আসাদুজ্জামান লিমন
১২ আগস্ট ২০২৩, ০১:৩১ পিএম
ফোনটি হাতে নিলেই একটি প্রিমিয়াম ফিল পাওয়া যাবে। হাতের তালুতে নিয়ে কব্জি ঘোরালেই অবাক হবেন। প্রথমেই চোখে পড়বে গোলাকার দুইটি ক্যামেরা মডিউল। যার ভেতরে উঁকি দিচ্ছে তিনটি ক্যামেরা। পাশে আরেকটি গোলাকার বৃত্তে এলইডি ফ্ল্যাশগান। যার ডিজাইন অন্যসব ফোন থেকে অনেকটাই আলাদা। এই রিং লাইটটি ভালোভাবে চাক্ষুষ করার জন্য ফোনটি চোখের কাছাকাছি আনতেই নজরে আসবে লাইটিং মডিউলটি। যার মধ্যে চারটি এলইডি সাদা বৃত্তে কালো একটি বিন্দুকে ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এসব তো গেল ক্যামেরা ও এর আশেপাশের আনুষঙ্গিক ফিচারের কথা। আসল যে জিনিসটা আপনার মনোযোগ করবে সেটা হলো, ফোনটির রিয়ারের ডায়মন্ড কাট ক্রিমাত্রিক শেপ। যা থেকে আলো প্রতিফলিত হয়। ফোনের পেছনের এই অনবদ্য ডিজাইন ফোনটিকে করে আলাদা এবং আকর্ষণীয়। হ্যান্ডসেটটির বাদবাকি ফিচার যেমনই হোক না কেন, একজন ক্রেতা এই ডিজাইন থেকেই ডিভাইসটি হাতে নিতে বাধ্য হবেন।
বলা হচ্ছে সম্প্রতি বাজারে আসা স্মার্টফোন টেকনো ক্যামন ২০ প্রো মডেল সম্পর্কে।
আবার ডিজাইনে ফেরা যাক, টেকনোর ক্যামন সিরিজের এই মোবাইল ফোনের ডিজাইন চারপাশটা চৌকো ধরনের। তবে চারটা কোণাই ধনুকের মতো বাঁকানো। যা হাতে ভালো গ্রিপ দেয়। তবে এর সঙ্গে ভালো মানের স্ক্রিন প্রটেক্টর না লাগালে ফোনটি হাতের তালুকে ঘোরালে স্ক্রিন প্রটেক্টরের অস্তিত্ব জানান দেয়। প্রটেক্টরের ধারালো অংশগুলো গ্রিপের সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ডিসপ্লের আয়তন অনুযায়ী সঠিক আকারের প্রটেক্টর লাগালে আশা করি অমসৃণ অনুভূতি হবে না।
ডিসপ্লের কথা যখন উঠল তখন জানিয়ে দেই এর আকার। টেকনো ক্যামন ২০ প্রো মডেলে রয়েছে ৬.৬৭ ইঞ্চির অ্যামোলিড ডিসপ্লে। ১২০ হার্জের এই ডিসপ্লের স্ক্রিন টু বডি রেশিও ৮৫.৭ শতাংশ। ডিসপ্লের শার্পনেস ভালোই। প্রখর রোদে ব্রাইটনেস বাড়িয়ে ডিসপ্লের সব কিছুই রিডিং করা যায়। আবার ঘুটঘুটে অন্ধকারে আলো কমিয়ে নিয়ে চোখের জন্য সহনশীল করা যায়। আর এসব করার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। এজন্য অ্যাডাপ্টিভ ডিসপ্লে অন করে রাখলেই হবে। লাইট সেন্সর নিজেই বুঝে নিবে কখন ব্রাইননেস বাড়াতে হবে কখন কমাতে হবে।
ডিসপ্লের ঠিক উপরের ভাগে ছোট্ট একটি কালো বৃত্তের মধ্যে রয়েছে সেলফি ক্যামেরা। ওয়াটার ড্রপেই সেলফি ক্যামেরা। তাই নচের মতো ডিসপ্লের খানিকটা জায়গা নষ্ট করেনি। বলা যায় ডিসপ্লের প্রতিটি অংশ ব্যবহৃত হয়েছে।
ফ্রন্ট শ্যুটারের উপরে একটু পাশে রয়েছে স্পিকার। যা বোঝা যায় তিনটি ছিদ্র দেখে। এমন স্পিকার রয়েছে নিচে ডান পাশেও। সেখানে অবশ্য ছয়টি ছিদ্র রয়েছে। দুইটি স্পিকার দেওয়ার ফলে এই ফোন থেকে সুরেলা, স্পষ্ট শব্দ পাওয়া যাবে এটা নিশ্চিত করা বলা যায়।
