images

ক্রিকেট

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট: ২২ বছরের এক লজ্জার ইতিহাস

আহমদ ইশতিয়াক আনাম

২৮ জুন ২০২২, ১১:৫৩ এএম

২২ বছর আগে বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে তখন টাইগারদের সামনে ছিল ক্রিকেট বিশ্বকে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ। তবে ২০২২ এ এসেও প্রশ্ন উঠতে পারে সেটা কতটা পেরেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটের নবীন সদস্য আফগানিস্তানের কাছেও বরণ করতে হয়েছে হার। দিনের পর দিন এমন জঘন্য পারফরম্যান্সের দায় কতটা এড়াতে পারেন ক্রিকেটাররা। 

টেস্টে হাতে খড়ির পর থেকেই হতাশাজনক পারফরম্যান্স অব্যাহত ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ৫০ টেস্টে লঙ্গার ভার্সনে টাইগারদের উন্নতির গ্রাফ ছিল কচ্ছপের ন্যায়। প্রথম জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩৫ ম্যাচ! এদিকে বাংলাদেশের ১৮ বছর পর টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও প্রথম জয় পেতে আফগানিস্তানের লেগেছিল মাত্র ২ ম্যাচ! 

প্রথম ৫০ ম্যাচে ২৯টি ম্যাচই বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। এসময়ে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া জয়টিই ছিল একমাত্র সম্বল, সঙ্গী হয়েছিল ৫টি ড্র। পরের ৫০ টেস্টে বেড়েছে জয়ের সংখ্যা কিন্তু মাঠের হতশ্রী পারফরম্যান্স যেন চিরসঙ্গী। 

এসময় ৮ জয় ও ১০ ড্র থাকলেও ছিল ৭টি দৃষ্টিকটু ইনিংস হার। তবে আপনাকে ধাঁধায় ফেলে দেবে ১০১ থেকে ১৩৫তম টেস্টে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান। এসময়ে পাওয়া ৭ জয় সাকিব-তামিমদের পক্ষে কথা বললেও কঠিন পরিস্থিতি সামলে ম্যাচ বাঁচানো যেন ভুলেই গিয়েছে টাইগাররা। ২৪ হারের বিপরীতে মাত্র ৩ ড্র বলছে তেমনটাই। 

টেস্টে হাতে খড়ির পর থেকেই হতাশাজনক পারফরম্যান্স অব্যাহত ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ৫০ টেস্টে লঙ্গার ভার্সনে টাইগারদের উন্নতির গ্রাফ ছিল কচ্ছপের ন্যায়। প্রথম জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩৫ ম্যাচ! এদিকে বাংলাদেশের ১৮ বছর পর টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও প্রথম জয় পেতে আফগানিস্তানের লেগেছিল মাত্র ২ ম্যাচ! 

দেশ ও দেশের বাইরে এসময় ব্যর্থতার লজ্জাজনক ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ। সাকিব-মুশফিকদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মনে করিয়ে দেয় ১৯৮৬ সালের অ্যাশেজের আগে ইংলিশ সাংবাদিক মার্টিন জনসনের করা উক্তি। তিনি বলেছিলেন, ‘এই ইংল্যান্ড দলে মাত্র ৩টি সমস্যা। তারা ব্যাটিং পারে না, বোলিং পারে না ও ফিল্ডিং পারে না।’

বাংলাদেশ টেস্ট দল সম্পর্কে তেমনটা বললে ভুল কিছু হবে না। তবে দল ও ক্রিকেটারদের সঠিক পথে পরিচালনা করা ও ভুলগুলো শুধরে দেয়া যাদের দায়িত্ব সেই কোচিং স্টাফ ও বিসিবির কাছ থেকে মেলে খালি দায় এড়ানো উত্তর। টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে না ওঠার দোহাই দিয়ে যেন নিজেদের এই মারাত্মক ব্যর্থতা ঢাকতে চান তারা।   

দেশ ও দেশের বাইরে এসময় ব্যর্থতার লজ্জাজনক ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ। সাকিব-মুশফিকদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মনে করিয়ে দেয় ১৯৮৬ সালের অ্যাশেজের আগে ইংলিশ সাংবাদিক মার্টিন জনসনের করা উক্তি। তিনি বলেছিলেন, ‘এই ইংল্যান্ড দলে মাত্র ৩টি সমস্যা। তারা ব্যাটিং পারে না, বোলিং পারে না ও ফিল্ডিং পারে না।’

কয়েকদিন আগে বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘বিদেশের মাটিতে যে আমরা জিততে পারি তার একটা আভাস পেয়েছি তবে তাই বলে আপনারা যদি মনে করেন অলরেডি আমরা ভাল টিম হয়ে গেছি তার প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের এখনও অনেক পথ বাকি আছে। এই (টেস্ট) সংস্কৃতি গড়ে উঠতে সময় লাগবে।’ 

এখানে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের পরে টেস্ট খেলা শুরু করেও কিভাবে আফগানিস্তানে এতো দ্রুত গড়ে উঠল টেস্ট সংস্কৃতি! বোর্ডের ৯০০ কোটি টাকা আর প্রতি মাসে বিদেশি কোচদের পিছনে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করে আদৌ কতটা উপকৃত হচ্ছি আমরা?

