স্পোর্টস ডেস্ক
১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম
সমর্থক সংগঠনগুলোর তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করেই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির তৃতীয় ধাপে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ লাখ আবেদন পেয়েছে ফিফা। শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ফিফা জানায়, টুর্নামেন্টের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট ম্যাচের জন্য টিকিট চাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় বিশ্বজুড়ে আগ্রহ ‘অস্বাভাবিক মাত্রায়’ পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই ৪৮ দলের বিশ্বকাপ ঘিরে ২০০টিরও বেশি দেশের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার কথাও তুলে ধরে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন- মেসি কলকাতায় যে হোটেলে থাকছেন, খরচ কত?
আরও পড়ুন- ভারতে প্রাণ নিয়ে শঙ্কায় মেসি, স্টেডিয়াম ছাড়লেন ২০ মিনিটে
তবে বৃহস্পতিবার টিকিটের নতুন দাম প্রকাশের পর যে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছে, সে বিষয়ে ফিফার অবস্থানে কোনো নমনীয়ভাব দেখা যায়নি। বরং তারা সমর্থকদের আগ্রহকেই সামনে এনে টিকিট বিক্রি চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, গ্রুপ পর্বের ম্যাচে টিকিটের দাম ১৮০ ডলার (২১ হাজার ৯৫৫ টাকা) থেকে ৭০০ ডলার (৮৫ হাজার ৩৮৪ টাকা) পর্যন্ত। ফাইনাল ম্যাচের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দাম ৪ হাজার ১৮৫ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা), আর সর্বোচ্চ দাম ৮ হাজার ৬৮০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৪ টাকা)।
ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের সমর্থকদের সংগঠন ইংল্যান্ড সাপোর্টার্স ট্রাভেল ক্লাবকে জানায়, যদি কোনো সমর্থক গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচের টিকিট কিনতে চান, তাহলে তার খরচ দাঁড়াবে ৭ হাজার ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা) একটু বেশি।

এই দামের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ইউরোপের সমর্থক সংগঠন ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ। তারা বর্তমান মূল্যকে “চাঁদাবাজিমূলক” বলে উল্লেখ করে জাতীয় ফুটবল সংস্থাগুলোর মাধ্যমে টিকিট বিক্রি অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির ভাষ্য, “এটি বিশ্বকাপের ঐতিহ্য, সার্বজনীনতা ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ডাইনামিক প্রাইসিং চালু করেছে ফিফা, যেখানে চাহিদা অনুযায়ী টিকিটের দাম ওঠানামা করবে। এই পদ্ধতি তারা চলতি বছরের ক্লাব বিশ্বকাপে ব্যবহার করেছিল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ১৯৯৪ বিশ্বকাপে টিকিটের দাম ছিল ২৫ থেকে ৪৭৫ ডলার। আর কাতার বিশ্বকাপ ২০২২–এ ঘোষণার সময় দাম ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৭০ থেকে ১,৬০০ ডলারের মধ্যে।
বর্তমান ধাপে ‘র্যান্ডম সিলেকশন ড্র’ পদ্ধতিতে সমর্থকেরা কোন ম্যাচ, কোন ক্যাটাগরির টিকিট ও কতটি টিকিট কিনতে চান তা নির্বাচন করতে পারছেন। তবে এতে টিকিট পাওয়া নিশ্চিত নয়। এই ধাপ চলবে ২০২৬ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। সফল আবেদনকারীদের ফেব্রুয়ারিতে ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থ কেটে নেওয়া হবে।
ফিফার তথ্যমতে, তৃতীয় ধাপে টিকিট চাহিদায় এগিয়ে রয়েছে তিন আয়োজক দেশই, পাশাপাশি আমেরিকা মহাদেশের অন্যান্য দেশ থেকেও ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্কটল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও পানামা থেকে।
গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোর মধ্যে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি টিকিট চাওয়া হয়েছে মিয়ামিতে কলম্বিয়া বনাম পর্তুগাল ম্যাচের জন্য, যেখানে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ব্রাজিল–মরক্কো (নিউ জার্সি), মেক্সিকো–দক্ষিণ কোরিয়া (গুয়াদালাহারা), ইকুয়েডর–জার্মানি (নিউ জার্সি) ও স্কটল্যান্ড–ব্রাজিল (মিয়ামি) ম্যাচও ছিল উচ্চ চাহিদায়।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরতে যাওয়া স্কটল্যান্ডের সমর্থকদের মধ্যেও উত্তেজনা থাকলেও, দেশটির একটি সমর্থক সংগঠন দামকে “লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য” বলে আখ্যা দিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব টার্টান আর্মি ক্লাবস জানায়, “এই দামে আমাদের অনেক সমর্থকই বিশ্বকাপের স্বপ্ন থেকে বাদ পড়ে যাবে। তরুণ সমর্থকদের স্বপ্ন ফিফাই ভেঙে দিয়েছে।”
ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও সমর্থকদের অসন্তোষ ফিফার কাছে তুলে ধরতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম প্রেস অ্যাসোসিয়েশন, যদিও এতে বড় কোনো পরিবর্তনের আশা কম। বিবৃতিতে ফিফা দাবী করেছে, “একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ থেকে অর্জিত আয় বিশ্বের ২১১টি সদস্য সংস্থায় পুরুষ, নারী ও যুব ফুটবলের উন্নয়নে পুনঃবিনিয়োগ করে।”