images

ফুটবল

মুকুটহীন রাজাদের আক্ষেপের বিশ্বকাপ 

স্পোর্টস ডেস্ক

২০ নভেম্বর ২০২২, ০৩:৫১ পিএম

অজেয় হয়ে উঠা দলটি যেন হারতেই ভুলে গিয়েছিল। পুরো আসর জুড়ে উত্তাপ ছড়িয়ে বিশ্ব দরবারে নিজেদের অন্যরকম এক পরিচয় তুলে ধরেছিল দেশটি। রাজার মতো আবির্ভাব হওয়া ফুটবলারদের আসল সিংহাসনে বসতে হলে জিততে হবে বিশ্বকাপ। সমর্থকদের মন জয় করা দলটি মুকুট হতে দূরে মাত্র একটি ম্যাচ। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে গড়ে ৫.৪ টি করে ২৭টি গোল করা হাঙ্গেরির শেষটা হয়েছিল মুকুটহীন রাজাদের মতো।  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেখানে কিছু দেশ নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হিমশিম খেয়েছিল। ঠিক তখনই ফুটবলের মাধ্যমে হ্যালির ধুমকেতুর মতো উজ্জ্বলভাবে নিজ দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিল হাঙ্গেরি। সেই সময়ের হাঙ্গেরিয়ান দলটির যাত্রা ছিল রুপকথার গল্পের অংশ। অপ্রতিরোধ্য দলটি হারতেই ভুলে গিয়েছিল। 

১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ একটি ম্যাচেও হারেনি ইউসেফ বোসিকরা। ফর্মের তুঙ্গে থাকা হাঙ্গেরিকে অংশগ্রহণ ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পাঠানোর সামর্থ্য ছিলো না তাদের সরকারের। 

আগের বিশ্বকাপ খেলতে না পারার আক্ষেপ যেন শক্তিতে পরিণত হয়েছিল দেশটির। বিশ্বকাপের মতো আসরে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তকমা নিয়েই এসেছিল দেশটি। 

সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৫৪ বিশ্বকাপের শুরুটা দুর্দান্তভাবে করেছিল হাঙ্গেরি। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৯-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর শক্তিশালী পশ্চিম জার্মানিকে ৮-৩ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জয়ের বার্তা দিয়েছিল ‘দা গোল্ডেন টিম’ খ্যাত দলটি। 

পুরো আসর জুড়ে সমর্থকদের থেকে ধরে বিশ্ববাসীর মন জয় করা দেশটি ফাইনালে এসে শুরুটা করে চ্যাম্পিয়ন দলের মতো। যেই পশ্চিম জার্মানিকে গ্রুপ পর্বে উড়িয়ে দিয়েছিল গুস্তাভ সেভেসের দল তাদেরকেই আবার প্রতিপক্ষ হিসেবে পায়। 

শিরোপা জয়ের মিশনে প্রথম ৮ মিনিটেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরি। ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে এমন জায়গা থেকে এর আগে কেউ কখনো হারেনি। অলৌকিক কিছু ঘটাতে পারলেই ম্যাচে ফিরতে পারবে জার্মানি। 

নাটকীয়ভাবে অবিশ্বাস্য এক চিত্রনাট্যের মঞ্চায়ন হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের বার্ণে। মাক্সিমিলিয়ান মারলক ও হেলমুট রানের নৈপুণ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করে পশ্চিম জার্মানি। ২-২ গোলের সমতায় উত্তেজনায় ভাসে ওয়াংড্রফ স্টেডিয়াম। 

পুরো আসর জুড়ে নজর কাড়া হাঙ্গেরি যেন ভেঙে পড়ে ফাইনালের শেষদিকে। ম্যাচের ৮৪ তম মিনিটে পশ্চিম জার্মানির হয়ে শিরোপাজয়ী গোলটি করেন রান। সেই সঙ্গে স্বপ্ন ভাঙে ফেরেঙ্ক পুসকাসদের।  

ইতিহাসের পাতায় স্বনার্ক্ষরে লেখা হয় বিজয়ীদের নাম। তবে সেই বিশ্বকাপে সকলের মন জয় করেছিল হাঙ্গেরি। ফুটবলের ইতিহাসে ম্যাচটি জায়গা করে ‘দা আনফরগেটেবল ট্র্যাজেডি’ নামে। জার্মান রুপকথার জয়ের পর ২০০৩ সালে  ‘দা মিরাকল অব বার্ন’ নামে সিনেমা নির্মিত হয়। ফুটবল বেঁচে থাকবে যতকাল ১৯৫৪ সালের হাঙ্গেরি দলটিকে স্মরণ করতে হবে আজীবন। কেননা পুসকাসদের সেই হারটিই জন্ম দিয়েছিল ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজেডির।  

এমএএম