images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

লজ্জার হারের পর কিংবদন্তিদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

স্পোর্টস ডেস্ক

১৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৯ এএম

অস্ট্রেলিয়ার কাছে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। এই বিপর্যয়ের পর জরুরি বৈঠক ডেকেছে তারা। সেই বৈঠকে যুক্ত করা হয়েছে কিংবদন্তি তিন ক্রিকেটার ব্রায়ান লারা, ক্লাইভ লয়েড এবং ভিভ রিচার্ডসকে।

এই তিন কিংবদন্তি যোগ দেবেন শিবনারায়ণ চন্দরপল, ডেসমন্ড হেইন্স ও ইয়ান ব্র্যাডশরদের সঙ্গে। তারা সবাই মিলে থাকবেন ‘ক্রিকেট স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অফিসিয়েটিং কমিটি’-তে, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হবে। বোর্ডের ভাষায়, এই পারফরম্যান্স ছিল “অত্যন্ত হতাশাজনক”।

সিরিজের প্রথম দুই টেস্টেও ধসে পড়েছিল উইন্ডিজ। তবে সবথেকে বড় দুঃস্বপ্নটা এল শেষ টেস্টে, কিংস্টনে। মাত্র ১৪.৩ ওভারে ২৭ রানে অলআউট হয়ে যায় দল।এটি টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। ১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ডের ২৬ রানের পর এটিই সবচেয়ে কম। এর চেয়েও অবাক করা তথ্য, এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রান; আগের রেকর্ড ছিল ৪৭।

শুধু তাই নয়, এই ইনিংসে সাতজন ব্যাটার শূন্য রানে আউট হন যা টেস্ট ইতিহাসে প্রথম! আর টপ অর্ডারের ছয় ব্যাটার মিলে করেছেন মাত্র ৬ রান, টেস্টে এটিও একটি নতুন ‘নজির’।

সিরিজের পর বোর্ড সভাপতি ড. কিশোর শ্যালো বলেছেন, পুরো ক্যারিবীয় ক্রিকেট সমাজ এই ব্যর্থতার পর "অনিদ্রার রাত" কাটাবে। তবে তিনি ধৈর্যের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “আমরা এখন নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি।”

“প্রতিটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ভক্তের মতো আমিও এই টেস্ট হারটা মনের মধ্যে গভীরভাবে অনুভব করেছি,” বলেন শ্যালো। “আগামী কিছুদিন হয়তো আমাদের ঘুম হবে না, খেলোয়াড়দেরও না, যাদের কাঁধে এই ব্যর্থতার ভার রয়েছে। তবে এই দুঃখকে যাত্রার শেষ ভাবলে চলবে না। আমরা এখন পুনর্গঠনের পথে, ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করছি এবং সেই আগুনটা আবার জ্বালাতে চাই, যেটা এক সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে বিশ্বে এক নাম্বার বানিয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, “উন্নতির রাস্তা কখনোই সহজ নয়। সময়, ধৈর্য আর বিশ্বাস লাগে। সামনে কঠিন সময় আসবে, কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়দের প্রতিভা আর অঙ্গীকারে আমার পূর্ণ আস্থা আছে। যদি ওরা নিজেদের সঠিকভাবে প্রস্তুত করে। ইতোমধ্যে আমরা বল হাতে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছি। ব্যাটাররাও আগ্রহী, কিন্তু এবার তাদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে উন্নতির পথে।”

লারা, রিচার্ডস এবং লয়েডকে বোর্ডে রাখার বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ নয় বলেও নিশ্চিত করেন শ্যালো। তিনি বলেন, “ওরা কেবল গ্ল্যামার বাড়াতে আসছেন না, আগামী দিনের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গড়ার পথেই ওদের সক্রিয় ভূমিকা থাকবে।”

“এই মানুষগুলো আমাদের স্বর্ণালী যুগ তৈরি করেছেন, ওদের অভিজ্ঞতা আর দৃষ্টিভঙ্গি অমূল্য। আমরা চাই এই বৈঠক থেকে বাস্তবসম্মত, ফলপ্রসূ পরিকল্পনা বেরিয়ে আসুক।”

শ্যালো আরও বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আমি বলে আসছি, এই সময়টা একতায় বিশ্বাস করার, ভাগাভাগি নয়। আমরা যদি সত্যি এগিয়ে যেতে চাই, তাহলে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। ভক্ত, খেলোয়াড়, কোচ, কিংবদন্তি আর বোর্ড কর্মকর্তাদের একসঙ্গে পথ চলতে হবে। কাজ অনেক বাকি, কিন্তু সেটি করতে হবে উদ্দেশ্য নিয়ে, আর একসঙ্গে।”

এই ব্যর্থতার পর আবার মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজে। ২১ জুলাই শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ। এরপর আগস্টে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাদা বলের সিরিজ খেলবে তারা।