স্পোর্টস ডেস্ক
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
১৩ ডিসেম্বর কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার পেছনের কারণ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্ত। বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি)-এর জেরায় তিনি দাবি করেছেন, অনুষ্ঠানের সময় অতিরিক্ত ভিড় ও অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে বিরক্ত হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠ ছাড়েন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবল মহাতারকা।
সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে শতদ্রু দত্ত তদন্তকারীদের বলেন, “মেসি পিঠে হাত দেওয়া বা জড়িয়ে ধরা একদমই পছন্দ করেন না।” বিষয়টি অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বিদেশি নিরাপত্তাকর্মীরা আয়োজকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
আরও পড়ুন- মেসিকে নিয়ে বিশৃঙ্খলা, ৫০ কোটির মানহানির মামলা
আরও পড়ুন- মেসিকে ১৪ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার অনন্ত আম্বানির
দত্তের ভাষ্য অনুযায়ী, মাইকিং করে বারবার দর্শকদের সংযত থাকার আহ্বান জানানো হলেও কোনো প্রভাব পড়েনি। “যেভাবে মেসিকে ঘিরে ধরা হয়েছিল, সেটা তাঁর কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ছিল,” তদন্তকারীদের কাছে বলেন তিনি।
অনুষ্ঠান চলাকালে পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে মেসির একেবারে কাছাকাছি দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, ছবি তোলার সময় তিনি মেসির কোমরে হাত রেখেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন অরূপ বিশ্বাস। পরে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ক্রীড়ামন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, কীভাবে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ মাঠের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পেল। দত্ত দাবি করেছেন, শুরুতে মাত্র ১৫০টি গ্রাউন্ড পাস ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু এক “অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি” স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পর সেই সংখ্যা তিনগুণ হয়ে যায়। তাঁর অভিযোগ, ওই ব্যক্তির হস্তক্ষেপেই পুরো অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ভেঙে পড়ে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
সূত্র জানায়, দত্ত আরও দাবি করেছেন, ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি মাঠে পৌঁছানোর পর অনুষ্ঠানের সব ‘ফ্লো-চার্ট’ এলোমেলো হয়ে যায়, ফলে তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি। পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে, পাসের সংখ্যা বাড়ানোই কি ভিড় নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ার মূল কারণ ছিল।
জেরায় মেসির ভারত সফরের আর্থিক দিক নিয়েও তথ্য দিয়েছেন শতদ্রু দত্ত। তাঁর দাবি অনুযায়ী, সফরের জন্য মেসিকে দেওয়া হয় ৮৯ কোটি টাকা, আর ভারত সরকারকে কর হিসেবে দেওয়া হয় ১১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আসে স্পনসরদের কাছ থেকে এবং আরেক ৩০ শতাংশ আসে টিকিট বিক্রি থেকে।
এদিকে এসআইটি কর্মকর্তারা দত্তের ফ্রিজ করা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ কোটির বেশি টাকা পেয়েছেন। শুক্রবার তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিও জব্দ করা হয়। দত্তের দাবি, তাঁর অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ কলকাতা ও হায়দরাবাদের মেসি ইভেন্টের টিকিট বিক্রি এবং স্পনসরদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা। তবে তদন্তকারী দল সেই দাবি যাচাই করে দেখছে।
সল্টলেক স্টেডিয়ামের ওই অনুষ্ঠানে হাজার হাজার দর্শক উচ্চমূল্যের টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু মাঠের ভেতরে বিশৃঙ্খলার কারণে গ্যালারি থেকে মেসিকে ঠিকভাবে দেখাই যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ দর্শকদের একাংশ পরে স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর চালায়।
এই ঘটনার তদন্তে রাজ্য সরকার সিনিয়র আইপিএস কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে। দলে রয়েছেন পীযূষ পাণ্ডে, জাভেদ শামিম, সুপ্রতিম সরকার ও মুরলিধর। ভাঙচুরের পাশাপাশি নিরাপত্তা ত্রুটি, অনুমতি লঙ্ঘন এবং আয়োজক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা, সবকিছুই এখন এসআইটির তদন্তের আওতায়।