বাম পাশে সিম কার্ড ও স্টোরেজ বাড়ানোর ট্রে। ট্রে বের করার জন্য ছোট একটি ছিদ্র রয়েছে। ছিদ্রে চিকন ধাতব ইজেক্টর পিন দিয়ে হালকা গুতা দিতেই ট্রে বের হয়ে আসে। সেখানে দেখা যায়, এক পাশে
দুইটি মাইক্রো সিম কার্ড রাখা যাবে। অন্য পাশে একটি মাইক্রো এসডি কার্ড। জানিয়ে রাখি এই ফোনটি কয়েকটি স্টোরেজ ভার্সনে পাওয়া যায়। আমাদের হাতে যে ফোনটি এসেছিল সেটি ৮ জিবি র্যাম ও ২৫৬ জিবি স্টোরেজের। চাইলে স্টোরেজ আরও বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
অন্যান্য ফোনের মতো ডান পাশে রয়েছে পাওয়ার বাটন এবং দুইটি ভলিউম রকার। রকার দুইটির নিচেই একটু বড় আকারে দেওয়া এই পাওয়ার বাটন যা লক-আনলক বাটন হিসেবেও কাজ করে।
এছাড়াও ফোনটিকে সচল রাখার জন্য নিচের অংশে রয়েছে ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট, মাইক্রোফোন হোল এবং ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক।
এতো গেল টেকনো ক্যামন ২০ প্রো ফোনের বাইকের চাকচিক্য। এবার ফোনটি চালু করে ভেতরে ঢোকা যাক। পাওয়ার বাটন দুই থেকে তিন সেকেন্ড চেপে ধরলে ফোন চালু হতে শুরু করে। ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠে টেকনোর ব্র্যান্ডিং এব অ্যানড্রয়েডের নাম। যদি আমার কাছে মনে হয়েছে ফোনটি চালু হয়ে লোড হতে প্রায় একমিনিট সময় লাগে। যা কিছুটা বিরক্তিকর বটে। আপনি তো আর ঘনঘন ফোন অন-অফ করবেন না, তাই বুট লোডিং হওয়ার এই ঝক্কি প্রতিদিন পোহাতে হবে না।
ডিসপ্লে স্পর্শ করে ওপর নিচে টানতেই বেশ কিছু উইজার্ড চোখে পড়ে। এখানেই রয়েছে সেটিংসে প্রবেশ করার মেন্যু। সেটিংসে ঢুকে মাই ফোনে ট্যাপ করলাম। সেখানে গিয়ে চোখে পড়ল ফোনটির কনফিগারেশন। এই ফোনে চলছে অ্যানড্রয়েড ১৩ ভার্সনে। সঙ্গে আছে টেকনোর কাস্টমাইজড অপারেটিং সিস্টেম হাইওএস ১৩।
কনফিগারেশনের কথা যখন উঠলই তখন প্রসেসরের মডেল জানিয়ে দেই। এই ফোনে রয়েছে মিডিয়াটেকের হেলিও ৯৯ প্রসেসর। এটি একটি মিড রেঞ্জের গেমিং প্রসেসর। এতে আছে দুইটি এআরএম কর্টেক্স-এ৭৬ প্রসেসর। যার ক্লক স্পিড ২.২ গিগাহার্জ।
গেমিং প্রসেসর হওয়ার কারণে এই ফোন দিয়ে গেমস খেলে মজা পাওয়া যাবে। আমরা মধ্যম মানের কয়েকটি গেমস চালিয়ে দেখেছি, তেমন ল্যাগিং পাইনি। কেননা, ভালো প্রসেসরের পাশাপাশি ফোনটিতে র্যামও দেওয়া হয়েছে অধিক। এতে আছে ৮ জিবি ফিজিক্যাল র্যাম। চাইলে ৫ জিবি ভার্চুয়াল র্যাম স্টোরেজ থেকে ব্যবহার করা যাবে। ভার্চুয়াল র্যাম ফিজিক্যাল র্যামের মতো কাজ না করলেও বাড়তি সুবিধা দেবে।
স্টোরেজের কথা তো আগেই বললাম টেকনোর নতুন এই ফোনে ২৫৬ জিবি স্টোরেজ দেওয়া হয়েছে। বাড়তি স্টোরেজ ব্যবহারের সুবিধা তো থাকছেই।
