আহমদ ইশতিয়াক আনাম
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:০৭ পিএম
বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার কে? এই প্রশ্নে সবার আগেই সামনে চলে আসে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির নাম। তাদেরই একজনের আজ জন্মদিন। ১৯৮৫ সালের আজকের দিনে পর্তুগালের মাদেইরা অঞ্চলের ফুনচাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক এই মহাতারকার জন্মদিনে চলুন জেনে নেই তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য।
৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুকরণে নামকরণ
রোনালদোর পিতা জোসে দিনিস আভেইরো ছিলেন ৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের ভক্ত। ছেলের নামের সঙ্গে তাই ‘রোনালদো’ যোগ করে পুরো নাম রাখেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো দোস সান্তোস আভেইরো।
‘ট্যাটু’কে না বলা রোনালদো
অধিকাংশ ফুটবল তারকা শরীরের নানাবিধ স্থানে ট্যাটু অঙ্কন করলেও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনোই ‘ট্যাটু’ করেননি রোনালদো। কারণটা অবশ্য মানবিক। ক্যারিয়ারের প্রায় শুরু থেকেই নিয়মিত রক্তদান করে থাকেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই ফরোয়ার্ড। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রেড ক্রস শরীরে ট্যাটু করার এক বছরের মধ্যে রক্তদান অনুৎসাহিত করে থাকে। আর সে কারণেই রোনালদোর শরীরে নেই কোন ট্যাটু।
একজন যোদ্ধার সন্তান
কঠিন সময়ে কখনোই হাল ছাড়েন না সিআর সেভেন। ফুটবল মাঠে যেন যোদ্ধা বনে যান তিনি। দেশপ্রেমিক হিসেবেও বেশ সুখ্যাতি রয়েছে তার। আর হবেনই বা না কেন তার শরীরে যে বইছে একজন দেশপ্রেমিক যোদ্ধার রক্ত। রোনালদোর পিতা জোসে ছিলেন একজন সাবেক সেনা সদস্য। পর্তুগিজ আর্মির হয়ে লড়েন মোজাম্বিক ও অ্যাংগোলা যুদ্ধে।
উচ্চশিক্ষার বিষয় রোনালদো
ফুটবল পিচে অসংখ্যবার মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন প্রচন্ড পরিশ্রমী এই ফুটবলার। তার জীবনের গল্প এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে’ সুযোগ রয়েছে তার উপর কোর্স করার। বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাইলে রোনালদোর জীবন ও ক্যারিয়ার বেছে নিতে পারেন তাদের কোর্স সাবজেক্ট হিসেবে।
মিউসিও সিআর সেভেন
বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ফরোয়ার্ডের অর্জনের খাতায় রয়েছে অনেক কিছুই। এত কিছু থাকার পরও জাদুঘরে স্থান পাবেন না তিনি তা কি করে হয়। শুনলে অনেকেই অবাক হবেন গোটা একটি জাদুঘর রয়েছে এই পর্তুগিজ সুপারস্টারের নামে। রোনালদোর জন্মস্থান ফুনচালে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘মিউসিও সিআর সেভেন’ নামে একটি জাদুঘর। এখানে সিআর সেভেনের অসংখ্য মোমের মুর্তি ছাড়াও রয়েছে এ পর্যন্ত তার অর্জন করা সকল পেশাদার ট্রফি।
ঝুঁকিপূর্ণ শৈশব
শৈশবটা খুব একটা আনন্দে কাটেনি ক্রিশ্চিয়ানোর। খুব অল্প বয়সেই শেষ হয়ে যেতে পারত তার ক্যারিয়ার। মাত্র ১৫ বছর বয়েসে টাচিকার্ডিয়া নামক হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। কপালগুণে সফল অপারেশনের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যান রোনালদো।
১৭ গুরুর শিষ্য
নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৭ জন ম্যানেজারের অধীনে। যাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার আলেক্স ফার্গুসন, হোসে মৌরিনহো, কার্লো আনচেলত্তি, জিনেদিন জিদানের মত কিংবদন্তীরাও।
গানের লিরিক্সে রোনালদো
শুধু ফুটবল মাঠে নয় গানেও খুঁজে পাবেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারকে। জনপ্রিয় কানাডিয়ান সঙ্গীতশিল্পী ড্রেকের ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া অ্যালবাম ‘স্করপিয়নের’ একটি গানে রয়েছেন তিনি। ‘ব্লু টিন্ট’ নামক ওই গানে উল্লেখ করা হয়েছে রোনালদোর কথা।
ছোট্ট মৌমাছি রোনালদো
ছোটবেলা থেকেই বেশ চঞ্চল ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো। তার মা মারিয়া ডলরেস আভেইরো একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সে স্কুল থেকে ফিরলে আমি যখনই জিজ্ঞেস করতাম কোন হোমওয়ার্ক রয়েছে কিনা সে বলত নেই। এরপর আমি রাতের খাবার তৈরি করতে গেলেই সে জানালা দিয়ে পালাত।’ ডলরেস আরও জানান রোনালদো এতটাই জোরে ছুটতে পারতেন যে কেউই ধরতে পারত না তাকে। এ কারণে অনেকে ‘ছোট্ট মৌমাছি’ বলে ডাকত তাকে।
গ্যালাক্সির রাজা
মহাকাশেও খুঁজে পাবেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। ২০১৫ সালে ডেভিড সোব্রালের মহাকাশচারী দল সন্ধান পায় নতুন একটি গ্যালাক্সির যার নামকরণ করা হয় সিআর সেভেন গ্যালাক্সি।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ফুটবল পিচের দারুণ দক্ষতা রোনালদোকে ব্যক্তিজীবনেও এনে দিয়েছে অনেক সম্মান। ২০১৬ সালে দেশকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দেয়ার পর মাদেইরার বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
সমাজসেবী রোনালদো
সমাজসেবী হিসেবে অনেক আগেই সুনাম কুড়িয়েছেন এই মহাতারকা। আর একারণে অনেকেই তাকে ‘ম্যান উইথ আ গোল্ডেন হার্ট’ বলে থাকেন। ২০১৩ সালে জয় করা ব্যালন ডি অর ট্রফিটি নিলামে বিক্রি করে পাওয়া অর্থের পুরোটাই দান করেন অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসায়।
সামাজিক মাধ্যমেরও রাজা তিনি
বহুল জনপ্রিয় তিনটি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে বিপুল পরিমাণ ফলোয়ার রয়েছে এই তারকার। হালের লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়রদের চেয়েও বেশি ফলোয়ার পর্তুগিজ তারকার।
রূপালী পর্দায়ও উপস্থিত তিনি
এত এত অর্জন যার জীবনে তাকে নিয়ে সিনেমা নির্মিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। ব্রিটিশ সিনেমা পরিচালক অ্যান্থোনি ওঙ্ক একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছেন রোনালদোকে নিয়ে যার নামও ‘রোনালদো’। ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে মুক্তি পায় সিনেমাটি।
৯০ মিনিটেই করেছেন গোল
এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন খেলোয়াড় খেলার প্রতি মিনিটেই গোল করতে সক্ষম হয়েছেন। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ও লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে এই তালিকায় রয়েছে রোনালদোর নামও।
এআইএ