স্পোর্টস ডেস্ক
২৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
সেন্ট কিটসে চার-ছয়ের বৃষ্টিতে দারুণ এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হলো। কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন অস্ট্রেলিয়ার টিম ডেভিড। ইতিহাস গড়ে সেঞ্চুরি করলেন, টি-টোয়েন্টিতে যা অস্ট্রেলিয়ার দ্রুততম সেঞ্চুরি। তাঁর তাণ্ডবেই ২৩ বল হাতে রেখে ২১৫ রান তাড়া করে সিরিজ নিশ্চিত করল সফরকারীরা।
আগে ব্যাট করে শাই হোপ ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি করেন। ব্র্যান্ডন কিংকে সঙ্গে নিয়ে ১২৫ রানের ওপেনিং জুটিতে দলকে এনে দেন বড় স্কোর- ৪ উইকেটে ২১৪। ম্যাচের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়া ৯ ওভারেই ৮৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। তখন মনে হচ্ছিল, লক্ষ্যটা বেশ কঠিনই হবে তাদের জন্য।
কিন্তু এরপরই নামলেন টিম ডেভিড। এমন এক ইনিংস খেললেন, যেটি রেকর্ড বই নতুন করে লিখিয়ে দিল। প্রথমে মাত্র ১৬ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি, পরে সেই ইনিংসই রূপ নেয় ৩৭ বলে সেঞ্চুরিতে। যেটা তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। পুরো ইনিংসে ১১টি ছক্কা মারেন ডেভিড।
প্রথম আন্তর্জাতিক সিরিজেই দুর্দান্ত খেলে সঙ্গ দেন মিচেল ওয়েন। মাত্র ১৬ বলে ৩৬ রান করে ৪৬ বলে গড়া ১২৮ রানের পঞ্চম উইকেট জুটির অন্যতম নায়ক হন তিনিও।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এটি ছিল টিম ডেভিডের ৪২তম টি-টোয়েন্টি ইনিংস। এর মধ্যে মাত্র ৮ বারই তিনি নামেন ছয়ের উপরে ব্যাটিং করতে। আজ সে সুযোগই কাজে লাগিয়ে রূপ দেন বিধ্বংসী ইনিংসে। অধিনায়ক মার্শ যখন খোঁড়াতে খোঁড়াতে আউট হলেন, তখন ডেভিড খেলতে নামেন। শুরুতে ৭ বলে ১৫ রানে ছিলেন। এরপর মোতি'র করা ১০ম ওভারে টানা চারটি ছক্কা মেরে ম্যাচটাই ঘুরিয়ে দেন।
পরের ওভারে হোসেইনের বলে আরও দুই ছক্কা ও এক চারে পৌঁছান ১৬ বলে ফিফটিতে। চেজের একমাত্র ওভারে সিঙ্গেল না নিয়ে নিজেই স্ট্রাইক রাখেন, আর তাতেই তিনটি ছক্কা তুলে নেন। ম্যাচ তখন রান-প্রতি-বলে নেমে এসেছে। এত বেশি বল মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছিল যে, আম্পায়ারদের বারবার নতুন বল আনাতে হচ্ছিল।
৯০ রানে থাকা অবস্থায় ডিপ মিডউইকেটে কিং ক্যাচ ফেলেন, সেঞ্চুরির আগে সেটাই ছিল একমাত্র সুযোগ। এরপর অবশ্য শঙ্কা ছিল, ওয়েন আগে ম্যাচ শেষ করে ফেলেন কি না। রভম্যান পাওয়েল বাউন্ডারির দড়িতে পা দিয়ে ছক্কা উপহার দিলে সেই আশঙ্কাও দূর হয়। আর ডেভিড পেরিয়ে যান গত বছর জশ ইনলিসের করা ৪৩ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড।

এর আগে ক্যারিবীয়দের ঘরের মাঠে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান অধিনায়ক হোপ। এ ইনিংসের মাধ্যমে তিনি হয়ে গেলেন ক্রিস গেইলের পর দ্বিতীয় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান, যাঁর সব ফরম্যাটে সেঞ্চুরি আছে। শুরুটা ধীরগতির ছিল- ৭ বলে ৫ রান। এরপর ম্যাক্সওয়েলের এক ওভারে চার ও টানা দুই ছক্কা মেরে ছন্দে ফেরেন। এরপর ওয়েনের বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে ম্যাচে নিজের আধিপত্য জানান দেন।
২৬ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন হোপ, কিং করেন ৩০ বলে। এরপর দ্রুত এগোতে থাকেন শতকের দিকে। জাম্পার এক ওভারে টানা দুই ছক্কায় হোপকে ৯২ রানে নিয়ে যান। তবে ৯২ থেকে ১০০ যেতে লাগে ৮ বল। ৫৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুর্দান্ত শুরু করলেও প্রশ্ন ছিল, পোস্টেজ স্ট্যাম্প সাইজের মাঠে কত রান যথেষ্ট হবে। ১৫ থেকে ১৮ ওভারে ৩৬ রান তুলতেই বোঝা যাচ্ছিল, তারা একটু থেমে গেছে। রাদারফোর্ড ১৩ বলে করেন মাত্র ১২।
এই ম্যাচে যেটি আলাদা করে চোখে পড়েছে, তা হলো শন আবোটের বোলিং। ম্যাট কুহনেম্যানের জায়গায় দলে ফিরেই ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে উইকেট না পেলেও দেন ১৪টি ডট বল। পাওয়ার প্লেতে দুটি ওভারেই মাত্র ১১ রান দেন। কিং-হোপ জুটির সময় ৯ম ওভারে ৩ রান দেন, ১৭তম ওভারে শেষ ওভারটা করেন অসাধারণভাবে।
নাথান এলিসও ১৮তম ওভারে ৬ রান দিয়ে হোপ-রাদারফোর্ডকে আটকে রেখেছিলেন। ফিল্ডিংয়ে কিছু ভুল হলেও ডেভিডের ব্যাটিং এমন ছিল যে, সেসব আর চোখে পড়েনি।