images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

হ্যাজলউডের ফাইফারে তিন দিনেই ক্যারিবীয়দের হারাল অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস ডেস্ক

২৮ জুন ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম

বার্বাডোস টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে দারুণ এক নাটক। শেষ বিকেলের আলোকস্বল্পতার মধ্যেও নাথান লায়নের টানা দুই বলে দুই উইকেট, আর তাতেই ১৫৯ রানে জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া। এক সেশনে অলআউট হয়ে গেলো উইন্ডিজরা।

শেষ সেশনে যখন ক্যারিবিয়ানদের হাতে ছিল তিন উইকেট, তখনও অনেকেই ভাবছিলেন, হয়তো ম্যাচ গড়াবে চতুর্থ দিন পর্যন্ত। কারণ শামার জোসেফ মারমুখী ব্যাটিং করছিলেন, আর জাস্টিন গ্রিভস ছিলেন উইকেটে। তবে হ্যাজলউডের ঘূর্ণিতে তাল হারিয়ে উইকেট ছুঁইয়ে গেল শামার, পরের বলেই শর্ট লেগে ক্যাচ তুলে দিলেন জেডেন সিলস- ম্যাচও শেষ।

অস্ট্রেলিয়ার এই জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান হ্যাজলউডের। ইনিংসের শুরুতে যেমন আগুন ঝরিয়েছেন, শেষেও রেখে দিয়েছেন ছাপ। তাঁর বাউন্সি লেন্থ আর নিখুঁত লাইন-লেন্থ উইন্ডিজ ব্যাটারদের খেলতেই দেয়নি। এদিকে, শেষ উইকেটের আগে ম্যাচটা একটু হলেও জমে উঠেছিল। শামার একপ্রস্থ মারকুটে ব্যাটিং করে কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে স্যাম কনস্টাস তাঁর একটা ক্যাচ ফেলেও দেন। তবে শেষ হাসি হাসলেন লায়ন, তাঁর স্পিনেই শেষ দুই উইকেট।

ট্রাভিস হেড এই ম্যাচের আসল নায়ক। বার্বাডোজের উইকেটে ব্যাটিং ছিল কঠিন, বল আচমকা নিচু হচ্ছিল, তবে হেড তার মাঝেও তুলে নেন দুই ইনিংসেই ফিফটি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ বলে ফিফটি করে ম্যাচকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে নিয়ে যান। যদিও একটা জীবন পেয়েছিলেন তিনি। হেডের সঙ্গে দুর্দান্ত সঙ্গ দেন বেউ ওয়েবস্টার। অল্প টেস্ট ক্যারিয়ারে এটিই তাঁর তৃতীয় ইনিংস, কিন্তু উইকেটের চরিত্র বুঝে খেলে ফিফটি তুলে নেন ১০০ বলে। অফ সাইডে ব্যাকফুটে খেলে দারুণ সব শট উপহার দেন তিনি।

এরপর নামে কেরি ঝড়। ওয়েবস্টার আউট হওয়ার পরই আগ্রাসী হয়ে ওঠেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। সিলসের এক ওভারে ১৪ রান, চোখজুড়ানো স্ট্রেইট ছক্কা আর গ্রিভসের বলে লং অফে বিশাল ছক্কায় ৪০ বলে ফিফটি করে ফেলেন। শেষ দিকে লায়ন ও হ্যাজলউডকে সঙ্গে নিয়ে তিনি একাই স্ট্রাইক নেন, ফিল্ডারদের পেছনে সরিয়ে বড় শট খেলে যান। শেষ পর্যন্ত শামার জোসেফ হ্যাজলউডকে আউট করে পান পাঁচ উইকেট, যা প্রথম ইনিংসে হাতছাড়া হয়েছিল।

চতুর্থ ইনিংসে মাত্র ২১৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেই ধাক্কা খায় ক্যারিবিয়ানরা। প্রথম ওভারেই ব্র্যাথওয়েট স্টার্কের বলে ধরা পড়েন। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ক্যাম্পবেল ও কার্টি। কিন্তু ক্যাম্পবেল নতুন করে হ্যাজলউডকে ল্যাপ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন কেরিকে। পরের বলেই কিংয়ের ব্যাটে লেগে বল যায় গালিতে, ক্যামেরন গ্রিন ঝাঁপিয়ে তালুবন্দি করেন।

দুর্ভাগ্য হ্যাজলউডের, হ্যাটট্রিক বলটা খেলেনইনি রোস্টন চেইস। তবে দুই ওভার পরেই চেইসকেও ফিরিয়ে দেন। এরপর গুড়িয়ে দেন কার্টিকে। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল আলোর কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু মার্নাস লাবুশেন ফিল্ডিংয়ে এসে আলজারিকে রান আউট করেন সরাসরি থ্রোতে। এরপর হ্যাজলউড ও লায়নের হাত ধরে বাকি উইকেটগুলো তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচের পুরো সময়জুড়ে ফিল্ডিং বিপর্যয় ভুগিয়েছে ক্যারিবিয়ানদের। কোচ ড্যারেন স্যামি সকালে স্লিপে ক্যাচ অনুশীলন করিয়েও লাভ পাননি। এমন ব্যাটিং উইকেটেও ৭টি ক্যাচ মিস করল উইন্ডিজ, এভাবেই ম্যাচে নিজেরাই পিছিয়ে পড়লো তারা। সব মিলিয়ে, ব্যাটে হেড-ক্যারি, বলে হ্যাজলউড-লায়নের দাপটে একেবারে শেষ সেশনেই ম্যাচ ছিনিয়ে নিল অজিরা। এই ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা, আর উইন্ডিজ খুঁজছে নতুন করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পথ।