তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
০২ জুলাই ২০২৩, ০১:১৯ পিএম
বর্তমানে স্মার্টফোন একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগাযোগের মাধ্যম থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ও কর্মক্ষেত্রের নানা প্রয়োজনে এটি লাগেই। তবে কোন মোবাইল ফোনটি কেনা উচিত তা নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকেন অনেকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি।
মোবাইলের ডিজাইন ও ওজন
যেকোনো জিনিসের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় এর ডিজাইনরে মাধ্যমে। মোবাইলের ক্ষেত্রেও এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত মোবাইল যত বড় হয় তার ওজনও বেশি হয়। অনেকেই ভারি মোবাইল ফোন বহন করতে চান না। তাই নিজের ব্যক্তিগত রুচি এবং চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন ও ওজন পছন্দ করাই শ্রেয়।
মোবাইলের ডিসপ্লে বা পর্দার আকার
যেকোনো মোবাইল জন্যই ভালো মানের ডিসপ্লে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বাজারে বেশিরভাগ স্মার্টফোনের ৫-৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে দেখতে পাওয়া যায়। আপনি যদি বেশি ভিডিও দেখাতে বা গেম খেলতে পছন্দ করেন তবে বড় আকারের ডিসপ্লে নেওয়া উচিত। তবে ৪.৫ থেকে ৫.৫ ইঞ্চির ছোট পর্দার মোবাইলগুলো সহজে বহন করার যায়।

ডিসপ্লের অ্যাসপেক্ট রেশিও
মূলত ফোনের পর্দার আকার বা স্ক্রিন সাইজের লম্বা আর চওড়ার বিষয়টিকে অ্যাসপেক্ট রেশিও বলা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ স্মার্টফোনের অ্যাসপেক্ট রেশিও হচ্ছে ২০:৯। আগে যা ছিল ১৬:৯।
প্যানেল টাইপ
বর্তমানে ফোনের প্যানেল টাইপের মধ্যেই আছে এলসিডি, টিএফটি, আইপিএস, এমোলেড, সুপার এমোলেডসহ বেশ কয়েকটি ডিসপ্লে প্যানেল। প্যানেল টাইপের উপরই ডিসপ্লের কালারসহ অন্যান্য বিষয় নির্ভর করে। এলসিডি থেকে ওলেড ডিসপ্লে প্যানেল বেশি ভালো হয় । তবে স্মার্টফোনটির দামের উপরও এটি কিছুটা প্রভাব ফেলে। ডিসপ্লে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ডিসপ্লে পিপিআই এর বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
টাচ স্ক্রিন
ডিসপ্লের ক্ষেত্রে আরেকটি অন্যতম বিষয় এটি। বর্তমান তিন ধরনের টাচ স্ক্রিন সমৃদ্ধ ফোন পাওয়া যায়। এগুলো হলো- শুধু টাচস্ক্রিন, ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন এবং মাল্টি-টাচস্ক্রিন। এর মধ্যে মাল্টি -টাচস্ক্রিন।

প্রসেসর
স্মার্টফোনের প্রাণ হচ্ছে প্রসেসর বা চিপসেট। স্মার্টফোনে যত বেশি শক্তিশালী প্রসেসর থাকবে ফোন তত বেশি স্মুথলি রান করবে। আর, ক্লক স্পিড, কোর সংখ্যাসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর একটি প্রসেসরের পারফরম্যান্স নির্ভর করে। তাই মোবাইলের ভালো পারফরম্যান্স জন্য উন্নত প্রসেসর নির্বাচন করা উচিত।
বর্তমানে স্মার্টফোনের জন্য প্রসেসর তৈরি করছে কোয়ালকম, মিডিয়াটেক, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অ্যাপল, ইন্টেলসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি। ব্যবহারকারীদের বিচারে মিডিয়াটেক এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন পারফরমেন্স বিচারে এগিয়ে আছে।
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৬০, ৭১২, ৭৩০, ৮৩৫, ৮৪৫, ৮৫৫, ৮৬৫;
স্যামসাং এর এক্সিনস ৮৮৯০,৮৮৯৫, ৯৮১০, ৯৮২০,৯৮২৫;
মিডিয়াটেক হেলিও পি৯৫, পি৯০, পি৭০, এক্স৩০ ইত্যাদি বর্তমানে খুব ভালো মানের প্রসেসর। তবে শুধু নিজেদের স্মার্টফোনে ইউজ করতে দেখা যায় স্যামসাংয়ের এক্সিনস, হুয়াওয়ের কিরিন, অ্যাপলের প্রসেসর।
আপনি যদি স্মার্টফোনে গেমিং বা মাল্টিটাস্কিং করতে আগ্রহী হন তবে ভালো ম্যানের একটি প্রসেসর দেখে ফোন কিনুন।

