স্পোর্টস ডেস্ক
২৭ জুন ২০২৫, ১১:১৫ এএম
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান প্রথম টেস্টে একের পর এক বিতর্কিত আম্পায়ারিং সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রধান কোচ ড্যারেন স্যামি। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে টিভি আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টকের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
খেলা শেষে ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথের সঙ্গে আলোচনায় বসেন স্যামি। তিনি জানান, শুধু এই ম্যাচেই নয়, ইংল্যান্ডে শেষ ওয়ানডে সিরিজে হোল্ডস্টকের আম্পায়ারিং নিয়েও তার মনে সন্দেহ জন্মেছিল। সেখানে দুই ম্যাচে টিভি ও এক ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন হোল্ডস্টক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুটি সিদ্ধান্ত ছিল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। একটি ছিল প্যাট কামিন্সের বলে অধিনায়ক রস্টন চেইসের এলবিডব্লিউ। ক্যারিবিয়ানদের দাবি, ব্যাটে লেগে বল প্যাডে লেগেছিল। আরেকটি ছিল শাই হোপের ক্যাচ আউট, যেটি দারুণ ডাইভ দিয়ে নিয়েছিলেন অ্যালেক্স কেরি। মাঠের আম্পায়াররা সিদ্ধান্তটা টিভি আম্পায়ারের হাতে তুলে দেন, যিনি সেটিকে ‘ক্লিন ক্যাচ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
স্যামির ভাষায়, “আমরা কেবল বুঝতে চাই, আসলে প্রক্রিয়াটা কী? আমরা শুধু চাই সিদ্ধান্তে যেন ধারাবাহিকতা থাকে। যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে উভয় দলের জন্যই সেটা যেন সমানভাবে প্রযোজ্য হয়।” কাউকে সরাসরি দায়ী করতে চান না বলে জানালেও পরে স্পষ্ট করেই বলেন, “হ্যাঁ, আমি হোল্ডস্টকের কথাই বলছি। আপনি তো চাইবেন না এমন আম্পায়ারিংয়ের মধ্যে পড়ে কোনো ম্যাচ খেলতে। মনে হতেই পারে, এই আম্পায়ার কি আমাদের বিপক্ষে? বারবার এমন হলে তো প্রশ্ন উঠবেই।”
“আমরা শুধু চাই, সবকিছু যেন স্বচ্ছ হয়। খেলায় আম্পায়ারদের প্রতি আস্থা রাখতে চাই, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তে সেই বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যায়।” এই বিষয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাবে কি না, জানতে চাইলে স্যামি শুধু বলেন, “এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। অপেক্ষা করুন।”
চেইস যখন ৪৪ রানে ব্যাট করছিলেন, তখন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এলবিডব্লিউ দেন টিভি আম্পায়ার। অথচ রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল ব্যাটে লেগে প্যাডে আঘাত করেছিল—এমনটা মনে করেন ক্যারিবিয়ানরা। আর শাই হোপের ক্যাচ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন স্যামি। বল কেরির গ্লাভসে যাওয়ার আগে ঘাসে ছোঁয়া লেগেছিল কি না, তা নিয়ে ছিল দ্বিধা। “ট্রাভিস হেডের ক্যাচটা যেভাবে ‘নট আউট’ দেওয়া হলো, হোপের ক্ষেত্রে তো আরও সন্দেহ ছিল। তাহলে এটা আবার আউট হয় কীভাবে?” বলেন স্যামি।
“আমি শুধু বলছি, যেটা দেখছেন সেটা অনুযায়ী বিচার করুন। দুইটা ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মানদণ্ড কীভাবে হয়?” তবে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকেও প্রশ্ন এসেছে। ম্যাচের প্রথম ওভারে চেইসের বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্তে সন্দেহ ছিল তাদের। ব্যাট-প্যাড গ্যাপে বল ঢুকেছিল বলে দাবি করেন মিচেল স্টার্ক। কিন্তু টিভি আম্পায়ার বলেছিলেন, প্রমাণ যথেষ্ট নয়।
স্টার্ক বলেন, “আমাদের কাছে মনে হয়েছে রিপ্লের ছবি ও স্নিকো একসাথে মেলেনি। যেটা চেইস পেয়েছে, তাতে আমরা ৪০ রান হারিয়েছি।” তবে স্টার্ক জানিয়েছেন, হেডের আগের দিনের ক্যাচটাও তাদের দৃষ্টিতে ‘আউট’ ছিল।
নিজের খেলোয়াড়দের এসব নিয়ে মুখ না খুলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্যামি। “আমরা জানি, এই বিষয়ে মন্তব্য করলে জরিমানা হয়। আমি চাই না খেলোয়াড়রা এসব নিয়ে মনোযোগ হারাক। আমরা অনেক ক্যাচ ছেড়েছি, নিজেই নিজেদের বিপক্ষে খেলেছি। কিন্তু তবুও এই পরিস্থিতিতেও আমরা জয়ের অবস্থানে আছি,” যোগ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ। শেষ কথা হিসেবে বলেন, “মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কিন্তু আমরা চাই, উভয় দলের জন্য সিদ্ধান্তগুলো যেন ন্যায্য হয়।”