এতো এতো হারের পরও যেন টনক নড়ছে না বিসিবি ও ক্রিকেটারদের। টস থেকে শুরু করে মাঠ ও মাঠের বাইরে নেয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তই জন্ম দেয় প্রশ্নের। গতকাল শেষ হওয়া টেস্টে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে ১০০তম টেস্ট হারের লজ্জার মাইলফলক। এই ম্যাচের একাদশও ঠিক কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছে উঠতে পারে সেই প্রশ্নও।

ডিপিএলে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে রানের ফুলঝুড়ি ছোটানো আনামুল হক বিজয়কে সুযোগ দেয়া হল টেস্টে যেই ফরম্যাটে কখনোই সেভাবে আলো কাড়তে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। উপেক্ষিত হলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যিনি দেশের স্বীকৃত টেস্ট ব্যাটার।

অ্যান্টিগা টেস্টের পর তুলনামূলক ব্যাটিং সহায়ক সেন্ট লুসিয়ার উইকেটে বাংলাদেশি ব্যাটারদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে টেস্ট ক্রিকেট আদৌ কতটা বোঝেন বর্তমান টেস্ট দলের সদস্যরা। তবে এই সিরিজে অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়া সাকিব আল হাসানও যেন দর্শকদের ওপর দায় চাপিয়ে ঢাকতে চান নিজেদের ব্যর্থতা।

ফর্মহীনতায় বাদ দেয়া হলো মুমিনুল হককে তবে আরেক ফর্মহীন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত ঠিকই সুযোগ পেলেন একাদশে। টেকনিক্যালি শান্ত যে মুমিনুলের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে তা বুঝতে বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন নেই। 

অ্যান্টিগা টেস্টের পর তুলনামূলক ব্যাটিং সহায়ক সেন্ট লুসিয়ার উইকেটে বাংলাদেশি ব্যাটারদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে টেস্ট ক্রিকেট আদৌ কতটা বোঝেন বর্তমান টেস্ট দলের সদস্যরা। তবে এই সিরিজে অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়া সাকিব আল হাসানও যেন দর্শকদের ওপর দায় চাপিয়ে ঢাকতে চান নিজেদের ব্যর্থতা।  

দল বারবার এমন কাণ্ডজ্ঞ্যানহীন ক্রিকেট খেললেও সাকিব বলেন, ‘এখানে খেলোয়াড়দের খুব বেশি দোষ দেওয়া ঠিক হবে না। শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দিলে হবে না। আমাদের দেশের সিস্টেমটাই এমন। আপনি কবে দেখছেন বাংলাদেশে ৩০ হাজার দর্শক টেস্ট ম্যাচ দেখছে বা ২৫ হাজার দর্শক মাঠে এসেছে টেস্ট দেখতে?’

সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজের উদাহরণ টেনে সাকিব আরও বলেন, ‘ইংল্যান্ডে তো প্রতি ম্যাচে (টেস্ট) এরকম দর্শক থাকে। টেস্টের সংস্কৃতিটাই আমাদের দেশে ছিল না কখনো, এখনো নেই।’

পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবদের কর্তব্য দেশের হয়ে সবটুকু উজাড় করে দেয়া, প্রতিনিয়ত উন্নতির চেষ্টা করা। তবে তা না করে সমর্থকদের মূল্যায়নকে কাঠগড়ায় তোলার আগে দ্বিতীয়বার ভাবলেন না দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। 

দায় এড়ানোর চেষ্টা করে সাকিব বলেন, ‘আমরা যে টেস্ট ক্রিকেটকে খুব বেশি মূল্যায়ন করি, তা নয়। হ্যাঁ, হতে পারে আমরা ফলাফল ভালো করিনি, এ কারণে মূল্যায়নও হয়নি। তবে একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক আছে। একটার সঙ্গে আরেকটাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই ভালো কিছু সম্ভব।’              

তবে সবসময়ের মতো আশা ঠিকই দেখালেন সাকিব, ‘টেস্ট সংস্কৃতি নেই বলে যে হবে না, সেটা কিন্তু নয়। এই জিনিসটা পরিবর্তন করাই আমাদের বড় দায়িত্ব। সবাই মিলে যদি পরিকল্পনা করে আগানো যায়, হয়তো কিছু সম্ভব হবে। নইলে আসলে খুব বেশি দূর আগানো সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের টেস্টের সংস্কৃতিই নেই।’

এই সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে আর কতদিন পার পাইতে চাবে বোর্ড ও ক্রিকেটাররা সেটা সময়ই বলবে। তবে ফল পেতে ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোতে আনতে হবে পরিবর্তন। নিম্নমানের স্পিনিং ট্র্যাক না বানিয়ে বানাতে হবে স্পোর্টিং ও পেস সহায়ক উইকেট। 

পাশাপাশি এনসিএলের মতো আরও কিছু লঙ্গার ভার্সন ঘরোয়া টুর্নামেন্ট এখন সময়ের দাবি। মুমিনুল, এবাদতদের খেলার মধ্যে না রেখে দীর্ঘ বিরতির পর তাদের কাছ থেকে ১০০ বা ৫ উইকেট চাওয়াটাও যেন আকাশ কুসুম কল্পনা। দিনশেষে ক্রিকেট পাগল বাঙালির একটাই দাবি বন্ধ হোক এই দায় চাপানোর খেলা, কথা না বলে কাজের কাজটা এবার করে দেখাক বিসিবি ও ক্রিকেটাররা।     

এআইএ