images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

এক নিলাম রাতারাতি কোটিপতি বানালেন কোল্ড ড্রিংকস বিক্রেতার ছেলেকে

স্পোর্টস ডেস্ক

১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম

আইপিএল মানেই রাতারাতি ভাগ্য বদলের গল্প, কিন্তু কার্তিক শর্মার ক্ষেত্রে এটি শুধু ভাগ্য নয়- এক পরিবারের দীর্ঘ এক দশকের লড়াইয়ের ফসল। বেস প্রাইস মাত্র ৩০ লাখ টাকা। নাম উঠতেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের প্যাডেল উঠল। তারপর লখনউ সুপার জায়ান্টস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল একে একে। দাম লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে লাগল ৫ কোটি, ৮ কোটি, ১০ কোটি, ১২ কোটি... এবং শেষমেশ চেন্নাই সুপার কিংসের হাতে উঠল ১৯ বছরের রাজস্থানের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কার্তিক শর্মা, অবিশ্বাস্য ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকায়। 

এটা আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি আনক্যাপড খেলোয়াড়ের রেকর্ড (প্রশান্ত বীরের সঙ্গে যুগ্মভাবে)। কিন্তু এর পিছনে লুকিয়ে আছে একটা গোটা পরিবারের ত্যাগ, স্বপ্ন আর আবেগের গল্প। রাজস্থানের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম কর্তিকের। বাবা মনোজ কুমার শর্মা নিজে ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতায় সেই স্বপ্ন অধরা রয়ে গিয়েছিল।

তাই ছেলেকে মাত্র ৫ বছর বয়স থেকেই প্লাস্টিকের ব্যাট তুলে দিয়েছিলেন হাতে। 'আমার অপূর্ণ স্বপ্নটা ওর মধ্যে দিয়ে পূরণ হোক,' বলতেন মনোজ। ঘরে টাকা-পয়সার অভাব ছিল, কিন্তু আশা আর পরিশ্রমের কোনো কমতি ছিল না। সেই লক্ষ্যে তিনি প্রাইভেট টিউশনি করেছেন, কোল্ড ড্রিংকস বিক্রি করেছেন, এমনকি ছোটখাটো অনেক কাজও করেছেন পরিবার চালানোর জন্য। 

ছেলের ক্রিকেট যাত্রাকে সমর্থনের জন্য মনোজ শর্মা নিজের দোকান পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছিলেন এবং প্রায় ২৭-২৮ লাখ রুপি ঋণ নিয়েছিলেন। কার্তিক নিজেও অভাবের কথা জানতেন, তাই স্কুলের পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের ক্রিকেট কিট কেনার টাকা জমাতেন। কার্তিকের মা সংসারের সব কাজ সামলে ছেলেকে প্র্যাকটিসে নিয়ে যেতেন। ধুলোমাখা মাঠ থেকে আগ্রার লোকেন্দ্র সিং চাহারের অ্যাকাডেমি; প্রতিদিনের যাতায়াত, খরচের চিন্তা, কিন্তু কখনো হাল ছাড়েননি। 

কোচ লোকেন্দ্র বলেন, 'ওকে প্রথম দেখেই বুঝেছিলাম, এর মধ্যে বীরেন্দের শেবাগের ছায়া আছে। কোনো ভয় নেই, শুধু আগ্রাসী ব্যাটিং।' দীপক চাহারের মতো বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিতেন, 'তুই আইপিএলে যাবি, অনেক টাকা পাবি।' এমনটায় এক সাক্ষাৎকারের জানান কার্তিক শর্মা।
 
রঞ্জি ট্রফিতে ডেবিউ করে সেঞ্চুরি (১১৩ রান বনাম উত্তরাখণ্ড), বিজয় হাজারে ট্রফিতে রাজস্থানের হয়ে সর্বোচ্চ রান (৪৪৫ রান, ৯ ম্যাচে), সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ১৬০-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে ১৩৩ রান এবং ২৮টা ছক্কা, এই পারফরম্যান্স দেখে কেভিন পিটারসেন থেকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন সবাই টুইট করে প্রশংসা করেছিলেন। কর্তিকের লং ছক্কা দেখে পিটারসেন বলেছিলেন, 'এটা তো আমার মতো!'

নিলামের দিন কার্তিকের বাড়িতে টিভির সামনে বসে ছিল গোটা পরিবার। মা চোখে আঁচল চেপে জল মুছছেন, বাবা মনোজের হাত কাঁপছে। দাম যখন ৫ কোটি পেরোল, তখন মনোজ ফোনে ছেলেকে বললেন, 'আজ আমার জীবনের সব কষ্ট শোধ হয়ে গেল।' ১০ কোটি ছাড়াতেই ঘরে চিৎকার, আর যখন হাতুড়ি পড়ল ১৪.২০ কোটিতে- পুরো পাড়ায় নাচ-গান, মিষ্টি বিতরণ শুরু! 

কর্তিক নিজে অকশনে ছিলেন, কিন্তু পরে সাক্ষাৎকারে বললেন, 'আমি কাঁদতে কাঁদতে থামতে পারছিলাম না। ধোনি ভাইয়ের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করব, এটা স্বপ্নের মতো। পরিবারের জন্য এটা সবচেয়ে বড় উপহার।' 

চেন্নাই সুপার কিংসের কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং বলেছেন, 'আমরা কর্তিককে অনেকদিন ধরে দেখছি। ওর মধ্যে ভবিষ্যতের তারকা আছে। ধোনির ছায়ায় খেলে ও আরও বড় হবে।' সিএসকে এবার যুবকদের দিকে ঝুঁকেছে, প্রশান্ত বীরকেও একই দামে কিনেছে। কর্তিক এখন হলুদ জার্সিতে ঝড় তুলবে, ফিনিশারের ভূমিকায়।

এক সাধারণ পরিবারের ছেলে থেকে রাতারাতি কোটিপতি; বাবার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ, মায়ের ত্যাগের ফল, কোচের বিশ্বাস। এটাই আইপিএলের আসল জাদু। কর্তিক শর্মার গল্প বলে দেয়, স্বপ্ন দেখলে, পরিবারের সমর্থন থাকলে আর কঠোর পরিশ্রম করলে, ৩০ লাখ থেকে ১৪.২০ কোটির পথটা সত্যি হয়ে ওঠে!