স্পোর্টস ডেস্ক
১৫ জুন ২০২৫, ০২:২৩ পিএম
ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরের শেষদিকে অ্যাশেজে উসমান খাজা দলে থাকবেন ধরে নেওয়া হলেও মার্নাস লাবুশেনের জায়গা এখন বেশ অনিশ্চিত। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরকে ঘিরে ১৯ বছর বয়সী স্যাম কনস্টাসকে ফিরিয়ে আনার আলোচনা জোরাল হয়ে উঠেছে।
স্টিভেন স্মিথের আঙুলের চোট হয়তো লাবুশেনের জন্য সুযোগ হতে পারে দলে টিকে থাকার। লর্ডসে তিনি দলে জায়গা পেয়েছিলেন মূলত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সদ্য শেষ হওয়া চক্রে নিয়মিত থাকার কারণে। তবে এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে বিষয়টি, যেখানে সেই বিষয়টিও হয়তো তাকে বাঁচাতে পারবে না।
স্মিথের চোট কতটা গুরুতর, তা স্পষ্ট হওয়ার পর আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাড়তি ব্যাটার নেওয়া হবে কি না, তা ঠিক করবেন নির্বাচকরা। তবে যেটাই হোক না কেন, ১৯ বছর বয়সী কনস্টাসকে আবারও ওপেনিংয়ে দেখা যাব- এটাই এখন সবচেয়ে সম্ভাব্য দৃশ্যপট।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড বলেন, “এই টেস্টের আগে ওপেনিং জুটির বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও আমি বলেছিলাম, ওপেনিংয়ে স্থায়ীত্ব দরকার। সেখানে বারবার পরিবর্তন হয়েছে। হয়তো এবার স্থায়ী একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।”
লর্ডসে উসমান খাজার সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল লাবুশেনকে, টেস্টে যা তার প্রথম অভিজ্ঞতা। মূলত কামরন গ্রিনকে তিনে খেলানোর জায়গা করে দিতেই তাকে ওপেনিংয়ে নামানো হয়েছিল। কিন্তু তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ ও ২২ রানের ইনিংস, ডব্লিউটিসি সাইকেলে তার গড় এখন ২৭.৮২।

তবুও কোচের আস্থা কমেনি লাবুশেনের প্রতি। “ও আমাদের ভবিষ্যতের বড় অংশ,” বলেন ম্যাকডোনাল্ড। “এই বয়সে কেউ যদি ৪৫-৪৬ গড়ে রান করে, তাকে নিয়ে ভাবতেই হবে। আমাদের দলে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার আছে যারা ক্যারিয়ারের শেষ দিকে, আবার কিছু তরুণও আছে যারা উঠে আসছে। আগামী ৪-৫ বছর ও নিজেকে ঠিকভাবে তৈরি করতে পারলে ব্যাটিং লাইনআপের ভিত্তি হতে পারে। তবে এখন ওর পারফরম্যান্সে ও নিজেই হতাশ। বড় ইনিংস খেলতে পারছে না।”
“তবে আমরা বিশ্বাস করি ও আবার নিজের সেরা ফর্মে ফিরতে পারবে, এ কারণেই এখনও ওকে দলে রাখা হচ্ছে। কবে ওকে বাদ দেওয়া হবে, সেটা একটা প্রশ্ন। অধিকাংশ ক্রিকেটারই ক্যারিয়ারে কোনো না কোনো সময় বাদ পড়ে। আমার মনে হয়, এই সপ্তাহে ও ইতিবাচকভাবে কাজ করেছে। প্রস্তুতিও ভালো ছিল। কিন্তু এখন আসল বিষয় হচ্ছে পারফরম্যান্স। আর সেখানেই ও পিছিয়ে আছে।”
এদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র তিন টেস্ট আগে ক্যারিয়ারসেরা ২৩২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন উসমান খাজা। কিন্তু লর্ডসে দুই ইনিংসেই কাগিসো রাবাদার বলে আউট হওয়ায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে তার পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে দুর্বলতা নিয়ে। তবুও মনে করা হচ্ছে, ডেভিড ওয়ার্নারের মতোই তাকে সুযোগ দেওয়া হবে নিজের অবস্থান প্রমাণ করার।
“সে কন্ট্রাক্টে আছে, গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তার সেরা সময়ের খেলা আমাদের ওপরে ভালো প্রভাব ফেলে। আমরাও সবসময় খেলোয়াড়দের সেরা অবস্থার দিকটায় নজর দেই,” বলেন কোচ ম্যাকডোনাল্ড।
“কিছু ম্যাচে খারাপ করলেই সবাই বলে ফেলে, সময় শেষ। আমি সেটা মনে করি না। ওর ট্রেনিং, প্রস্তুতি, চলাফেরা সবই ভালো। শিল্ড ক্রিকেটে গিয়ে গত মৌসুমে সেঞ্চুরি করেছিল। এখনো অনেক রান আছে ওর ভেতরে। সব নির্ভর করছে ওর নিজস্ব মানসিক প্রস্তুতির ওপর।”
তিনি আরও বলেন, “ডেভির ক্ষেত্রেও এমন হয়েছিল। ও যেভাবে শরীর চালাচ্ছিল, আমরা ইতিবাচক কিছু দেখেছি। জানতাম, রান আসবে। খাজার মধ্যেও আমরা সেই ব্যাপারটাই দেখছি।”
বর্তমানে দলে রিজার্ভ উইকেটকিপার হিসেবে থাকা জশ ইংলিস টেস্ট অভিষেকেই শতক করেছেন। তাকেও দলে আনতে পারে অস্ট্রেলিয়া, তবে স্পিনবান্ধব কন্ডিশনে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন ম্যাকডোনাল্ড। তিনি জানান, যদি কন্ডিশন খুব স্পিন-সহায়ক হয়, তাহলে ওপেনার হিসেবে ট্র্যাভিস হেডকেও বিবেচনায় আনা হতে পারে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অতটা স্পিন সহায়ক পিচের সম্ভাবনা কম।
“আমি চাইছি আমরা ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে নমনীয় থাকি। অনেকে এটাকে অস্থিরতা হিসেবে দেখছে, কিন্তু আমরা মনে করি, ঘরের মাঠ আর বিদেশের কন্ডিশন অনুযায়ী পরিকল্পনায় পরিবর্তন স্বাভাবিক।” ব্যাটিং নিয়ে এত সমালোচনার মাঝেও ম্যাকডোনাল্ড মনে করেন, শুধু টপ অর্ডার নয়, পুরো দলের পারফরম্যান্সেই ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, “আমি জানি আপনারা ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন করবেন, লাবুশেনের অবস্থান নিয়ে কথা হবে। কিন্তু আমরা পুরো দলের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করছি। তিন বিভাগেই (ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং) উন্নতি দরকার। তৃতীয় দিনে আমরা বোলিংয়ে খেলার গতি হারিয়ে ফেলেছিলাম।”
“আমরা নিখুঁত দল না, কখনোই ছিলাম না। কিন্তু আমরা জয়ের পথ খুঁজে পেয়েছিলাম বারবার। এবার সেটা পারিনি। প্রথম ইনিংসে ২০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়েছি। মানে একসঙ্গে ১২ উইকেট খুব কম রানে। আমরা এর চেয়ে ভালো খেলতে পারি।” শেষে তিনি বলেন, “এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে, এটা মানতেই হবে। আমাদের এখন শুধরে নেওয়ার জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে হবে।”