images

স্পোর্টস / ক্রিকেট

‘বাভুমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে এটা’

স্পোর্টস ডেস্ক

১৪ জুন ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম

লর্ডসের মাউন্ড স্ট্যান্ডে শুক্রবারের সকালটা শুরুই হয়েছিল গান দিয়ে- "ওহ, টেম্বা বাভুমা!" দক্ষিণ আফ্রিকান সমর্থকদের কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল বিশ্বাস আর ভালোবাসা। তখনও বাভুমার ফিফটি হয়নি, তবুও গান থামেনি।

সেই বাভুমা এখন শতকের কাছে, সেঞ্চুরি করতে প্রয়োজন আর মাত্র ৩৫ রান। তবে শতক হোক বা না হোক, ইতোমধ্যেই ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংসটা খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটার। তাঁর সঙ্গে ১০২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অপরাজিত আছেন আইডেন মারক্রাম। এই জুটির ১৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপে প্রোটিয়ারা এখন জয় থেকে মাত্র ৬৯ রান দূরে, হাতে আছে ৮ উইকেট।

জয়টা সহজে আসেনি। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ২১২ রানে গুটিয়ে দিলেও প্রোটিয়ার ব্যাটিং ধসে ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। এরপর আবার দ্বিতীয় ইনিংসে অজিরা এক পর্যায়ে ৭৩/৭ উইকেট হারালেও অস্ট্রেলিয়া করে আরও ১৩৪ রান। তাতেই টার্গেট দাঁড়ায় ২৮২। লর্ডসে চতুর্থ ইনিংসে জিতে ওঠা দল মাত্র একবারই এর চেয়ে বেশি রান করেছে।

এদিকে ৬৫ রান করার পথে বাভুমা গতকাল হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান টি-ব্রেকের ঠিক আগে মিচেল স্টার্কের বলে মিডউইকেটে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে চোট। এরপর থেকে পুরো ইনিংসটাই খেলেছেন কখনো হেঁটে, কখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ে। উল্টো প্রান্তে থাকা মারক্রাম ছিলেন স্থির ও আত্মবিশ্বাসী। সতীর্থের শারীরিক অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েও রান তুলেছেন নিয়মিত।

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স দিনশেষে বলেন, “টি-ব্রেকের সময় আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, বাভুমা ব্যাটিং চালিয়ে যাবে কি না। কারণ, এতে তার শট খেলা এবং মারক্রামের ছন্দে প্রভাব পড়তে পারত। তবে দুজনই ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ- এই পার্টনারশিপ ভাঙা যাবে না।”

শুধু ইনজুরিই নয়, বাভুমার ক্যারিয়ারটাও লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। ছোট ছোট ভুলে বহুবারই বর্ণবৈষম্যের কটাক্ষ শুনতে হয়েছে তাঁকে। আর যখন ভালো করেন, তখন অনেকেই চুপ থাকেন। প্রিন্স বলেন, “এই ইনিংসটা অনেক কিছু বলে দেয়। যদিও এখনও কাজ বাকি। এটা হতে পারে তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।”

প্রিন্স প্রশংসা করেন হেড কোচ শুকরি কনরাডেরও, যিনি ২০২৩ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ করছেন। “শুকরি খেলোয়াড়দের বোঝাতে চান তারা কতটা ভালো। আর সেটা বোঝাতে পারলে, বাকিটা ছেড়ে দেন তাদের ওপর।” তিনি আরও বলেন, “মারক্রাম আর বাভুমা ড্রেসিংরুমে ঢোকার পরেই কোচ বলেন, প্রতিদিন যেমন করো, তেমন করো। রুটিন বদলাবে না। সামনে বিশাল কিছু থাকলেও মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।”

এই মুহূর্তে দলের মূল শক্তি কী? এক কথায়, ঐক্য। প্রিন্সের মতে, “দক্ষিণ আফ্রিকার আগে আরও প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের দল ছিল। কিন্তু এই দলটার মধ্যে বিশেষ কিছু আছে- ওরা একে অপরকে টেনে নিয়ে যায়।”

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো পুরুষ বা নারী দল এখনও পর্যন্ত কোনো সিনিয়র বিশ্ব শিরোপা জিততে পারেনি। একমাত্র ব্যতিক্রম ২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। আর ১৯৯৮ সালের আইসিসি নকআউট ট্রফি ছিল একমাত্র সিনিয়র ট্রফি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেমিফাইনাল আর ফাইনালে হারে পরিচিত হয়েছে ‘চোকার’ তকমায়। তবে এই দলটা যেন সেই দুঃস্বপ্ন ভাঙার একদম কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে।

তাদের যাত্রাটা এতটা সহজ ছিল না। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৩-২৫ সাইকেলে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে মাত্র ১২টি ম্যাচ, ভারত, ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দলগুলো নিজেদের মধ্যে বেশি সিরিজ খেলেছে, যেখানে আর্থিক লাভ বেশি। এ নিয়েও কথা বলেছেন প্রিন্স, “বিশ্বের বড় দলগুলোর সঙ্গে আমরা আরও খেলতে চাই। বিশেষ করে যেখানে বড় অর্থ থাকে, আমরাও উপকৃত হতে পারি।”

তবে সেসব পরে। এখন শুধু ৬৯ রান দরকার। ইতিহাস এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে ডাকছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।