images

স্পোর্টস / ফুটবল

ফুটসাল এবং ফুটবলের পার্থক্য কী, জেনে নিন সকল নিয়মাবলী

স্পোর্টস ডেস্ক

২৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৩২ এএম

ফুটসাল এবং ফুটবল দুটিই ফুটবল পরিবারের অংশ, তবে তাদের নিয়ম, মাঠ, এবং খেলার ধরন তাদের আলাদা পরিচয় দেয়। ফুটবল যেখানে শারীরিক শক্তি ও কৌশলের সমন্বয়, সেখানে ফুটসাল দ্রুততা ও দক্ষতার খেলা। 

ফুটসাল কী

ফুটসাল একটি ছোট পরিসরে খেলা হয় এমন ইন্ডোর ফুটবল খেলা। এটি পাঁচজনের একটি করে দুই দল নিয়ে খেলা হয় (একজন গোলরক্ষকসহ)। ফুটসাল শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ 'fútbol de salón' থেকে, যার অর্থ ‘ঘরের ভিতরের ফুটবল’। খেলাটি সাধারণত কৃত্রিম ঘাসের পরিবর্তে কাঠ বা হার্ড কোর্টে খেলা হয় এবং বলটি সাধারণ ফুটবলের চেয়ে ছোট ও কম বাউন্স করে।

ফুটসাল খেলা যেভাবে এসেছে

ফুটসাল খেলার সূচনা হয়েছিল ১৯৩০ দশকে উরুগুয়ের মন্টেভিডিও শহরে। উরুগুয়ের এক শিক্ষক জুয়ান কার্লোস সেরিয়ানি এই খেলার ধারণা দেন। তিনি এমন একটি খেলা তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা ইনডোরে খেলা যায় এবং যেখানে ফুটবল, হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবলের উপাদানগুলো থাকবে। 

এই খেলাটি দ্রুত ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ব্রাজিলে। ব্রাজিলেই এই খেলার কৌশল ও স্কিলের দিক থেকে ব্যাপক উন্নয়ন হয় এবং অনেক বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকারা (যেমন পেলে, রোনালদো, রোনালদিনহো) ছোটবেলায় ফুটসাল খেলেই ফুটবলের মৌলিক স্কিল রপ্ত করেছেন।

ফুটসালের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

১৯৮৯ সালে ফিফা- ফুটসালকে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রথম ফিফা ফুটসাল বিশ্বকাপ আয়োজন করে।

১৯৮২ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড ফুটসাল অ্যাসোসিয়েশন (এএমএফ) নামক একটি আলাদা সংগঠনও ফুটসালের বিশ্বকাপ আয়োজন করে আসছে। তবে, ফিফার ফুটসাল বিশ্বকাপই এখন বেশি স্বীকৃত ও প্রচলিত।

fifa_futsal_trophy

ফুটসাল এবং ফুটবলের পার্থক্য– 

মাঠের আকার ও প্রকৃতি: ফুটবল সাধারণত বড় ঘাসের মাঠে খেলা হয়, যার মাপ ১০০-১১০ মিটার লম্বা এবং ৬৪-৭৫ মিটার চওড়া। অন্যদিকে, ফুটসাল একটি ছোট, হার্ড কোর্টে (সাধারণত ইনডোর) খেলা হয়, যার মাপ ২৫-৪২ মিটার লম্বা এবং ১৬-২৫ মিটার চওড়া। ফুটসালের মাঠে ঘাসের পরিবর্তে কাঠ বা কৃত্রিম পৃষ্ঠ ব্যবহৃত হয়, যা খেলার গতি বাড়ায়।

খেলোয়াড়ের সংখ্যা: ফুটবলে প্রতি দলে ১১ জন খেলোয়াড় থাকে, যেখানে ফুটসালে দলপ্রতি ৫ জন খেলোয়াড় মাঠে থাকে (গোলরক্ষকসহ)। এই কম সংখ্যক খেলোয়াড়ের কারণে ফুটসালে খেলা আরও দ্রুত এবং কৌশলনির্ভর হয়।

বলের পার্থক্য: ফুটসালে ব্যবহৃত বল ফুটবলের বলের তুলনায় ছোট (সাইজ ৪) এবং কম বাউন্স করে, যা মাঠে নিয়ন্ত্রণ সহজ করে। ফুটবলে সাইজ ৫ বল ব্যবহৃত হয়, যা বেশি বাউন্স করে এবং বাতাসে বেশি ভ্রমণ করে।

খেলার সময়: ফুটবল ম্যাচ সাধারণত ৯০ মিনিটের হয় (দুই হাফে ৪৫ মিনিট করে), যেখানে ফুটসাল ম্যাচ ৪০ মিনিটের (দুই হাফে ২০ মিনিট করে)। তবে ফুটসালে কার্যকর সময় গণনা করা হয়, অর্থাৎ বল মাঠের বাইরে থাকলে সময় বন্ধ থাকে, যা খেলাকে আরও তীব্র করে।

নিয়মের পার্থক্য
থ্রো-ইন বনাম কিক-ইন: ফুটবলে বল মাঠের বাইরে গেলে হাত দিয়ে থ্রো-ইন করা হয়, কিন্তু ফুটসালে পা দিয়ে কিক-ইন করতে হয়।  
অফসাইড: ফুটবলে অফসাইড নিয়ম রয়েছে, কিন্তু ফুটসালে এই নিয়ম নেই, যা খেলোয়াড়দের আরও স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দেয়।  
প্রতিস্থাপন: ফুটসালে সীমাহীন প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকে, যেখানে ফুটবলে এটি সীমিত।  
ফাউল ও পেনাল্টি: ফুটসালে ৬টি ফাউলের পর প্রতিপক্ষ দল সরাসরি পেনাল্টি শট পায়, যা ফুটবলে নেই।

খেলার ধরন: ফুটসালে ছোট মাঠ এবং কম খেলোয়াড়ের কারণে দ্রুত পাস, বল নিয়ন্ত্রণ, এবং কৌশলগত দক্ষতার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়। ফুটবল বড় মাঠে খেলা হওয়ায় শারীরিক শক্তি, স্ট্যামিনা এবং দীর্ঘ পাসের গুরুত্ব বেশি।