স্পোর্টস ডেস্ক
২১ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্বপ্নের টি-টোয়েন্টি অভিষেকটা যেন ঠিক সিনেমার মতো হলো মিচেল ওয়েনের। ম্যাচ শেষে জানালেন, ব্যাট করার সময় নয়, বরং বল করতে গিয়েই তিনি বেশি নার্ভাস ছিলেন। ছয়ে নামা তার জন্য নতুন ভূমিকা হলেও, নিজের ব্যাটিং পদ্ধতিতে কোনো বড় পরিবর্তন আনেননি, ঠিক যেমনটা করেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে।
টি-টোয়েন্টি অভিষেকে অর্ধশতক করা তৃতীয় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার হিসেবে ২৩ বছর বয়সি ওয়েন নাম লেখালেন রিকি পন্টিং ও ডেভিড ওয়ার্নারের পাশে। মাত্র ২৭ বলে ৫০ রান করে দলকে তিন উইকেটের জয় এনে দেন, সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ১-০ তে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়াকে।
এর আগে বল হাতেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। নিজের একমাত্র ওভারে তুলে নেন উইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপের (৫৫) উইকেট। সেই উইকেটের পরেই ভেঙে পড়ে ক্যারিবীয় ব্যাটিং, মাত্র ৩০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। এই ধসটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ম্যাচ শেষে ওয়েন বলছিলেন, “প্রথম ওভারে দারুণ নার্ভাস ছিলাম। হেটমায়ার প্রথম বলেই ছয় মারার পর তো মনে হচ্ছিল আমি বুঝি ওই ওভারেই ৩৬ রান দিয়ে ফেললাম! ভাগ্য ভালো, শাই হোপ তুলে মেরে আউট হলো, আমার প্রথম উইকেট। প্রথম ছয় বল খুব চাপের ছিল, কিন্তু ওটা পেরিয়ে যাওয়া গিয়েছিল বলে এখন স্বস্তি লাগছে।”

ব্যাট হাতে তার ইনিংসটা আরও চমকপ্রদ ছিল কারণ, ছয়ে নেমে এটিই তার প্রথম অর্ধশতক। সম্প্রতি বিগ ব্যাশে হোবার্ট হ্যারিকেনসের হয়ে ওপেনার হিসেবে দুটি সেঞ্চুরি করে নজর কেড়েছিলেন। কিন্তু মিডল অর্ডারে আগের ১৬ ইনিংসে তার রান ছিল মাত্র ১৭৪, গড় ১৪.৫০, স্ট্রাইকরেট ১৪৮.৭১, সবচেয়ে বেশি রান ৩৪। ছয়ে ব্যাট করেছিলেন মাত্র দু’বার।
ওয়েন বলেন, “স্পিন দিয়ে শুরু হলেও খুব বেশি ফিল্ড দেখিনি। প্রতিটা বলের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। ছয়ে নেমেও আমার ব্যাটিং পরিকল্পনা ওপেন করার মতোই ছিল। যখন নামলাম, তখন রান রেট দরকার ছিল প্রতি ওভারে ৯-১০। তাই পজিটিভ থাকাটাই ছিল মূল লক্ষ্য। যদি থিতু হতে যেতাম, তবে নিজের জন্যই ঝামেলা বাড়ত। তাই প্রথম বল থেকেই মারার মানসিকতা নিয়ে নেমেছি।”
বিশ্বকাপ সামনে রেখে ট্র্যাভিস হেড ও মিচেল মার্শ থাকবেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং পছন্দে। ম্যাথু শর্টও আছেন ব্যাকআপ হিসেবে। সে কারণেই নির্বাচকেরা ওয়েনকে মিডল অর্ডারে সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন, আর শুরুটা বেশ ভালই হলো।
বিশেষ করে স্পিনের বিপক্ষে ওয়েনের সাহসী ব্যাটিং আলাদা করে নজর কেড়েছে। মিডল ওভারে প্রায়ই বাঁহাতি স্পিন বা লেগস্পিনের বিপক্ষে আটকে যেত অজিদের মিডল অর্ডার। সেই তুলনায় ওয়েন ১২তম ওভারে আকিল হোসেনের চার বলে মেরেছেন তিনটি ছয়। এরপর আন্দ্রে রাসেলকে দুটি এবং আলজারির একটিসহ মোট ছয়টি ছয় হাঁকান তিনি।
ক্যামেরন গ্রিনের সঙ্গে তার জুটিটা ছিল চোখে পড়ার মতো। ৯ম ওভারে ৭৮ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তারা দু’জনে মিলে ৪০ বলে যোগ করেন ৮০ রান। গ্রিন মাঝপথে মতি থেকে দুটি দুই রান নেন, পরে ছয় ও চার মারেন। এছাড়া জোসেফ ও হোল্ডারের বলেও মারেন চারটি ছয়। ওয়েন বলেন, “গ্রিনির (গ্রিন) সঙ্গে প্রথমবার একসঙ্গে খেললাম। দারুণ লাগছিল, আমরা দু’জনই শান্ত ছিলাম, নিজের প্রসেসে ছিলাম।”
ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার পেসার বেন ডারশুইস, যিনি ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন, ইএসপিএনকে বলেন, “গত ৯ মাসে ওকে বোলিং করে আমি নিজেই জানি, সে এখন অন্য গ্রহে খেলছে। সামান্য ভুল করলেই ও ছক্কা মারছে। ৬টা ছক্কা, কোনো চার নেই, এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় ও কতটা আক্রমণাত্মক।”
মিচেল ওয়েনের জন্য এই অভিষেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে আরও একটি কারণে। ম্যাচের আগে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ তুলে দেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও হোবার্ট হ্যারিকেনস অধিনায়ক নাথান এলিস। গ্যালারিতে ছিলেন ওয়েনের বাবা-মা ও সঙ্গিনী।
ওয়েন বলেন, “ভীষণ স্পেশাল একটা মুহূর্ত। এলিস যেভাবে বলল, আর বাবা-মাকে পাশে পেয়ে তো আরও ভালো লাগল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আসা সহজ নয়, কিন্তু তারা সবসময়ই আমার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছে। এটা শুধু আরেকটা উদাহরণ। কৃতজ্ঞ যে তারা এটা উপভোগ করতে পেরেছে।”