স্পোর্টস ডেস্ক
২৯ জুন ২০২৫, ০৪:১২ পিএম
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের জয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত কোনটি? একবাক্যে উত্তর দিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শেষ ওভারে ডেভিড মিলারকে আউট করার সেই ক্যাচ, যা নিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। ম্যাচের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জিওহটস্টারে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণা করেন রোহিত, তুলে ধরেন মাঠে তার মনের ভাবনাগুলো।
শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ১৬ রান। হার্দিক পান্ডিয়ার প্রথম বল ছিল এক ওয়াইড ফুল টস, যেটা সোজা লং-অফ দিয়ে মারেন মিলার। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সূর্যকুমার যাদব। বল লুফে নেন, কিন্তু শরীরের ভারে সীমানার দিকে চলে যাচ্ছিলেন। সীমানার বাইরে যাওয়ার আগেই বলটা ছুঁড়ে দেন ওপরে, নিজে ফিরে এসে ফের ক্যাচটা ধরে নেন।
রোহিত বলেন, "সেই মুহূর্তে আমাদের সবার হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছিল। আম্পায়াররাও থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠিয়েছিলেন ক্যাচটা ক্লিন ছিল কিনা সেটা যাচাই করতে।" তিনি আরও বলেন, "আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম ছয় হয়ে গেছে। কারণ আমি নিজে লং-অন থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল, বলটা সহজেই সীমানা পার হয়ে যাবে। তবে সম্ভবত হাওয়ার দিক বদলানোয় বলটা একটু টেনে নিয়ে আসে।"
সেই মুহূর্তে রোহিত আর সূর্য দাঁড়িয়ে ছিলেন একসাথে। রোহিত বলেন, "আমি ওকে বললাম, ‘তুইই বল, আমি স্ক্রিনে দেখছি না।’ সূর্য বলল, ‘না না, আমি ধরেছি।’ কিন্তু একটু পরেই ওকে আবার বলতে শুনলাম, ‘মে বি, জানি না, কিন্তু ধরেছিলাম।’ পরে থার্ড আম্পায়ার যখন জুম করে দেখালেন, বল বা পা সীমানা ছুঁয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই, তখন একটু স্বস্তি পাই। তবে স্কোরবোর্ডে না আসা পর্যন্ত তো কিছুই নিশ্চিত না!"
সেই ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলতে পেরেছিল মাত্র ৮ রান। ফলে ৭ রানের দারুণ এক জয় তুলে নেয় ভারত। এটি ভারতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিল ভারত। কোহলির প্রথম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি আর রোহিতের দ্বিতীয় ওভারে দুটি- ৮ বলেই স্কোরবোর্ডে ২৩। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘটে ছন্দপতন। কেশভ মহারাজ ফিরিয়ে দেন রোহিত ও ঋষভ পন্থকে, এরপর কাগিসো রাবাদা আউট করেন সূর্যকুমারকে। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ভারতের ৩ উইকেট নেই!
রোহিত বলেন, “তখন ড্রেসিংরুমে খুব টেনশনে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, প্রতিপক্ষকে আমরা ম্যাচে ফেরত এনেছি।” চতুর্থ উইকেটে অক্ষর প্যাটেল ও কোহলির জুটি আবার খেলায় ফিরিয়ে আনে ভারতকে। ৫৪ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন দুজন। এরপর কোহলি-দুবে মিলে যোগ করেন আরও ৫৭ রান। রোহিত বলেন, “অনেকে অক্ষরের ইনিংস নিয়ে তেমন কিছু বলছে না। কিন্তু ওর ৩১ বলে ৪৭ রানটা পুরো ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়। আর কোহলি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থেকে গেল, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এরপর দুবে, আকসার, হার্দিকরা এসে নিজেদের মতো খেলতে পেরেছে।”
কোহলি যেখানে ফাইনালে খেলেন ৫৯ বলে ৭৬ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস, তার আগের সাত ম্যাচ মিলিয়ে ছিল মাত্র ৭৫ রান! রোহিত বলেন, “শুরুর ওভারেই যদি তিনটা চার আসে, তবে আত্মবিশ্বাসটা অনেক বেড়ে যায়। কোহলির অভিজ্ঞতা ও মানসিক দৃঢ়তাই তাকে টেনে নিয়েছে। আমি নিশ্চিত, ও ভেবেছিল ‘আজই দিন, পেছনে কী হয়েছে, তা নিয়ে ভাবলে চলবে না।’ আর সেভাবেই খেলেছে। দুর্দান্ত ইনিংস।”
এক বছর আগে নিউইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল আজও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে টাটকা। সূর্যকুমারের ক্যাচ, কোহলির ইনিংস আর গোটা দলের দারুণ সমন্বয়, সব মিলিয়েই যে ছিল এক পূর্ণাঙ্গ চ্যাম্পিয়নশিপ গল্প।