তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
ফেসবুকে লিংক শেয়ার করার নিয়মে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পরীক্ষা চালাচ্ছে মেটা। নতুন এই পরীক্ষায় প্রফেশনাল মোড ব্যবহারকারী ও ফেসবুক পেজের জন্য লিংক পোস্টের সংখ্যা সীমিত করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সীমার বেশি লিংক শেয়ার করতে চাইলে ব্যবহারকারীদের নিতে হবে মেটা ভেরিফায়েড সাবস্ক্রিপশন, যা অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি একাধিক ব্যবহারকারী ফেসবুকে এই পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষক ম্যাট নাভারা প্রথম বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। তার মতে, পরীক্ষার আওতায় থাকা ব্যবহারকারীরা বর্তমানে সর্বোচ্চ চারটি লিংক পোস্ট করতে পারছেন। এর বেশি লিংক শেয়ার করতে চাইলে মাসে ১৪ দশমিক ৯৯ ডলার খরচ করে মেটা ভেরিফায়েড সাবস্ক্রিপশন নিতে হচ্ছে।
মেটার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য
মেটা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ–কে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এটি একটি সীমিত পরিসরের পরীক্ষা। আপাতত এই পরীক্ষা কেবল প্রফেশনাল মোড ব্যবহারকারী ও ফেসবুক পেজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

প্রফেশনাল মোড ব্যবহার করে সাধারণ ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রোফাইলকে কনটেন্ট নির্মাতা অ্যাকাউন্টে রূপান্তর করতে পারেন। এর ফলে পোস্ট বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ থাকে। তবে নতুন এই পরীক্ষায় সেই ব্যবহারকারীরাই পড়ছেন বাড়তি চাপে।
মেটার এক মুখপাত্র বলেন, ‘লিংকসহ বেশি সংখ্যক পোস্ট করার সুবিধা মেটা ভেরিফায়েড গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত মূল্য যোগ করে কি না, তা বোঝার জন্যই এই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।’
কোন লিংকে বাধা নেই?
সব ধরনের লিংকের ওপর এই সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়নি। মেটার তথ্য অনুযায়ী—
মন্তব্যে এখনো লিংক দেওয়া যাবে
অ্যাফিলিয়েট লিংকের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের ভেতরের পোস্টের লিংক শেয়ার করা যাবে
এছাড়া আপাতত সংবাদমাধ্যম বা প্রকাশকদের এই পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি বলে জানিয়েছে মেটা।

কনটেন্ট নির্মাতা ও ব্র্যান্ডদের উদ্বেগ
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে পারে কনটেন্ট নির্মাতা, ব্র্যান্ড ও ব্লগারদের ওপর। বিশেষ করে যারা নিয়মিত বাইরের ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করে পাঠক বা ট্রাফিক বাড়ান, তাদের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
মেটার সর্বশেষ ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক ফিডে মোট ভিউয়ের ৯৮ শতাংশের বেশি আসে লিংকবিহীন পোস্ট থেকে। লিংকযুক্ত পোস্ট থেকে আসে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ ভিউ। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিসংখ্যানই মেটাকে নতুন এই পরীক্ষার দিকে এগোতে উৎসাহিত করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি শেয়ার হওয়া লিংকের তালিকায় ইউটিউব ও টিকটক শীর্ষে রয়েছে।
বাইরের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কমার আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সীমা স্থায়ী হলে কনটেন্ট নির্মাতারা বাধ্য হবেন মেটার নিজস্ব প্ল্যাটফর্মেই কনটেন্ট প্রকাশ করতে। নইলে সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে। এর ফলে বাইরের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে ফেসবুকের ক্ষতিকর কনটেন্ট সরাতে সরকারের চিঠি
এরই মধ্যে অনেক প্রকাশক অভিযোগ করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–এর প্রভাবের কারণে তাদের ওয়েবসাইটে পাঠক কমছে। নতুন এই নীতি সেই সংকটকে আরও বাড়াতে পারে।
এর আগে এক্সসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকযুক্ত পোস্টের গুরুত্ব কমিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মেটার এই নতুন পরীক্ষা সেই প্রবণতাকেই আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
এজেড