images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

অর্জন নয়, বিতর্কে ভরা বছর বাংলাদেশ ক্রিকেটের

২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম

কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বছর। দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২৬। অজস্র প্রাপ্তি আর হারানোর কিছু বিষাদময় স্মৃতি রেখে যাচ্ছে ২০২৫ সাল। ব্যতিক্রম ঘটেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কেননা ২০২৫ সালটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য মাঠের অর্জনের চেয়ে মাঠের বাইরের অস্থিরতার কারণেই বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিন ফরম্যাটেই পুরুষ, নারী এবং বয়সভিত্তিক দলগুলো প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তাদের এই হতাশাজনক পারফরম্যান্স ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এর অভ্যন্তরে চলমান প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা।

বছরের শুরুতে বিপিএলের কেলেঙ্কারির ছায়া

বছরের প্রথম বড় ধাক্কা আসে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসরে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে লিগ কার্যত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অ্যান্টি-করাপশন ইউনিটের সতর্কতার পর খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের নাম ছড়াতে থাকে।

নয় মাস তদন্ত করে বিসিবি একটি বিশাল প্রতিবেদন তৈরি করলেও সেটি প্রকাশ করা হয়নি। পরে আইসিসির সাবেক দুর্নীতি দমন প্রধান অ্যালেক্স মার্শালকে এনে এসিইউ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার সুপারিশে কয়েকজনকে ভবিষ্যৎ বিপিএল থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এদিকে ‘দুর্বার রাজশাহী’ ও ‘চট্টগ্রাম কিংস’-এর বকেয়া পাওনা নিয়ে জটিলতা বিপিএলের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও নড়বড়ে করে তোলে। শেষ পর্যন্ত নতুন করে ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে চুক্তি করে বিসিবি।

ক্ষমতার পালাবদলের নাটক

বছরের শুরুতেই বিসিবিতে ঝড়। মে মাসে আটজন ডিরেক্টর প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস প্রস্তাব পাস করেন। ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল তার ডিরেক্টরশিপ বাতিল করলে প্রেসিডেন্ট পদও চলে যায়। সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল নতুন প্রেসিডেন্ট হন। অক্টোবরে নির্বাচন হয় বিতর্কিতভাবে। ভোটার টার্নআউট কম, বয়কট, সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ। বুলবুল পুনর্নির্বাচিত হন চার বছরের জন্য, ফারুক ফিরে আসেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন ক্রিকেট প্রশাসনকে করে তোলে অস্থির। 

bcb-president-061025-1759760614

ঘরোয়া ক্রিকেট অচল, ক্রিকেটাররা অনিশ্চয়তায়

নির্বাচনের পর বিসিবি-ঢাকা ক্লাব সম্পর্ক তলানিতে। অনিয়মের অভিযোগে ক্লাবগুলো ঘরোয়া লিগ বয়কট করে। চলমান ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে আটটি ক্লাব অংশ নেয়নি, শত শত ক্রিকেটারের জীবিকা ঝুঁকিতে। লিগ প্রায় বন্ধের মুখে। এই দ্বন্দ্ব ক্রিকেটের ভিত্তিকে দুর্বল করেছে।

নারী ক্রিকেটে বিস্ফোরক অভিযোগ

সাবেক নারী অধিনায়ক জাহানারা আলমের বিস্ফোরক অভিযোগ। নভেম্বরে তিনি অভিযোগ করেন যে ২০২২ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় সাবেক সিলেক্টর ও ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মকর্তা তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। অযাচিত শারীরিক স্পর্শ, অশ্লীল প্রশ্ন (যেমন মাসিক চক্র নিয়ে)। এছাড়া অধিনায়ক নিগার সুলতানার বিরুদ্ধে জুনিয়র খেলোয়াড়দের মারধরের অভিযোগ। বিসিবি তদন্ত কমিটি গঠন করে, সময়সীমা বাড়িয়ে জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। এই কলঙ্ক নারী ক্রিকেটের নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

jahanara

বিপিএলের দ্বাদশ আসরে বিপর্যয় ও দুর্নীতির ছায়া!

বিপিএল ২০২৫-২৬ শুরু হয়েছে বিতর্কের মাঝে। আগের আসরের দুর্নীতি তদন্তের রিপোর্টে নয়জন খেলোয়াড়কে অকশনে আমন্ত্রণ না করা হয়। অর্থনৈতিক সংকটে বিদেশি তারকারা (যেমন ডিকওয়েলা, স্টার্লিং) চলে যান। চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিক শেষ মুহূর্তে দল ছেড়ে দেন স্পনসর না পাওয়ায়, বিসিবিকে নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল, খেলোয়াড়দের বেতন না দেওয়ার অভিযোগ, ম্যাচের আগে এক কোচের মৃত্যু। লিগের মান নিয়ে প্রশ্ন, দুর্নীতি দমনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হৃদয়ের শাস্তি ও অধিনায়কত্বের নাটক 

এপ্রিলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আম্পায়ারের সাথে অসদাচরণে তাওহিদ হৃদয় নিষিদ্ধ হন। পরে আবার শৃঙ্খলাভঙ্গে বড় শাস্তি পান, ফাইনাল মিস করেন।

নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে বোর্ডের যোগাযোগের চরম ভাঙন। জুন মাসে শ্রীলঙ্কা সফরের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তাকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজকে দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ শান্ত টেস্ট অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন। পরে আলোচনায় ফিরে আসেন এবং ২০২৫-২৭ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সাইকেলের জন্য টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে পুনর্বহাল হন। এই ঘটনা ক্রিকেটারদের মনোবলকে করেছে ছিন্নভিন্ন এবং বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ।

hridoy-saikat-23_04_2025

নভেম্বরে টি-টোয়েন্টিতে লিটন দাস ও নির্বাচকদের মধ্যে শামীম হোসেনকে নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।

সব মিলিয়ে ২০২৫ ছিল অর্জনের চেয়ে বিতর্কে ভরা বছর। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কবে শান্তি ফিরবে এই খেলায়?