images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

টেস্ট ক্রিকেটে বড় রদবদলের পথে আইসিসি

স্পোর্টস ডেস্ক

২১ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৬ পিএম

টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। লাল বলের ক্রিকেটকে দুই স্তরে ভাগ করতে চলেছে আইসিসি। এর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে সংস্থাটি।

সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন চেয়ারম্যান জয় শাহ এবং সিইও সঞ্জয় গুপ্তর নেতৃত্বে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আট সদস্যের এই ওয়ার্কিং কমিটিকে বছরের শেষ নাগাদ বোর্ডে প্রস্তাবনা জমা দিতে বলা হয়েছে।

যদি প্রস্তাবটি পাস হয়, তাহলে ২০২৭-২০২৯ সালের ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শুরু হবে দুই বিভাগের নতুন ফরম্যাট। এখন পর্যন্ত নয় দলের এই টুর্নামেন্টে দুই ডিভিশনে মোট ১২ দলকে ভাগ করার চিন্তা করা হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগে থাকবে ছয়টি করে দল।

আইসিসির নতুন সিইও গুপ্ত, যিনি সম্প্রতি ভারতের সম্প্রচার সংস্থা জিওস্টার থেকে যোগ দিয়েছেন, এই কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তার সঙ্গে থাকবেন ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)-এর সিইও রিচার্ড গোল্ড এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান টড গ্রিনবার্গ।

দুই ভাগে ভাগের ধারণা প্রথম আসে গত জানুয়ারিতে, মেয়েদের অ্যাশেজ চলাকালে সিএ এবং ইসিবির এক বৈঠকে। বিশেষ করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই ফরম্যাটে সবচেয়ে আগ্রহী। তারা চায়, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত যেন প্রতি তিন বছরে অন্তত দুইবার করে একে অপরের মুখোমুখি হয়। যদিও এটি সম্প্রচারকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে, ইংল্যান্ড এই প্রস্তাবে পুরোপুরি সায় দেয়নি- কারণ এতে ‘বিগ থ্রি’ আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে, আর বাকি দেশগুলো আরও পিছিয়ে পড়বে।

ওয়ার্কিং কমিটিতে গুপ্ত, গোল্ড এবং গ্রিনবার্গের উপস্থিতি থেকে বোঝা যায় এই প্রস্তাব পাস হওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে। তবে মূল চ্যালেঞ্জ হবে প্রমোশন ও রেলিগেশনের নিয়ম কী হবে, এবং ছোট দলগুলো কীভাবে টিকে থাকবে তা খুঁজে বের করা।

এই বড় পরিবর্তনের জন্য আইসিসির ১২ পূর্ণ সদস্য দেশের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন দরকার। ছোট দলগুলোকে দ্বিতীয় বিভাগে শুরু করতে হতে পারে, তাই তাদের জন্য বাড়তি আর্থিক সহায়তার কথাও ভাবছে আইসিসি।

বর্তমান র‍্যাঙ্কিং অনুসারে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম বিভাগে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় বিভাগে যুক্ত হতে পারে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড।

এদিকে সিঙ্গাপুরে আয়োজিত বৈঠকে আইসিসি জানায়, পরবর্তী তিনটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডে। প্রথম তিন আসরের মতো এবারও ফাইনাল হয়েছে ইংল্যান্ডে। গত মাসে লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

এছাড়া আইসিসি নতুন একটি বৈশ্বিক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট নিয়েও আলোচনা করেছে, যার সম্ভাব্য নাম হতে পারে ওয়ার্ল্ড ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ। এতে আইপিএল, দ্য হান্ড্রেড ও বিগ ব্যাশের দলগুলো অংশ নিতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব উত্থাপন হয়নি। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে বিসিসিআই, সিএ এবং ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছিল টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগ। কিন্তু ২০১৪ সালে মূল সম্প্রচার সংস্থা ইএসপিএন স্টার অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় টুর্নামেন্টটি বন্ধ হয়ে যায়।

আইসিসি এবার নিজ উদ্যোগে এই টুর্নামেন্ট চালুর ইচ্ছা দেখালেও বিষয়টি খুব জটিল। কারণ, আইপিএলের অনেক মালিক এখন দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লীগ ক্রিকেট এবং আরব আমিরাতের আইএলটি২০-তেও দল কিনে নিয়েছে। এমনকি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, দিল্লি ক্যাপিটালস, লখনউ সুপারজায়ান্টস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এরই মধ্যে ‘দ্য হান্ড্রেড’-এর চারটি দল কিনতে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি তারকারা একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেন। তাই তারা কোন দলের হয়ে নামবে, সেটা নির্ধারণ করাও সহজ হবে না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৭ সালকে লক্ষ্য করেই শুরু হতে পারে নতুন এই বৈশ্বিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। কারণ ওই সময় শেষ হবে আইসিসির বর্তমান ৩ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় সম্প্রচার চুক্তি।