images

তথ্য-প্রযুক্তি

টমাহক মিসাইলের নাম এখনো কেন মুখে মুখে?

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

২২ জুন ২০২৫, ০২:৫২ পিএম

টমাহক মিসাইলের নাম আজও বিশ্বজুড়ে আলোচিত। কেননা,  এটি আধুনিক যুদ্ধে নির্ভুলতা, দীর্ঘ পাল্লা এবং বাস্তব প্রয়োগে সফলতা—এই তিনটি গুণের এক অনন্য মিশ্রণ। যুদ্ধক্ষেত্রে বহুবার পরীক্ষিত ও ব্যবহৃত হওয়ায় এটি কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

এই মিসাইল প্রথম আলোচনায় আসে ১৯৯১ সালে, উপসাগরীয় যুদ্ধে (Gulf War) ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যখন লক্ষ্যবস্তুর ওপর নির্ভুলভাবে আঘাত হানে। এরপর আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে টমাহকের ব্যবহার হয়েছে এবং প্রতিবারই এটি চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। এর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো—দূর থেকে উৎক্ষেপণ করেও এটি লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে এবং যুদ্ধজাহাজ বা সাবমেরিন থেকেই চালানো সম্ভব, যা শত্রুর জন্য অপ্রত্যাশিত।

laucnhe

টমাহক মিসাইল 

টমাহক মিসাইল খুব কম উচ্চতায় মাটি ঘেঁষে উড়ে যেতে পারে, ফলে রাডারেও ধরা পড়ে না সহজে। এই ‘স্টিলথ’ বৈশিষ্ট্য একে আরও ভয়ানক করে তোলে। এছাড়াও, প্রযুক্তিগতভাবে এটি বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা গ্রহণ করতে পারে—যেমন জিপিএস, টেরেইন মানচিত্র, ইনফ্রারেড ছবি মিলিয়ে পথ খুঁজে নেয়, এবং এমনকি মাঝপথে নতুন লক্ষ্যবস্তু দেওয়া হলেও নিজে নিজেই সেটি চিনে ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন: ক্লাস্টার বোমা কী, কেন বিতর্কিত এই অস্ত্র?

বর্তমান বিশ্বে যখন মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের মতো যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে, তখন সংবাদমাধ্যমে টমাহক মিসাইলের নাম নতুন করে আলোচনায় আসে। কারণ এই মিসাইল এখনো আধুনিক যুদ্ধের জন্য কার্যকর এবং আপডেটেড সংস্করণ (যেমন ব্লক ফোর, ব্লক ফাইভ) এখনো তৈরি ও ব্যবহার হচ্ছে।

missile_pic2

সব মিলিয়ে, টমাহক শুধু একটি অস্ত্র নয়—এটি আধুনিক যুদ্ধ প্রযুক্তির এক প্রতীক। বাস্তব যুদ্ধের ময়দানে দীর্ঘ ইতিহাস, সুনাম ও কার্যকারিতার জন্যই এর নাম আজও মুখে মুখে ফিরছে।

টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত ক্রুজ মিসাইল হিসেবে এর খ্যাতি রয়েছে। এটি মূলত যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন অথবা স্থলভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়। উৎক্ষেপণের সময় মিসাইলটি প্রথমে একটি শক্তিশালী রকেট বুস্টারের সাহায্যে শূন্যে উঠে যায়। এরপর নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে বুস্টার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মিসাইলের নিজস্ব টার্বোফ্যান ইঞ্জিন চালু হয়। তখন এটি কম উচ্চতায়, মাটি ঘেঁষে উড়তে থাকে—যা শত্রুপক্ষের রাডার এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কার্যকর।

missile_pic25

টমাহক মিসাইলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর অত্যন্ত উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম। এতে ইনর্শিয়াল গাইডেন্স ( আইএনএস), জিপিএস ( জিপিএস), টেরেইন কনটোর মিলান (টেরকম), এবং ডিজিটাল সিনিয়ার মিলান (ডিএসএমএসি) প্রযুক্তি একত্রে ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তিগুলো মিলে মিসাইলটিকে নির্ভুলভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং প্রয়োজনে মাঝপথেই দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম করে তোলে। লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি পৌঁছানোর পর মিসাইলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য শনাক্ত করে এবং আঘাত হানে।

weapon

একটি টমাহক মিসাইলের ওজন প্রায় ১৩০০ কেজি বা ১.৩ টন। এটি প্রায় ৫.৬ মিটার লম্বা এবং এতে ৪৫০ কেজি ওজনের বিস্ফোরক ওয়ারহেড থাকতে পারে। টমাহক মিসাইল সাবসনিক গতি—প্রায় ৮৮০ কিমি প্রতি ঘণ্টা—তেও উড়তে সক্ষম এবং এর সর্বোচ্চ পাল্লা প্রায় ১৬০০ থেকে ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি মূলত শত্রুর স্থলভিত্তিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। একটি টমাহকের দাম প্রায় ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো।

এজেড