তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
২২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেন ‘কোনো কম্পন টের পাইনি’। কেউবা লেখেন ‘ভূমিকম্পের ঘণ্টাখানেক আগে ঘুম থেকে উঠেছিলাম, কিন্তু কিছুই অনুভব করিনি’ ইত্যাদি। তবে একই সময় একই স্থানে থাকা সত্ত্বেও সবাই ভূমিকম্প অনুভব করে না। এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক বেশ কিছু কারণ।
অনুভূতির পার্থক্য কেন হয়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপনি যে তলায় আছেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। উপরের তলায় থাকলে ঝাঁকুনি অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি, নিচের তলায় কম।’
আরও পড়ুন: আজকের ভূমিকম্প কত মাত্রায় হয়েছে?
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু মানুষ গতি বা কম্পনের প্রতি খুব সংবেদনশীল। যারা সংবেদনশীল না, তারা ভূমিকম্প অনুভব করতে পারে না। যেমন, যারা উচ্চতা বা মোশনের প্রতি কম সংবেদনশীল, তারা কম্পনও কম টের পায়।’
ড. হোসেন আরও জানান, ব্যক্তির অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। চলাফেরা করলে কম্পন কম টের পাওয়া যায়। রান্না করা, দৌড়ানো বা হাঁটার সময় কম্পন কম অনুভূত হয়। আর চুপচাপ বসে থাকলে ঝাঁকুনি বেশি টের পাওয়া যায়।

ভূমিকম্প কেন হয়?
পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ টেকটোনিক প্লেট দিয়ে তৈরি, যা নরম উপরের স্তরের ওপর ভাসছে। এই প্লেটগুলো সরতে বা ধাক্কা দিতে দিতে ইলাস্টিক এনার্জি জমা হয়। যখন জমা শক্তি শিলার ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়, তখন শক্তি ফাটলের মাধ্যমে ছুটে আসে এবং ভূ-পৃষ্ঠে কম্পন সৃষ্টি হয়—যা আমরা ভূমিকম্প হিসেবে অনুভব করি।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের পর আফটার শক কেন হয়?
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের অন্যতম উৎস হলো ডাউকি ফল্ট, যা শেরপুর থেকে জাফলং হয়ে ভারতের করিমগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া মিয়ানমার, চীন, ভারত ও নেপালের কিছু ফল্ট লাইনের কাছাকাছি থাকায় দেশের ভূমিকম্পপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

ভূমিকম্প কীভাবে পরিমাপ করা হয়?
ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপের জন্য মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেল ব্যবহার করা হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রাচীন রিকটার স্কেলকে প্রতিস্থাপন করেছে।
২.৫ বা তার কম: সাধারণত মানুষ টের পায় না, তবে যন্ত্রে ধরা যায়
৫ মাত্রা: সামান্য ক্ষতি হতে পারে
আরও পড়ুন: দুর্যোগের সময় নিজেকে ফেসবুকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করার উপায়
৭.৮ মাত্রা: শক্তিশালী, মারাত্মক ক্ষতি সম্ভাব্য
৮ বা তার বেশি: ভয়াবহ ক্ষতি, কেন্দ্রে অবকাঠামো ধ্বংস হতে পারে
বৃহৎ ভূমিকম্প সাধারণত ঘটে সাবডাকশন জোনে, যেখানে একটি ভারী প্লেট অন্য প্লেটের নিচে প্রবেশ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রায় ৮০০–৯০০ বছর।

ভূমিকম্প অনুভব না করার কারণ মূলত নির্ভর করে—
আপনার অবস্থান (উচ্চতা, স্থলভাগ)
সংবেদনশীলতা বা সেনসিটিভিটি
শারীরিক কার্যকলাপের অবস্থা (বিশ্রাম, চলাফেরা, রান্না ইত্যাদি)
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের ফেক ছবি-ভিডিও দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা!
সর্বশেষে, বাংলাদেশ মাঝারি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও প্রতিবেশি দেশের ভূমিকম্পও ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তাই সচেতন থাকা এবং প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।
এজেড