স্পোর্টস ডেস্ক
১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৪৯ পিএম
বাংলাদেশের এক সময় জনপ্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। তবে সময়ের সাথে সাথে এ দেশের মানুষ মনেপ্রানে জয় করে নিয়েছে ক্রিকেটকে। কারণ ক্রিকেট বাংলাদেশের একটি খেলা নয় শুধু, ১৮ কোটি মানুষের রক্তে মিশে যাওয়া একটা নেশা। ক্রিকেটে মাঠে যখন লড়ে ১১ জন ক্রিকেটার, আর তাদেরকে সাহস বা উৎসাহ দিয়ে থাকে গোটা বাংলাদেশ। সব কিছুর চাওয়া একটাই, জিতবে আমার দেশ। এই ক্রিকেট যখন এতোটাই জনপ্রিয় গোটা বাংলাদেশের, তখন সেটির প্রিয় হয়ে উঠার ইতিহাস না জানলেই নয়।
১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। আর প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ এশিয়া কাপে। তবে সব কিছুর ভিতরে টাইগারদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের মর্যাদা পেতে অপেক্ষা করতে হয় ১৭ বছর। নিয়মিতই আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করত বাংলাদেশ তবুও আইসিসির শিরোপা ধরা দেয়নি এই ১৭ বছরে। ১৯৮২ ও ১৯৯০ সালের আসরে অল্পের জন্য শিরোপা কাছে যেয়েও হারিয়ে আসে টাইগাররা।

তবে সব আক্ষেপ ঘুচিয়ে ১৯৯৭ সালে কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথম বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায়। আর টাইগারদের এখন অব্দি অন্যতম বড় অর্জন হলো ১৯৯৭ সালের এই আইসিসি ট্রফি জয়। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে।
আর এখান থেকে সূচনা হয়েছে ইতিহাসের, নির্মাণ হয়েছে সেই সময়ের আগামীর বর্তমান। ১৯৯৭ সালে তারকা ক্রিকেটার আকরাম খানের হাত ধরেই বিশ্ব দরবারে টাইগার ক্রিকেটের সামার্থ্যের প্রমান রাখে। ঠিক ২৬ বছর আগে এই দিনে কেনিয়াকে ২ উইকেট হারিয়ে আইসিসি ট্রফির রোমাঞ্চকর ফাইনালে শিরোপা জিতে। সেদিন শুধু বাংলাদেশ দলের এগারোজন মাঠে খেলেনি, ১৩ এপ্রিল কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ খেলেছিল শত প্রবাসীদের সাথে নিয়ে। দেশকে ভালোবেসে বাঙালিরা কী করতে পারে, তা দেখেছিল গোটা বিশ্ব।
কুয়ালালামপুরে মাঠের ড্রেনেজ সিস্টেম তেমন ভালো নয়। আগের দিন সারারাত ভর বৃষ্টিতে মাঠের পরিস্থিতি একেবারেই অনুকূলে ছিল না। বৃষ্টি থামলেও মাঠ ভেসে ছিল পানিতে। ফলে ম্যাচ আদৌ হবে কিনা, সেই নিয়ে তখন দুশ্চিন্তায় সবে। এমতাবস্থায় দেখা মিললো ভিন্ন এক দৃশ্যের অবতারণা। যা কল্পনা করলেও চোখের কোণে মৃদু জল টলমল করে।

সেদিন প্রবাসী বাংলাদেশী যারা খেলা দেখতে মাঠে ছিলেন, তারাই পানি ভরা মাঠে নেমে স্বেচ্ছায় গ্রাউন্ডসম্যান হয়ে গেলেন! তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীও তাদের সাথে যোগ দিলেন। বালতি-বেলচা, ঝাড়ু আর তোয়ালে; যে যেভাবে পেরেছেন, তাই নিয়ে কাজ শুরু করলো সবাই, যাতে যেকোনো মূল্যে খেলা শুরু করানো যায়। দেশকে যে জেতানো চাই। আর সেদিন সেই ম্যাচে ১ বলের ১ রানের সমীকরনে টাগাররা জিতে ২ উইকেটে। লিখে নতুন ইতিহাস। আর নতুন সূর্যের সূচনা হয়, যা সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার প্রতীক। সেবারই বাংলাদেশে বিশ্বকাপে খেলার অর্জন করে প্রথমবারের মতো।
এই ঘটনা বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গতিপথ, এনে দিয়েছে সম্মান, মর্যাদা। এই দিনটি অমলিন থাকবে আজীবন টাইগার ক্রিকেটে। সত্যিই সে জয় অসাধারণ, ঐতিহাসিক। তাইতো ২৬ বছর পরও এই বিজয় টাইগার ক্রিকেটে স্মরণ হয়ে রয়েছে।
এসটি