images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

ক্রিকেটে ক্যাচ ধরার নতুন নিয়ম, বাতিল হবে যেসব ক্যাচ

স্পোর্টস ডেস্ক

১৪ জুন ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম

ক্রিকেট খেলায় বাউন্ডারি লাইনে প্রায়ই দুর্দান্ত কিছু ক্যাচ ধরতে দেখা যায় ফিল্ডারদের। উড়ে দিয়ে কয়েকবারের প্রচেষ্টায় নেওয়া সেই সব ক্যাচ দেখতে দর্শকরাও মুখিয়ে থাকেন। তবে এসব ক্যাচ ধরার নিয়মে এবার পরিবর্তন আনছে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)।

বিগ ব্যাশ লিগে (বিবিএল) মাইকেল নেসার ও টম ব্যানটনের বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ ধরা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল ব্যাপক। এসব বিতর্ক এড়াতেই নতুন নিয়মনের প্রবর্তন করেছে এমসিসি। আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে এই নতুন নিয়ম চলতি মাসেই যোগ হবে, আর আইসিসির আইনের সংরক্ষক এমসিসি তা আইনের অংশ করবে ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো ফিল্ডার বাউন্ডারির বাইরে বাতাসে ভেসে থেকে বল স্পর্শ করেন, তাহলে তিনি আর একাধিকবার তা স্পর্শ করতে পারবেন না। বল ধরতে হলে তাঁকে একবার বল স্পর্শ করার পর পুরোপুরি আবার মাঠে ফিরে এসে ক্যাচটি শেষ করতে হবে।

অর্থাৎ, নেসারের বিখ্যাত ‘বানি হপ’ক্যাচ- যেখানে তিনি বলটি বাতাসে ভেসে একবার ছেড়ে আবার বাউন্ডারির বাইরে থেকেই সেটিকে আঙুলের ছোঁয়ায় মাঠের ভেতরে পাঠিয়েছিলেন—এখন থেকে আর বৈধ নয়।

২০২৩ সালের বিগ ব্যাশে ব্রিসবেন হিটের হয়ে খেলছিলেন নেসার। সিডনি সিক্সার্সের জর্ডান সিল্কের লং-অফে মারা এক বিশাল শট ধরতে ছুটে যান তিনি। প্রথমে দুই হাতে বল ধরেন, কিন্তু গতি আর শরীরের ঝোঁক তাঁকে বাউন্ডারির বাইরে নিয়ে যায়। তখন তিনি বাতাসে থাকাকালীন বল ছুঁড়ে দেন, বাইরে গিয়ে মাটিতে পা রাখেন, আবার বাতাসে লাফিয়ে বল মাঠের ভেতরে পাঠান, এরপর নিজে মাঠে ফিরে বলটি ধরেন। এই নাটকীয় ক্যাচে সিল্ক আউট হলেও নিয়মটা তখন থেকেই বিতর্কের জন্ম দেয়।

Michael-Neser-completes-his-bunny-hop-catch

নেসার জানান, তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ২০২০ সালের বিগ ব্যাশে একই দলের খেলোয়াড় ম্যাট রেনশরের এক প্রচেষ্টায়। তখন হোবার্ট হারিকেনসের ম্যাথু ওয়েডের একটি বিশাল শট রেনশর ধরেছিলেন বাউন্ডারির ভেতরে, কিন্তু ভারসাম্য হারিয়ে বাইরে পড়ে যান। তবে এর আগেই বলটি ওপরে তুলে দেন এবং পরে আবার বাতাসে লাফিয়ে তা মাঠে পাঠান, যেখান থেকে ব্যান্টন ক্যাচটি সম্পূর্ণ করেন।

এই ধরনের নাটকীয় ক্যাচগুলো চোখ ধাঁধানো হলেও অনেকেই তখন থেকেই এর নিয়মে পরিবর্তনের দাবি তুলেছিলেন। সর্বশেষ ২০১০ সালে এই নিয়ম হালনাগাদ হয়েছিল। নিয়ম ১৯.৫.২ অনুযায়ী, মাঠের বাইরে থেকে প্রথম বল ধরার আগে শেষবার যেদিকে পা ছিল, তা মাঠের ভেতরে থাকতে হবে। সেই অংশটি পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে এখন থেকে একই বলে বাউন্ডারির বাইরে একাধিকবার বল স্পর্শ করলেই তা ‘বাউন্ডারি’ গণ্য হবে।

এমসিসি ও আইসিসির যৌথ উদ্যোগে এই নতুন নিয়ম গঠিত হয়েছে। আইসিসির সদস্য বোর্ডগুলোকে পাঠানো এক নোটে এমসিসি বলেছে, বর্তমান নিয়মে কিছু দুর্দান্ত ফিল্ডিং দেখা গেলেও বেশ কিছু অস্বাভাবিক ক্যাচ দেখা গেছে, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে ঠিক ন্যায্য মনে হয়নি।

নেসারের ক্যাচ নিয়ে এমসিসি বলেছে, “তিনি পুরোপুরি বাউন্ডারির বাইরে থেকে ‘বানি হপ’ করে ক্যাচটি শেষ করেছেন। আইনের দৃষ্টিতে এটা বৈধ হলেও, মনে হয়েছে তিনি যেন একেবারে সীমা ছাড়িয়ে গেছেন।”

অনেকে ২০১০ সালের আগের নিয়মে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেও এমসিসি বলেছে, তা খুব কঠোর হয়ে যাবে। তখন নিয়ম ছিল, ফিল্ডার যদি প্রথম বল ধরার পর বাইরে যায়, তাহলে বল স্পর্শ করার আগে আবার মাঠে পা রাখতে হতো। এমসিসির মতে, এতে হারলিন দেওল বা অ্যালেক্স হেলসের মতো দুর্দান্ত কিছু ক্যাচ বাতিল হয়ে যেত, কারণ তাঁরা বল ধরার আগে আবার মাঠে পা রাখেননি, তবে ধরার সময় মাঠের ভেতরেই ছিলেন।

সমাধান হিসেবে, নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, ফিল্ডার যদি বাউন্ডারির বাইরে থেকে বাতাসে লাফিয়ে বল ছোঁয়, তাহলে তার পরে ক্যাচটি শেষ করতে হলে তাকে মাঠের ভেতরে পুরোপুরি নামতেই হবে। অর্থাৎ, একবারই বাইরে থেকে বল ছোঁয়ার সুযোগ থাকবে।

এই নিয়ম শুধু একক ফিল্ডারের ক্ষেত্রেই নয়, রিলে ক্যাচেও প্রযোজ্য হবে। মানে, ফিল্ডার যদি বাইরে থেকে বল স্পর্শ করে এবং পরে নিজে বা অন্য কেউ ধরেও ফেলেন, কিন্তু তিনি যদি পরে বাইরে নামেন বা পা দেন, তাহলে তা বাউন্ডারি হিসেবে ধরা হবে। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, একবারই সুযোগ থাকবে বল ছোঁয়ার, তারপর থেকে মাঠের ভেতরে থাকা বাধ্যতামূলক।

এই নতুন নিয়ম আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে অন্তর্ভুক্ত হবে নতুন ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সাইকেল থেকেই, যার প্রথম ম্যাচ ১৭ জুন গলেতে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যে। তবে আইনের দিক থেকে এটি কার্যকর হবে ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে, যখন আইনের পরবর্তী সংস্করণ চালু হবে।