images

নারী ও শিশু

উইমেন্স ভয়েস অ্যান্ড লিডারশীপ সম্মেলনে সাফল্যের গল্প বললেন নারীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ পিএম

‘উইমেন্স এম্পাওয়ারমেন্ট: উইমেন্স ভয়েস অ্যান্ড লিডারশীপ বাংলাদেশ প্রজেক্ট’- শীর্ষক সম্মেলনে তৃনমূলের নারী সংগঠকসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর লোকজন তাদের ব্যক্তিদের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো শোনালেন। তারা জীবনের সকল প্রতিকূলতা, আকাঙ্ক্ষা ও অর্জনের গল্প বলার পাশাপাশি তাদের সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বুধবার (৯ অক্টোবর) র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ‘উইমেন্স এম্পাওয়ারমেন্ট: উইমেন্স ভয়েস অ্যান্ড লিডারশীপ বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ শিরোনামে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রকল্পটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়ন ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করছে। উইমেন্স ভয়েস অ্যান্ড লিডারশীপ প্রকল্পের ফলাফলগুলো তুলে ধরা হয় এই সম্মেলনে। এই প্রকল্পটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার নেয়া একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ।

সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার মধ্যে স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠনগুলিকে অনুদান প্রদান এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাতে তারা তাদের এলাকার প্রান্তিক এবং ঝুঁকির সম্মুখীন নারী ও মেয়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে।

প্রকল্পটির কার্যকলাপগুলোর মধ্যে রয়েছে— ১. নির্বাচিত স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠনগুলোকে বহুবর্ষী অর্থায়ন প্রদান করা; ২. বহুবর্ষী অর্থায়নের জন্য নির্বাচিত সংগঠনগুলোর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা; ৩. নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক এবং জোট শক্তিশালী করা; এবং ৪. গৃহীত বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা, সুযোগ ও বিচ্ছিন্ন কর্মকান্ডগুলোকে একত্রিত করে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের নিমিত্ত স্থানীয় সংগঠনগুলোর জন্য ক্ষুদ্র স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন। প্রকল্পটির সময়কাল ছিল ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ। দেশের ২০টি জেলায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান, কানাডা দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ডেবরা বয়েস এবং ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

ফরিদা আখতার তৃনমূল থেকে আসা নারীদের গল্পের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, এসব নারীদেরকে সামনে আনার প্রয়োজন আছে। যদি মানুষের বিভিন্নতা অনুযায়ী সমস্যাগুলো সমাধান না করে শুধুমাত্র একক উপায়ে নারীদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হয় তবে তা বৈষম্য দূর করতে যথেষ্ট নয়।

তিনি আরও জানান, নারী-শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে স্কুলগুলোতে সুষম টিফিন নিশ্চিত করা দরকার, যা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে তিনি কাজ করছে।

শক্তভাবে বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ নারী ও শিশু পাচারের পিছনে অন্যতম কারণ। যার যার অবস্থান থেকে এগুলো রুখে দাঁড়ানো উচিত।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘আমার কাছে মানুষের সমঅধিকারে প্রতি সকলের বিশ্বাসই হল নারীবাদ। পুরুষকে আমাদের এই জেন্ডার সমতায়নের যাত্রায় সহযাত্রী হিসাবে গণ্য করতে হবে।’

মো. সাইদুর রহমান বাল্যবিবাহ উচ্চশিক্ষায় নারীদের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ এবং বাল্যবিবাহ রোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি বলেন, নারী এবং পুরুষ একে অপরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

সম্মেলনের আরেক বিশেষ অতিথি, ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী তার বক্তব্য শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া, আহত এবং নিহত হওয়া নারীদের স্মরণ করার মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণ আর অংশীদারিত্ব এক নয়। বর্তমানে অনেক অংশগ্রহণকারী নারী আছেন। কিন্তু তাদের অংশীদারিত্ব কতটুকু? আমাদেরকে সমতা এবং ন্যায্যতা আলাদাভাবে বুঝতে হবে। যদি এটি স্পষ্ট না হয়, নারী ক্ষমতায়ন সঠিকভাবে বোঝা এবং নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাবে।

কানাডা দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ডেবরা বয়েস বলেন, তৃনমূলের নারী নেত্রীদের ভূমিকা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলার মাধ্যমেই নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের বিরোধিতা করতে হবে যা আমরা সাম্প্রতিক সময় থেকে শিক্ষা নিতে পারি। কারণ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়তে চাইলে একসাথে আওয়াজ তোলার বিকল্প নেই।

বিইউ/এমএইচটি