images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

এশিয়া কাপে মাঠের রোমাঞ্চ ছাপিয়ে যা যা বিতর্ক হলো আসরে

স্পোর্টস ডেস্ক

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০৪ পিএম

এশিয়া কাপ ২০২৫ ছিল কেবল একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়, বরং এক পরিপূর্ণ নাট্যরূপ। যেখানে মাঠে রোমাঞ্চ, মাঠের বাইরে বিতর্ক, আর সবশেষে এক অবিস্মরণীয় ফাইনাল মিলিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের উপহার দিয়েছে আবেগে ঠাসা এক অভিজ্ঞতা। এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে রেকর্ড নবমবারের মতো শিরোপা জিতেছে ভারত। তবে ম্যাচের ফলাফলের চেয়েও বেশি আলোচনায় এসেছে পুরো আসর নানা ঘটনা ও ফাইনালের ম্যাচ-পরবর্তী ঘটনা।

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালের শেষে নাটকীয়ভাবে জয় পাওয়ার পর ভারতীয় দল প্রায় দেড় ঘণ্টা পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ওঠেনি। কারণ, তারা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি মোহসিন নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। উল্লেখ্য, মোহসিন নাকভি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যানও।

গালফ নিউজ প্রকাশিত এক বিস্তৃত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে টুর্নামেন্ট ঘিরে ঘটে যাওয়া নানা নাটকীয়তা। শৃঙ্খলাভঙ্গ ও জরিমানা। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেই বিতর্কের বিস্ফোরণ।  সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা তৈরি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। খেলায় যেমন ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, তেমনি মাঠে ও বাইরে চলে ‘মাইন্ড গেম’ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের পালা।

ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফ, উভয়কেই আইসিসি ম্যাচ ফি-এর ৩০% জরিমানা করে। পাকিস্তানি ব্যাটার সাহিবজাদা ফারহান পান অফিসিয়াল সতর্কবার্তা।

রউফের ‘প্লেন ক্র্যাশ’ ভঙ্গি, ফারহানের ‘বন্দুক চালানো’ অঙ্গভঙ্গি, আর সূর্যের রাজনৈতিক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য নিয়ে তৈরি হয় বিস্তর আলোচনা। পিসিবি অভিযোগ তোলে, ভারতীয় অধিনায়কের মন্তব্য “পাহালগামের শহীদদের প্রতি উৎসর্গ” ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

হ্যান্ডশেক না করা আদবের ব্যত্যয়, না কূটনৈতিক কৌশল?

গ্রুপ পর্বে ও সুপার ফোরে ভারতের জয়ের পর দেখা যায়, সূর্যকুমার পাকিস্তানি অধিনায়ক সালমান আঘার সঙ্গে হাত মেলাননি। পিসিবি এ ঘটনাকে ক্রিকেটীয় চেতনার লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করে।

পরে জানা যায়, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট দুই অধিনায়ককে পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা এড়াতে হ্যান্ডশেক এড়িয়ে চলতে। কিন্তু স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তৈরি হয় বিভ্রান্তি ও বিতর্ক।

উসকানিমূলক অঙ্গভঙ্গি ও মন্তব্য, ক্রিকেট না ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’?

সুপার ফোরে আবারো বিতর্কের কেন্দ্রে হারিস রউফ। এক পর্যায়ে তিনি দর্শকদের উদ্দেশে ‘৬-০’ দেখিয়ে উসকানি দেন, যা ভারতীয়দের জন্য সংবেদনশীল এক স্মৃতি।

অন্যদিকে ফারহান অর্ধশতক পূর্ণ করে ‘বন্দুক চালানোর’ ভঙ্গি করে ফের সমালোচিত হন। সূর্যকুমার “শহীদদের উদ্দেশে জয় উৎসর্গ” মন্তব্যকে ঘিরেও রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ায়। আইসিসি এখনও সেই মন্তব্য তদন্ত করছে।

রেফারি অপসারণ না হলে বয়কটের হুমকি, ঘণ্টাখানেক দেরিতে ম্যাচ শুরু

ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে ঘিরেও তৈরি হয় আরেক ঝড়। পিসিবি সরাসরি হুমকি দেয়—রেফারিকে অপসারণ না করা হলে তারা টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়াবে। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচ শুরু হয় এক ঘণ্টা দেরিতে। শেষ পর্যন্ত আইসিসি রেফারিকে বহাল রাখে এবং পিসিবি বাধ্য হয় পিছু হটতে।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে গ্যালারিতেও উত্তেজনার ঝড় 

হারিস রউফকে উদ্দেশ করে বারবার ‘কোহলি, কোহলি’ স্লোগান দেয় ভারতীয় দর্শকরা, যার জবাবে রউফও প্রতিক্রিয়া জানান। মাঠে থাকা ভারতীয় খেলোয়াড়রাও গ্যালারির দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করেন।

এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে অনেক সাবেক ক্রিকেটার বলেন, “এটা ক্রিকেটের জন্য লজ্জার।”

সবকিছুর শেষে এক ঐতিহাসিক ফাইনাল

সব উত্তেজনা, বিতর্ক, চাপ ও রাজনৈতিক উত্তাপ ছাপিয়ে একটাই ব্যাপার ক্রিকেট বিশ্বকে এক করেছে ঐতিহাসিক ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। চূড়ান্ত ম্যাচে উত্তেজনা ছিল টানটান, স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। অনেকের মতে, এটাই ছিল এশিয়া কাপ ২০২৫-এর সবচেয়ে বড় জয়।