জিপিইউ বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট
চিপসেট বা প্রসেসরের পাশাপাশি জিপিইউ বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। গেমিং পারফর্মেন্স, ফ্রেম রেট, গ্রাফিক্স সহ আরো অনেকগুলো বিষয় হ্যান্ডেল করে এটি। বর্তমানে ভালো মানের জিপিইউ অ্যাড্রিনো ৬৫০, ৬৪০, ৬৩০; ম্যালি জি-৭৭, জি-৭৬ জি-৭২; পাওয়ার ভিআরের লেটেস্ট সিরিজ গুলো। স্মার্টফোন কেনার সময় ভালো জিপিইউ সম্বলিত স্মার্টফোনটি কিনবেন। কারণ পরবর্তীতে আপনি চাইলেও এতে কম্পিউটারের মতো ডেডিকেটেড জিপিইউ লাগাতে পারবেন না।
ক্যামেরা
এখনকার স্মার্টফোনের ক্যামেরাগুলো অনেক উন্নত। সময়ের সাথে সাথে ক্যামেরার সংখ্যাও বেড়েছে। স্মার্টফোনের ক্যামেরা নিয়ে মানুষরে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। সবাই মনে করেন স্মার্টফোনের ক্যামেরার রেজ্যুলেশন বা মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে স্মার্টফোনে তোলা ছবি ততো ভালো হবে। ছবি কতটা ভালো বা খারাপ হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে অ্যাপারচার, সেন্সর, লেন্স ইত্যাদির উপর। এসব কারণে কম মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়েও সুন্দর ছবি পাওয়া সম্ভব। আর অ্যাপারচার যত কম হবে ক্যামেরা তত বেশি আলো ক্যাপচার করতে পারবে। বর্তমানে স্মার্টফোন দিয়ে ৪কে রেজুলেশনেও বা ফুল এইচডি ভিডিও করা যায়। স্মার্টফোন কেনার সময় যাতে কমপক্ষে এইচডি রেজুলেশনে ভিডিও ক্যাপচার করা যায় এদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
র্যাম
মোবাইলের অস্থায়ী মেমোরি হিসেবে কাজ করে র্যাম। এটি প্রসেসরকে স্মুথলি কাজ করতে সাহায্য করে। যদিও র্যাম মোবাইলের অস্থায়ী মেমোরি তবে স্মার্টফোন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। র্যাম বেশি হলে একসাথে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডেও রান করাতে পারবেন কোনো রকম সমস্যা ছাড়া। বর্তমানে ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোতে ৬ থেকে ৮ জিবি, মিডরেঞ্জর স্মার্টফোনগুলোতে ২ থেকে ৪ জিবি এবং লো-ইন্ড স্মার্টফোনগুলোতে ১ জিবি পর্যন্ত র্যাম পাওয়া যায়। র্যাম বেশি থাকার কারণে ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি।

ব্যাটারি
ব্যবহার করার নির্ভর করে মোবাইলের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কেমন দরকার। কোননা আপনি যদি হেভি ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে ৪ হাজার মিলিএম্পিয়ার বা তার চেয়ে বেশি মিলিএম্পিয়ারের স্মার্টফোন নেওয়া উচিত। বর্তমানে ৩ বা ৬ হাজার মিলিএম্পিয়ারের ব্যাটারি দেখতে পাওয়া যায়। কমপক্ষে ৩ হাজার মিলিএম্পিয়ারের ব্যাটারিসহ স্মার্টফোন কেনার চেষ্টা করবেন।
ফাস্ট চার্জিং
মোবাইল কেনার আগে দেখে নিন আপনার পছন্দ করা মোবাইলটিতে ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির সাপোর্ট করবে কিনা। ফাস্ট চার্জিং মাধ্যমে আপনি খুব তাড়াতাড়ি মোবাইলের শক্তিশালী আর বড় ব্যাটারি চার্জ করতে পারবেন। এতে আপনার অনেক সময় বেঁচে যাবে। তবে এখন অনেক মোবাইল ওয়ারলেস চার্জিং প্রযুক্তিও সমর্থন করে।
রম বা স্টোরেজ
স্মার্টফোনের স্থায়ী মেমোরি হিসেবে কাজ করে রম বা স্টোরেজ। অপারেটিং সিস্টেম এবং এর অ্যাপস থাকে মূলত রমে। বাকি অংশে এটি প্রয়োজনীয় ফাইল, ছবি গান ইত্যাদি সেভ করে রাখতে পারে। কমপক্ষে ৩২ জিবি স্টোরেজের ফোন কিনতে চেষ্টা করুন। এখন প্রায় সব মোবাইলে মাইক্রোএসডি বা মেমরি কার্ড স্লট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

অপারেটিং সিস্টেম
কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের মতোই মূলত স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম। এখন বাজারের মোবাইলগুলোতে নানান ধরণের অপারেটিং সিস্টেম দেখা যায়। যেমন, Android OS, Apple’s IOS, Windows OS, Realme UI, MIUI, Colors ইত্যাদি। সব থেকে বেশি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড ওএস। এক্ষেত্রে লেটেস্ট ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম স্মার্টফোন নেওয়াই ভালো।
রিভিউ ও রেটিং সাইট অনুসন্ধান
ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনি সহজেই বিভিন্ন পপুলার রিভিউ ও রেটিং সাইটে বা ইউটিউব ভিজিট করে মোবাইলটির ভাল-মন্দ এবং খুঁটিনাটি জানতে পারবেন। স্মার্টফোন কেনার আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত।
এনএম