স্পোর্টস ডেস্ক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
এশিয়া কাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটা ছিল অনেক প্রতীক্ষার। কেননা এই দুই দলের মধ্যে থাকে এক আবেগ, ইতিহাস, আর রক্তগরম করা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আর সেই উত্তাপ আরও বেড়ে গেল এশিয়া কাপে রোববার অনুষ্ঠিত ম্যাচের পর।
ভারতের অধিনায়ক সুর্যকুমার যাদব ও তার দল পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে পরাজিত করার পর পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন না করেই মাঠ ছাড়েন। শুধু তাই নয়, ম্যাচ জয়ের উৎসর্গ করেন পাহালগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত ২৬ জন ভারতীয় পর্যটকের স্মৃতিতে এবং অপারেশন সিন্ধুর সাহসী ভারতীয় সেনাদের উদ্দেশে।
পাকিস্তান এই আচরণকে অক্রীড়ামূলক ও রাজনৈতিক বলে অভিহিত করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এর কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)-এর দাবি, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট নাকি টসের সময়ই দুই অধিনায়ককে করমর্দন না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ফলে, পিসিবি সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছে আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার ওয়াসিম খান-এর কাছে এবং দাবি করেছে পাইক্রফটকে অবিলম্বে এশিয়া কাপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।
পরে অবশ্য আইসিসি এক বিবৃতিতে, সেই দাবি আজ সরাসরি খারিজ করে। ক্রিকবাজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিসির পক্ষ থেকে আগেই অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল এবং সেটা পিসিবিকে আগের রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়।
আজ এক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দেয় আইসিসি। ম্যাচ রেফারি কোনো পক্ষপাত করেননি, বরং গ্রাউন্ডে থাকা এসিসি (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল)-এর কর্মকর্তারাই তাকে জানান যে, টসে কোনো হ্যান্ডশেক হবে না।
সেই চিঠিতে আইসিসি আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানের ধারণা যে পাইক্রফট ভারতের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
কে এই অ্যান্ডি পাইক্রফট?
একজন নাম না-করা ক্রিকেটার, কিন্তু বিশাল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ম্যাচ রেফারি। অ্যান্ডি পাইক্রফট, জিম্বাবুয়ের সাবেক ব্যাটসম্যান, খেলেছেন মাত্র ৩টি টেস্ট ও ২০টি ওয়ানডে। তবে তার ক্রিকেটজীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত ছিল অস্ট্রেলিয়ার বি-টিমের বিরুদ্ধে একটি সেঞ্চুরি। যেখানে প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন ও স্টিভ ওয়াহ।
খেলোয়াড়জীবনের পর তিনি দায়িত্ব নেন কোচিং ও সিলেকশনের, পরে হয়ে ওঠেন একনিষ্ঠ ম্যাচ রেফারি। ২০০৯ সাল থেকে আজ অবধি ১০৩টি টেস্টে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই তালিকায় তিনি চতুর্থ স্থানে। তাঁর প্রথম টেস্ট ছিল ভারতের বিরুদ্ধে, হারারেতে ১৯৯২ সালে। সম্প্রতি ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে নিতীশ কুমার রেড্ডির টেস্ট শতরানেও তিনি ছিলেন ম্যাচ রেফারি।
ক্রিকেটমাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতই হোক, মাঠের বাইরে রাজনৈতিক বাস্তবতা, আবেগ ও ইতিহাসের ভারে প্রতিটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচই যেন একেকটি যুদ্ধ। করমর্দনের অনুপস্থিতি বা সেনাবাহিনীকে উৎসর্গ। সবই এই লড়াইকে আরও আবেগময় করে তুলছে। এখন দেখার বিষয়, আইসিসি কী পদক্ষেপ নেয় এবং পরবর্তী ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে আবারও কী এমন কোনো নতুন উত্তেজনা অপেক্ষা করছে!