’
ডা. মো. খাদেমুল বাশার বলেন, ‘ক্যানসারমুক্ত সমাজ গড়তে শিক্ষার্থীদের মধ্যেই স্বাস্থ্য সচেতনতার বীজ বপন করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন থেকেই সামাজিক আন্দোলনের সূচনা করা জরুরি।’
‘আমরা নারী’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী এম এম জাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘আমরা নারী একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন, যা নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসুরক্ষা, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নারীর অধিকার, নিরাপদ খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সচেতনতা বিষয়ে গবেষণাভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সচেতনতার দূত হিসেবে গড়ে তোলা।’
‘আমরা নারী’র এক্সিকিউটিভ সদস্য রোখসানা আক্তার রূপী বলেন, ‘স্তন ক্যানসার একটি প্রতিরোধযোগ্য বাস্তবতা। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার অর্ধেকের বেশি সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় মারা যান। অথচ নিয়মিত আত্মপরীক্ষা, সচেতনতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘স্তন ক্যানসার তখনই সৃষ্টি হয়, যখন স্তনের কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত পরীক্ষা ও সচেতনতা বজায় রাখলে সহজেই শনাক্ত ও নিরাময় সম্ভব।’
ঝুঁকির কারণ ও প্রতিরোধ
বয়স, বংশগত ইতিহাস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, মানসিক চাপ ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং নিজের প্রতি যত্নশীলতা এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
গণমাধ্যমের ভূমিকা
স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আত্মপরীক্ষা, সচেতনতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মিডিয়া ভয় ও সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে, প্রাথমিক শনাক্তকরণে উৎসাহ দিতে এবং নীতিনির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপে প্রভাব রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা মত দেন যে, স্তন ক্যানসার শুধু একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এটি এক সামাজিক চ্যালেঞ্জ— যা সম্মিলিত সচেতনতা ও মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমেই মোকাবিলা করা সম্ভব।
এনএম