images

ফুটবল

ফুটবলে বাংলার মেয়েদের ‘বিপ্লব’

ফুয়াদ হাসান

২১ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:১০ এএম

ফুটবল দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হলেও ফুটবলে বাংলাদেশের তেমন কোনো সাফল্য নেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে খেলাধুলায় সাফল্য মূলত ক্রিকেটেই। টাইগার যুবাদের হাত ধরে ক্রিকেটে বাংলাদেশ পেয়েছে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ। এর বাইরে সাকিব, তামিম, মুস্তাফিজদের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রাপ্তিটাও কম নয়।

তবে ফুটবলও যে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে পারে, দেশকে গৌরবের উপলক্ষ এনে দিতে পারে তা ২০২২ সালেই দেখেছে বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা।

অন্ধকার থেকে আলোর মঞ্চে উঠে আসা মেয়েদের কল্যাণে ২০২২ সালেই বাংলাদেশ পেয়েছে সাফের ষষ্ঠ আসরের শিরোপা জয়ের স্বাদ। মারিয়া মান্দা, রুপনা চাকমা, সাবিনা খাতুনদের হাত ধরে দেশবাসী পেয়েছে আনন্দ ও গৌরবের মুহূর্ত।

বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা এই মেয়েরা এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। তাদের কারও বাবা কৃষক, কারও বাবা ছোট ব্যবসায়ী কিংবা সামান্য বেতনের চাকুরিজীবী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা মেয়েরাও যে সুযোগ পেলে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারে তা করে দেখিয়েছেন এই ফুটবলাররা।

অপ্রতিরোধ্য ছন্দ, চোখ ধাঁধানো ও নান্দনিক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে ঐতিহাসিক এই কীর্তিগাথা রচনা করেছে বাংলার মেয়েরা। পুরো আসরে অপরাজিত থেকে লাল-সবুজের দেশকে চ্যাম্পিয়ন করে রুপনা-মারিয়ারা।

২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে মেয়েদের সাফের ষষ্ঠ আসরের ফাইনালের লড়াইয়ে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে এ কৃতিত্ব অর্জন করে বাংলার বাঘিনীরা। স্বপ্নযাত্রার সেই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে জোড়া গোল করে তারকা বনে যান কৃষ্ণা রানী সরকার। আরেকটি গোল আসে বদলি ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়রের পা থেকে। নেপালের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিল অনিতা বাসনেত।

দেশের জন্য এই অনন্য জয় ছিনিয়ে আনা নারী ফুটবলারদের এই পথচলাটা মোটেও সহজ ছিল না। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এই মেয়েরা বাংলাদেশের স্বপ্ন হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। লড়াই করেছেন দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে। প্রমাণ করেছেন তারাও পিছিয়ে নেই। এর সঙ্গে শিখিয়েছেন, আমরাও পারি নিজ মাতৃভূমির জন্য স্বপ্নের শিকড় থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হলেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনও মেয়েদের খেলাধুলাকে সেভাবে সমর্থন করে না। মূলত ‘কুসংস্কারের’ বলি হয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের নারীদের ক্রীড়াঙ্গন। বৈষম্যের শিকার মেয়েরা সামাজিকভাবে সমর্থন না পাওয়ায় থেকে যায় পর্দার আড়ালে। এত প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়েও নারী ফুটবলে মেয়েদের এই অনন্য কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এর সঙ্গে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বাংলার নারীদের এই উত্থান এক অপার সম্ভাবনার হাতছানি।

ফুটবল বাংলাদেশকে শুধু হতাশাই দিয়েছে। তবে সব আক্ষেপ মুছে দেওয়া বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের এই প্রাপ্তিকে সম্মান জানাতে ভুল করেনি দেশবাসী। সাবিনা-সানজিদাদের সেই অর্জনকে যথাযথ সম্মান জানায় সরকারও। বিমানবন্দর থেকে বাফুফে পর্যন্ত ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা দেওয়া হয় বাংলার সাফজয়ী মেয়েদের। সেদিন রূপনা চাকমা, মারিয়া মান্ডা, সিরাত জাহান স্বপ্নাদের বরণ করে নেয় বাংলাদেশের লাখো মানুষ। এছাড়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী নারী ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এফএইচ