ক্যামেরার প্রসঙ্গে আসা যাক। ক্যামন সিরিজের ফোন বরাবরই ক্যামেরাকেন্দ্রীক। ২০ প্রো মডেলেও ভালো ক্যামেরা ব্যবহার হয়েছে। এতে ৬৪ মেগাপিক্সেলের মেইন রিয়ার ক্যামেরা এবং ৩২ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে বলেছিলাম রিয়ারে তিনটি ক্যামেরার কথা। এআই ফিচার সমৃদ্ধ আরজিবিডব্লিউ ৬৪ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ছাড়াও এই ফোনে ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ সেন্সর এবং একটি এআই সেন্সর।
ক্যামেরা ছবি কেমন ওঠে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়। মোটামুটি। খুব যে ভালো, আবার খুব যে খারাপ তাও না। তবে এআই ফিচারটি চমৎকার। ধরুন আপনি প্রকৃতির ছবি তুলছেন, এই সময় আপনার এক বন্ধু বললেন তার পোর্ট্রেট তুলে দিতে। আপনার কষ্ট করে বারবার ক্যামেরার মোড পরিবর্তন করতে হবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাবজেক্ট বুঝে তার মতো করে মোড পরিবর্তন করে নেবে।
ফোনটির সেলফি ক্যামেরা ৩২ মেগাপিক্সেলের হলেও লো লাইটে আশানুরূপ সাড়া দিতে পারেনি। এছাড়াও এই ক্যামেরা ইনডোরের চেয়ে আউটডোরে ভালো পারফরমেন্স দিয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে রিয়ার ক্যামেরার ক্ষেত্রেও।
তাই যারা আউটডোর ফটোগ্রাফি করবেন তাদের জন্য এই ক্যামেরাটি বাড়তি সুবিধা দেবে। কিন্তু ইনডোরে লো লাইটে ভালো ছবি তুলতে হলে হয় ভালো আলো পেতে ক্যামেরার সেটিংসে বদল আনতে হবে, না হয় বাড়তি আলো যোগ করতে হবে।
টেকনোর মিডরেঞ্জের এই ৫জি ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ কিন্তু দুর্দান্ত। ডিভাইসটিতে ৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি রয়েছে। এই ব্যাটারির চার্জ দেওয়ার জন্য থাকছে ৩০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার। ডিভাইসটি চার্জ ফুল চার্জ দিতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টার কিছু বেশি।
ফোনটির বিশেষ কিছু ফিচার সম্পর্কে সংক্ষেপে জানিয়ে দেই, এই ফোনে বিল্টইন স্ক্রিন শট, রেকর্ড নেওয়ার সুবিধা। পাবেন ব্যাটারি পাওয়ার বুস্টার, ডার্ক থিম, আইকেয়ার, ডু নট ডিস্টার্ব, ট্রান্সলেটর, পিসি কানেকশন, এনএফসি, নিয়ারবাই শেয়ার ইত্যাদি। এসব আপনাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।
যারা সাশ্রয়ী দামে স্ট্রাইলিশ ফোন দিয়ে ঘুরতে চান তারা কিনতে পারেন টেকনো ক্যামন ২০ প্রো মডেলটি। ৮ জিবি র্যাম এবং ২৫৬ জিবি স্টোরেজের এই মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট কিনতে আপনাকে খরচ করতে হবে ২৪ হাজার ৯৯০ টাকা। র্যাম, স্টোরেজ, ক্যামেরার মেগাপিক্সেল, হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেমের হিসাব ধরলে এই দাম ঠিকই আছে। তবে এই দামে আরও একটু ভালো ক্যামেরা আশাই করতে পারেন টেকনো ভক্তরা।
এজেড