স্পোর্টস ডেস্ক
০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:৪১ পিএম
এক বছর আগেই প্যারিস সেন্ট জার্মেই ছেড়েছেন কিলিয়ান এমবাপে। এবার সেই পুরোনো দলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন নতুন ক্লাবে, বড় মঞ্চে। ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বুধবার মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ ও পিএসজি। আর এই ম্যাচেই রিয়ালের জার্সিতে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে প্রথমবার মাঠে নামার সম্ভাবনা এমবাপের।
পিএসজিতে সাতটা মৌসুম কাটিয়ে ক্লাবটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন এমবাপে। ৩০৮ ম্যাচে করেছেন ২৫৬ গোল। এমন এক কিংবদন্তিকে ঘিরে স্মৃতি যতটা গৌরবময়, বিদায়টা ততটাই বিতর্কিত। ফরাসি ক্লাবটির অনেকে মনে করেন, শেষ দিকের মৌসুমগুলোতে এমবাপে ছিলেন কেবল অপেক্ষমান- কখন সুযোগ হবে শৈশবের প্রিয় ক্লাব রিয়ালে যাওয়ার।
কাতারি প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফির অধীনে থাকা পিএসজি চেয়েছিল চুক্তির বিনিময়ে কিছু অর্থ আদায় করতে। কিন্তু এমবাপে শেষ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ শেষ করে ফ্রি ট্রান্সফারে যোগ দেন রিয়ালে। এতেই ক্ষুব্ধ পিএসজি। এই নিয়ে শুরু হয় তিক্ত আইনি লড়াই। এমবাপে দাবি করেন, পিএসজি এখনো তাঁর ৫৫ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৬৪ মিলিয়ন ডলার) বেতন ও বোনাস বকেয়া রেখেছে।
সাম্প্রতিক ঘটনায় নতুন মোড় আসে। এমবাপে তাঁর সাবেক ক্লাবের বিরুদ্ধে করা 'মানসিক হয়রানির' অভিযোগ তুলে নেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। যদিও প্যারিসের প্রসিকিউটর দপ্তর গত মাসে জানিয়েছিল, ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে এমবাপেকে 'আলাদা করে রেখে' ক্লাব যে আচরণ করেছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পিএসজি তখন এমবাপেকে দলের অনুশীলন স্কোয়াড থেকে আলাদা করে এমন খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলন করিয়েছিল, যাঁদের ছাড়তে চাচ্ছিল ক্লাব। এমনকি প্রাক-মৌসুম জাপান সফরেও তিনি যেতে পারেননি। পরে অবশ্য কোচ লুইস এনরিকের দলে তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
সব কিছুর পরও, রিয়ালে এমবাপে যেন নতুন জীবন পেয়েছেন। ২৬ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড লা লিগা মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৬ ম্যাচে করেছেন ৪৩ গোল। কিন্তু ক্লাব বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত খুব একটা মাঠে নামা হয়নি তাঁর। গ্রুপ পর্বে খেলতে পারেননি পেটের সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায়। তাঁর অনুপস্থিতিতে রিয়ালের তরুণ ফরোয়ার্ড গনজালো গার্সিয়া দারুণভাবে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে রিয়ালের পাঁচ ম্যাচেই খেলেছেন, করেছেন চার গোল।
সেই চার গোলের একটি আসে কোয়ার্টার ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ৩-২ গোলের জয়ের ম্যাচে। তবে ম্যাচ জেতানো গোলটা দেন বদলি হিসেবে নামা এমবাপে, অতিরিক্ত সময়ের অ্যাক্রোবেটিক ওভারহেড কিকে। ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ জাবি আলোনসো বলেন, "এখনো শতভাগ ফিট নয় এমবাপে, তবে প্রতিদিনই উন্নতি করছে। সামনে তিন দিন আছে, আমরা তাকে সেমিফাইনালের জন্য প্রস্তুত করছি।"
সব কিছু মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, সেমিফাইনালের বড় মঞ্চেই হতে যাচ্ছে এমবাপের এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে প্রথমবার শুরুর একাদশে সুযোগ পাওয়া। সেটা আবার পিএসজির বিপক্ষে, সেই ক্লাব যারা এমবাপেকে নিয়ে এক যুগের ইউরোপীয় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি, কিন্তু তাঁর বিদায়ের পরই জিতেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে এসেছে পিএসজি। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ১০ জনের দল নিয়েও ২-০ গোলে হারিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখকে। আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর পিএসজির কোচ লুইস এনরিকে রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বলেন, "সেমিফাইনালে কার বিপক্ষে খেলছি সেটা বড় বিষয় না। বড় বিষয় হলো আমরা সেখানে পৌঁছেছি এবং ফাইনালে যেতে চাই।"
এনরিক নিজেও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক খেলোয়াড়, খেলেছেন ৯০’র দশকে পাঁচ বছর। তাই ম্যাচটা তাঁর জন্যও বিশেষ কিছু। এদিকে, বায়ার লেভারকুজেনের দুর্দান্ত যাত্রা শেষে এবার রিয়ালের দায়িত্ব নিয়েছেন কোচ জাবি আলোনসো। তাঁর অধীনে রিয়াল কখনও চার ডিফেন্ডার, কখনও তিন ডিফেন্ডারের ফর্মেশন খেলেছে, দেখিয়েছে ট্যাকটিকসের বৈচিত্র্য।
সব মিলিয়ে, পিএসজি-রিয়াল সেমিফাইনালে এমবাপের শুরু থেকে মাঠে নামা মানে যেন এক নাটকীয় চিত্রনাট্যের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায় শুরু হওয়ার ঘোষণা। ২০১৭ সালে মোনাকোর হয়ে পিএসজির বিপক্ষে খেলার পর এই প্রথম নিজের পুরোনো ক্লাবের মুখোমুখি হচ্ছেন এমবাপে- তাও এবার রিয়ালের নীল-সাদা জার্সিতে।