images

ক্রিকেট

৬ বছর পর বিশ্বকাপ মঞ্চে জিম্বাবুয়ের প্রত্যাবর্তন 

স্পোর্টস ডেস্ক

১৬ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪৪ এএম

জাম্বেজি নদীর ওপর অবস্থিত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত এবং বন্য জীবজন্তুর জন্য খ্যাত দেশটির নাম জিম্বাবুয়ে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই দেশটি কৃষি ও খনিজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার।

আফ্রিকার দক্ষিণাংশে অবস্থিত দেশ জিম্বাবুয়ে। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত ১৪ শ শতকে পাথরে নির্মিত মহান জিম্বাবুয়ে শহরের নামে দেশটির নামকরণ করা হয়। জিম্বাবুয়ের রাজধানীর নাম হারারে। দেশটিতে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ৩৬২ জন। যেখানে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

‘রোডেশিয়া’ নামে পরিচিত দেশটি ক্রিকেটে নিজেদের শুরুটা করে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ‘কুরি কাপ’ দিয়ে। দেশটি স্বাধীন হয় ১৯৮০ সালের ১৮ এপ্রিল। যার পরের বছরেই আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে জিম্বাবুয়ে।

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসি ইভেন্ট খেলার সুযোগ পায় জিম্বাবুয়ে। গ্রুপপর্বের ছয়টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই হারে তারা। কিন্তু এর মধ্যেও ১৩ রানের ব্যবধানে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চমকে দেয় দলটি। সেটা ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম ‘অঘটন’। বিশ্ব জানতে পারে, ক্রিকেটের মানচিত্রে নতুন এক দলের উত্থান ঘটতে চলেছে।

যদিও চার বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে যেয়ে প্রতিপক্ষের দলগুলোর কাছে তুলোধুনো হয় আফ্রিকান এই দলটি। গ্রুপপর্বের ছয়টি ম্যাচের সবগুলোতেই হেরে যায় তারা। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে লড়াই করে হারে তিন রানের ব্যবধানে।

সেই বছর জুলাইয়ে নিজেদের নতুন মাত্রায় নিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। আইসিসির নবম দেশ হিসেবে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে তারা। জিম্বাবুয়ের প্রথম ৩০ টেস্টের অভিজ্ঞতা ছিল নারকীয়। যার একটিতে জয় পায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। 

দারুণভাবে ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পর আচমকা খেল হারায় জিম্বাবুয়ে। যার মূল কারণ বর্নবাদ। সেটার শুরু ২০০৩ সালে। সেই বছরের বিশ্বকাপটা হতে পারতো তাদের জন্য অন্য রকম একটা মাইফলক। দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়ার সাথে বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক দেশ ছিল তারা। কিন্তু রবার্ট মুগাবের সেই শাসনামলে বোমা ফাটালেন খেলোয়াড়রাই। ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ দাবি করে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও হেনরি ওলোঙ্গা মাঠে নামলেন কালো আর্মব্যান্ড পরে। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ইতিহাসে কিংবদন্তি এই দুই ক্রিকেটারের জন্য জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল চিরতরে। বোর্ড আর সরকার মনে করলো, বিশ্বের মঞ্চে তাদের নাক কেটেছেন এই দু’জন।

এরপর কেটে যায় বহু বছর। দেশের ক্রিকেটে স্থিতিশীলতা আসতে থাকে ধীরে ধীরে। প্রান ফিরে পায় গতানুগতিক ক্রিকেট। নিয়মিত আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলা শুরু করে দলটি।

২০০৭ সালের প্রথম টি টোয়েন্টিও বিশ্বকাপে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। সেবার ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করা অস্ট্রেলিয়াকে কেউটাউনে ৫ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল প্রস্পার উতসেয়ার দল। জয়ের নায়ক ছিলেন উইকেট রক্ষক ব্যাটার ব্রেন্ডন টেইলর। 

২০১৬ সালের পর আর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। এরপর কেটে যায় ৬ বছর। তবে আজ থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে নিজেদের জাত চিনিয়ে স্বরূপে ফিরছে আফ্রিকার এই দলটি।

সম্প্রতি দারুণ ক্রিকেট খেলছে জিম্বাবুয়ে। আগস্টে ঘরের মাঠে হওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে আটকে দেয় ক্রেইগ আরভাইন বাহিনী। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় তারা। এরপর ভারতের মাটিতে হওয়া তিন ম্যাচের সিরিজে কোহলিদের সাথে প্রমাণ দেয় নিজেদের যোগ্যতার। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অজিদের সাথে এক ম্যাচ জিতে নিজেদের চাঙ্গা করে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শেষ করে তারা। 

তবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য বড় দুঃসংবাদ আসে বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক নয় দিন আগে। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরার জন্য যখন প্রস্তুত হচ্ছিলেন সবাই, ঠিক সেই মুহূর্তে ব্যাটিং কোচ ল্যান্স ক্লুজনারের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার পদত্যাগের পর দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পান ডেভ হটন। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও জিম্বাবুয়ের কোচ ছিলেন হাটন।

জিম্বাবুয়ের বিশ্বকাপে ফিরে আসা 
২০১৬ সালের পর পেরিয়ে গেছে ছয় বছর। এর মধ্যে আর কোন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারে নি তারা। এই বছর বাছাইপর্ব খেলে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা পায় দলটি। বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েই মূল পর্বে আসে বার্ল-রাজা বাহিনী। টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে ‘বি’ গ্রুপে খেলবে জিম্বাবুয়ে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

নজর থাকবে যাদের ওপর 
জিম্বাবুয়ে দলে আছে বেশ কিছু পরীক্ষিত ক্রিকেটার। ডানহাতি ব্যাটিং অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা দলের তুরুপের তাস। দলে আছে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার  ক্রেগ আরভিন।  টেন্দাই চাতারা, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও মিল্টন শুম্বাও ফিরেছেন ইনজুরি থেকে। তাদের দলে ফিরে আসায় পূর্নশক্তির দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এসেছে জিম্বাবুয়ে দল।

মূলত মুজারাবানিই জিম্বাবুয়ের বোলিং অ্যাটাকের নেতৃত্বে। বিশ্বজুড়ে টি টোয়েন্টি লিগগুলোতে সচরাচর দেখা যায় তাকে। কিন্তু ইনজুরির কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের পর তিনি ছিলেন না ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও। তবে বিশ্বকাপে এ তারকা ফেরায় শক্তিশালী হয়েছে রোডেশীয়দের পেস আক্রমণভাগ। তাছাড়াও দলে আছে রায়ান বার্লের মতো অভিজ্ঞ স্পিনার। যেকোনো দলের ব্যাটারদের আতঙ্কের নাম এই বার্ল।

জিম্বাবুয়ে স্কোয়াড
ক্রেগ আরভিন, রায়ান বার্ল, রেজিস চাকাভা, টেন্দাই চাতারা, ব্রাডলে ইভান্স, লুক জংউই, ক্লিভ মাদানদে, ওয়েসলে মেধেভেরে, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, টনি মুনিওঙ্গা, ব্লেজিং মুজারাবানি, রিচার্ড এনগারাভা, সিকান্দর রাজা, মিল্টন শুম্বা ও শন উইলিয়ামস।  

স্ট্যান্ডবাই
তানাকা চিভাঙ্গা, ইনোসেন্ট কাইয়া, কেভিন কুসুজা, মারুমানি ও ভিক্টর নাইয়াচি।

এফএইচ/এইউ